যুদ্ধ শুরু যে সৈনিক সঙ্গে থাকবে না, তাকে দলেরও প্রয়োজন নেই

সোমবার প্রায় পঁচিশ হাজারেরও বেশি দলীয় নেতা-নেত্রীদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

Must read

প্রতিবেদন : মনে রাখবেন, ভোট একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে দলের যে সৈনিক থাকবে না সে পিছিয়ে পড়বে। আপনি এই যুদ্ধে যদি অংশ নিতে না পারেন, মাঠে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে না পারেন তবে দলও আপনাকে দেখবে না। স্পষ্ট হুঁশিয়ারি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সোমবার প্রায় পঁচিশ হাজারেরও বেশি দলীয় নেতা-নেত্রীদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই ভার্চুয়াল বৈঠকে এসআইআর-কে কেন্দ্র করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য ও নির্দেশের মধ্যে দিয়ে অভিষেক স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ঘোষণার জন্য অপেক্ষা নয়, আসলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই গোটা দলকে সেভাবেই এখন থেকে মাঠে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

শৈথিল্য বরদাস্ত নয় : এসআইআর পর্বে দলের তরফে কলকাতা থেকে জেলায় যাঁদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। এই কাজে কোনওরকম শৈথিল্য বরদাস্ত করবে না দল। অভিষেক বলেন, এসআইআর-এর মাধ্যমে বিজেপি ভোট চুরি করবে। ফলে আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে ফর্ম ফিলআপ-অ্যাপে তথ্য তোলার কাজ নিয়ে পরিষ্কার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। বহু জায়গায় বিএলএ-২ এর কাজ নিয়ে সতর্ক করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু : অভিষেক বলেন, অনেকেই মনে করছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে কমিশন যখন নির্বাচন ঘোষণা করবে এ-রাজ্যে, তারপর থেকে আপনারা মাঠে নামবেন! সেটা ভুলে যান। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, তিন মাসের নয়, নির্বাচন এখন ৬ মাসের। কারণ নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে এখন থেকেই আপনাদের সেভাবে মাঠে নেমে কাজ করতে হবে। কোনওরকম শিথিলতা যেন না আসে।
১০০% ফর্ম ফিলআপ : এর আগের ভার্চুয়াল বৈঠকেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় সতীর্থদের বলেছিলেন, যাই ঘটুক না কেন, একশো শতাংশ এনুমারেশন ফর্ম ফিলআপ করতে হবে। সোমবার ফের একই কথা বললেন। কারণ রাজ্যের বেশ কিছু বিধানভায় এই ফর্ম ফিলআপের হার একেবারেই ভাল নয়। জেলার তালিকা ধরে বলে দেন। কোথায় কত হার। এই ঘাটতি পূরণ করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, দিদির দূত অ্যাপেও তথ্য তোলার ক্ষেত্রে খামতি থেকে যাচ্ছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

আরও পড়ুন-ঘরছাড়াদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ নিরাপত্তা বাহিনীর

কমিশনকে তোপ : বাংলায় এই প্রতিকূল পরিস্থিতি। বিপদের সময় আমরা আমাদের সর্বস্ব নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াব। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কমিশন কোনওরকম আলোচনা না করে অপরিকল্পিতভাবে যে এসআইআর ঘোষণা করেছে, এক মাস কাটতে না কাটতেই প্রায় ৪৫টির বেশি ঘটনা ঘটে গেছে। অনেকে মারা গিয়েছেন। আত্মহত্যা করেছেন। অনেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, চিকিৎসা চলছে। আমরা প্রায় ৩৫ জন রাজ্যবাসীকে একমাসের কম সময়ে হারিয়েছি, কমিশনের দম্ভ-ঔদ্ধত্য এবং অহংকারের কারণে। মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার একটা নির্লজ্জ প্রয়াস এটা।
ভোট রক্ষা শিবির : আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই শিবির। যে উৎসাহ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল, চার-পাঁচ দিন পরে কোথাও একটা শৈথিল্য তৈরি হয়েছে। ৪-৫ দিন যে উন্মাদনা ও তৎপরতা ছিল তার কোথাও একটা ঘাটতি লক্ষ করা গেছে। যে তৎপরতা নিয়ে বুথের কর্মীরা, অঞ্চলের কর্মীরা কাজ করেন, তৃণমূলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অনুরোধ করব এই একই উৎসাহ নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আগামী ১৫০ দিনের তৃণমূলের কোনও কর্মীর যেন উৎসাহে এতটুকু ভাটা না পড়ে।
মাইকিং করুন : প্রত্যেকটি বুথে আগামী ৪/৫ দিন মাইকিং করুন। যদি কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ যায় তবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের ভোট রক্ষা শিবির থাকবে, আমরা তাঁদের পাশে থাকব।
বিধায়কদের কাজ : অভিষেক বলেন, সব বিধায়ককে বলব, একটা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ৩০০টা করে বুথ আছে। আগামী ১০ দিনে প্রতিদিন ১৫টা করে বিএলএ ২কে ফোন করে উৎসাহ দেবেন। জেলাতে আপনাদের কাছে তথ্য থাকবে। বিএলএ টু যতটা সক্রিয় থাকার কথা ততটা সক্রিয় নেই। তাঁদের বাড়ি গিয়ে কথা বলে সক্রিয় করতে হবে। ভিডিও কল করে উৎসাহ দেবেন। তাঁরা যখন ফিল্ডে যাবেন তাঁরা ঠিকমতো খাবার পেয়েছেন কি না খোঁজ নেবেন। কোনও সমস্যা আছে কি না খোঁজ নেবেন। সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া, গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়া এগুলো জানার চেষ্টা করবেন।
এমপিদের কাজ : এমপিদের (রাজ্যসভা) ১৩ জনকে অনুরোধ করে বলেন, যাঁরা পঞ্চায়েত স্তরে ইলেক্টোরাল রোল সুপারভাইজারের কাজ করছেন এবং শহর এলাকায় ওয়ার্ডে যাঁরা সুপারভাইজারের কাজ করছেন, সংখ্যাটা প্রায় ৬৩০০। ১৩ জন রাজ্যসভার সাংসদ প্রতিদিন এঁদের ফোন করবেন, আমি তালিকা তৈরি করে দেব। লোকসভার সাংসদদেরও আলাদা দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।
নেত্রীকে রিপোর্ট : প্রত্যেক ১৫ দিন অন্তর একটা রিপোর্ট দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমরা পাঠাচ্ছি। কোন বিধায়ক, সাংসদ, জেলা সভাপতি— কে কতটা সহযোগিতা করেছেন, ফিল্ডে থাকছেন সেগুলো আমরা রিপোর্ট দিচ্ছি। তিনি বিষয়টি নজর রাখছেন। ৫ তারিখ আমার কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন, আমি একদিন সময় নিয়ে ৬ তারিখ রিপোর্ট পাঠাব।
বৈঠক শেষ করার আগে অভিষেক বলেন, আমাদের আসল কাজ মূলত ৪ তারিখের পরে। যাঁদের ডকুমেন্টেশনের সমস্যা রয়েছে সেগুলোকে আবেদন করবেন। দলগতভাবে আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াব। তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ স্তরে কর্মীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন এই মানুষগুলোর কাছে। যাঁদের ডকুমেন্টেশন জমা দেওয়া হয়নি, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সঙ্গে নিজের ডকুমেন্টেশন জমা দিতে হবে এবং একশো শতাংশ ডকুমেন্টেশন জমা দিতে হবে। ১০০% ফর্ম সাবমিট করতেই হবে।

Latest article