প্রতিবেদন : রানাঘাট থেকে এসেছি কলকাতায়। সে প্রায় তিরিশ বছর আগেকার কথা। প্রায় তিন দশক এখানে আছি। এই কাল পর্বে বদলেছে অনেক কিছু। শেষ দশ বছরে এই রোগক্লিষ্ট শহরটার সেবা শুশ্রূষা অনেকটা হয়েছে বলেই এখন শহরটাকে সুন্দর লাগে। দক্ষ চিকিৎসকের মতো এই শহরের রোগ নির্ণয় করে তাঁর আরোগ্যের আয়োজন করেছে পুর প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ফিরহাদ হাকিমের মহানাগরিকত্বে এই কাজ হয়েছে, হচ্ছে। এই শহরে এখন গগনচুম্বী ইমারতের সঙ্গে নানা জায়গায় সবুজের সমাহার। শুধু চোখের আরাম, শহরের সৌন্দর্যায়নেই সীমায়িত নয় এই কর্মধারা।রাস্তাঘাটে চলাচলও অনেক সহজ হয়েছে, গতিময়তার সাথে স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। এটাও কিন্তু এই পুর প্রশাসনের কৃতিত্ব। তবে হ্যাঁ। একটা ব্যাধির এখনও নিরাময় হয়নি। এখনও বর্ষায় জল জমে কলকাতার রাস্তায়। সর্বত্র নয়। কোনও কোনও জায়গায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ফিরহাদ হাকিমের মহানাগরিকত্বে এই অসুখেরও শুশ্রূষা চলেছে এবং আমি নিশ্চিত তা সেরেও যাবে। কলকাতা অচিরেই ব্যাধিমুক্ত হবে। একথাটা যে এত জোর দিয়ে বলে পারছি তার কারণ আমি পুর প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রী মহানাগরিকদের তন্নিষ্ঠ হয়ে পরিষেবা প্রদানে ব্রতী হওয়ার বিষয়টা খুব কাছ থেকে লক্ষ করেছি। একটা উদাহরণ দিই।
কলকাতার মহানাগরিক তখন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। রবীন্দ্র সদনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সুব্রতবাবুকে দেখেছিলাম। বিভিন্ন কড়া কড়া প্রশ্নের মুখোমুখি মহানাগরিক। কিন্তু উপস্থিত দর্শকবৃন্দকে উত্তর দিয়েছিলেন নরম গলায়। অবাক হয়েছিলাম তাঁর তথ্যনির্ভর বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে সুন্দরভাবে বিচার বিশ্লেষণ দেখে। তাতে না ছিল কোনও উন্নসিকতা, না ছিল কোনও দাম্ভিকতা। বিস্মিত হয়েছিলাম এটা দেখে যে সুব্রত মুখোপাধ্যায় এই মহানগরীর ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের যত খোঁজখবর রাখেন, ভুগর্ভস্থ কলকাতার হালহকিকত সম্পর্কে ততটাই ওয়াকিবহাল। কলকাতার উপরিভাগের অর্থাৎ পথঘাট, ট্রামলাইন, উদ্যান, গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা, আবর্জনার স্তূপ, এসব সম্পর্কে যেমন তিনি সম্যকভাবে অবহিত, তেমনই তিনি খবার রাখেন মাটির নীচে কোথা দিয়ে জলনিকাশী ব্যবস্থা গিয়েছে, কোথায় কীভাবে গিয়েছে বিদ্যুতের তার, বর্জ্যের নিকাশী লাইন কথা দিয়ে গিয়েছে সেসবও তাঁর নখদর্পণে। কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আর মানুষের প্রতি দরদ না থাকলে এভাবে এসব বিষয়ে জানা যায় না। আসলে সেদিন সুব্রতবাবুর যে দক্ষতা দেখে অবাক হয়েছিলাম সেটা আসলে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজস্ব কর্মপ্রণালীর অংশ। জননেত্রী এভাবেই সবকিছুর খুঁটিনাটি মনে রাখেন, আর পাখির চোখ করেন মানুষের উন্নয়নকে। রাজ্যে যখন মা-মাটি- মানুষের সরকার এল, আমরা দেখলাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একের পর এক হাসপাতাল পরিদর্শন শুরু করলেন। খাদ্য দপ্তরে গিয়ে দেখলেন পাহাড় প্রমান ফাইলের স্তুপ। সেখানকার সুবিধা অসুবিধা দেখলেন। কাজ শুরু হল। আর আজ সেই নিরীক্ষণের ফসল হিসেবে আমরা পাচ্ছি দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী ইত্যাদি নানা জন কল্যাণকর প্রকল্প। আজ তিনি জনমুখী কর্মকাণ্ডের রুপায়ণের বিষয়ে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। থেমে থাকা তাঁর স্বভাব নয়। সুতরাং তাঁর দলের পুরপ্রতিনিধি থেকে মহানাগরিক, সবাই এভাবেই শহরের নাগরিকদের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে প্রাণপণ চেষ্টা করবেন, সে কথা বলাই বাহুল্য। মনে রাখতে হবে, রাতারাতি নিরাময় সম্ভব নয়। যে কাজ বিগত এক দশক ধরে চলছে, সেই কাজের ধারা অক্ষুণ্ণ থাকলেই আগামীতে পূর্ণ আরোগ্য অর্জন সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন : নেত্রী, অভিষেকের দিকে তাকিয়ে গোয়া
গত দশ বছরে পুরসভার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি তাৎপর্যপূর্ণ কাজ হল, পুরশ্রী পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ। ফিরহাদ হাকিমের ঐকান্তিক চেষ্টায় এবং রত্না শূরের সহযোগিতায় গত জানুয়ারি মাসে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সময় এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এই কাজে সত্যজিৎ পুত্র সন্দীপ রায়কে প্রধান উপদেষ্টাপদ অলংকৃত করতে মহানাগরিক অনুরোধ করেছিলেন। তিনি সানন্দে রাজি হন। সক্রিয়ভাবে বইটি তৈরিতে সাহায্য করেন। এই বইটি রূপায়নে এগিয়ে আসেন শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন থেকে শুরু করে শ্যাম বেনেগল-সহ বহু কৃতী মানুষ। প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁরা এই প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বইটি মুদ্রণের সময় কিছু সমস্যা দেখা দেয়। মহানাগরিকের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় তা কেটেও যায়। বইটি এত উন্নত গুণমানের সমৃদ্ধ নির্মাণ হয়েছে যে সেটির তিন তিনটি সংস্করণ ইতিমধ্যেই নিঃশেষিত। পুরসভা এবং মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমের এই প্ৰচেষ্টা এবং সাধারণ পাঠকের কাছে এই গ্রন্থের সমাদর এসব কিছু অমল হোমের ব্যবস্থাপনায় কলকাতা পুরসভা কর্তৃক প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথ স্মরণে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের স্মৃতি উসকে দিচ্ছে। সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শেষযাত্রা থেকে যথাযথ মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সর্বক্ষণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি এবং পরবর্তীতে তাঁর বাসভবন ম্যানডেভিলা গার্ডেন সংলগ্ন রাস্তার ওই প্রয়াত সাহিত্যিকের নামে নামকরণ, পুরসভার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এতকিছু বলার উদ্দেশ্য একটাই।
তৃণমূল কংগ্রেসের পরিচালনাধীন কলকাতা পুরসভা পুর পরিষেবা প্রদান, নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য সুনিশ্চিতকরণ, এসবের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ সংস্কৃতির পরিমণ্ডলেও আপন দায়িত্ব পালনে তৎপর। এই কথাটা সবিস্তারে ও সগৌরবে সকলকে জানান।
৩৪ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিল পূর্বতন সরকার। সমাজের সর্বস্তরে নিজেদের ক্ষমতা কায়েম করার নেশায় বুঁদ হয়ে দম্ভ আর আত্মতুষ্টির ফাঁদে পড়ে স্তাবকদের আনুগত্যকে স্থিক ভেবে নিয়ে ভুয়ো ভালোতে গা ভাসিয়েছিলেন। আর সত্যিকারের বন্ধু যারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে ভুল দেখিয়েছিল, তাদের ষড়যন্ত্রকারী ভেবে ঐতিহাসিক ভুল করেছিলেন। তাতে যা হওয়ার তাই হয়েছিল। জনগণ তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের পুর প্রশাসনের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। তাঁদের সর্বাত্মক প্ৰচেষ্টার সুফলের অপর নাম অগ্রসরমানতা। যা চলছে, চলবে, শত অসুবিধা সত্ত্বেও সেটা বন্ধ হয়নি। কেউ আত্মতুষ্টিতে গা ভাসাননি। সেটাই আশার কথা।