ফের একবার অশান্ত নন্দীগ্রাম (Nandigram)। খুন হলেন মহাদেব শ্রীসাই (বিল্লা) নামের এক তৃণমূল কর্মী। এর পরেই বিক্ষোভ দেখতে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। অভিযোগের তীর বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগেই নন্দীগ্রামে শ্রীকান্ত মণ্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মীকে বাড়িতে ঢুকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন-৬৫ ঘণ্টা পরেও কুয়োয় আটকে শিশু, উদ্ধারে এবার নিষিদ্ধ র্যাট-হোল মাইনিং
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বৃন্দাবনচক ২৫৩ নম্বর বুথের সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বিল্লাই। সাতেঙ্গা বাড়ি এলাকায় তাঁর একটি ছোট কাঠের দোকান আছে। বুধবার রাতে দুষ্কৃতীরা তার দোকানের সামনেই তাকে পিটিয়ে খুন করে। খবর পেয়ে নন্দীগ্রাম থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।
আরও পড়ুন-‘জিনাত’-এর চিন্তায় ঘুম ছুটেছে বন কর্মীদের! নয়া ফাঁদ কি কাজে আসবে?
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই তমলুক কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচার ব্যাঙ্কের জেলা জুড়ে নির্বাচনে তৃণমূলের ব্যাপক জয় হয়। নন্দীগ্রামে সমবায় নির্বাচনে জয়ের পরেই তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীকে বাড়িতে ঢুকে খুনের অভিযোগ ওঠে। জানা গিয়েছে নন্দীগ্রামের কালীচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৭ নম্বর জলপাই গ্রামে এক তৃণমূল কর্মীর পেটে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। হামলায় আহত হয়েছিলেন শ্রীকান্ত মণ্ডল এবং শ্রীমন্ত । দু’জনকেই বেশ আশঙ্কাজনক অবস্থায় নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাপ্পাদিত্য গর্গ, শেখ সুফিয়ান, শামসুল ইসলামের নেতৃত্বে চলে অবস্থান-বিক্ষোভ। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকে ঘিরে চলে তুমুল বিক্ষোভ। তৃণমূলের দাবি, মৃত ওই তৃণমূলের কর্মীকে ১৫ দিন আগেও বিজেপির দুষ্কৃতীরা মারধর করেছিল। বারবার তাঁকে বিজেপিতে যোগদানের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। ওই কর্মী নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে প্রথম সারিতে থেকে লড়তেন। তাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ধরনের খুন করা হয়েছে। মৃতদেহ উদ্ধারের সময় তাঁর হাতে, পায়ে এবং কোমরে ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে। ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ জানিয়েছেন, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ভোলানাথ কামিলা, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সাহেব দাস, বিজেপির মণ্ডল সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মাইতি ও বিজেপি নেতা অনুপ মাইতিকে দিয়ে শুভেন্দু অধিকারী এই খুন চক্রান্ত করে করেছে। শুভেন্দু নির্বাচনে হারের প্রতিশোধ নিতে এইভাবে খুন করে যাচ্ছে।
এদিন, সকাল থেকে দফায় দফায় অবস্থান-বিক্ষোভের জেরে মৃতদেহ উদ্ধার করতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। কয়েক ঘণ্টা দেহ আটকে রাখার পর অবশেষে পুলিশের আশ্বাসে মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এদিন বিকেল পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে কী কারণে এই ধরনের খুন এবং কীভাবে ওই ঘটনা ঘটল তার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন নন্দীগ্রাম থানার আইসি অনুপম মণ্ডল। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দায়ী করেছেন নন্দীগ্রাম থানার পুলিশের একাংশকে। তিনি বলেন, নন্দীগ্রাম থানাকে আরও সক্রিয় ভাবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নন্দীগ্রাম থানার পুলিশের একাংশের বুকের মধ্যে এখনও সিপিএমের অতৃপ্ত আত্মা ঘুরছে। বিজেপিকে এরা মদত করছে। অবিলম্বে খুনের কিনারা করে দোষীদের ধরতে হবে। পরপর হামলা কীভাবে হতে পারে, সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, নন্দীগ্রাম থানায় পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের মধ্যে অন্তর্ঘাত চলছে।
আরও পড়ুন-বাংলার একান্ত উদ্যোগে বাংলার মানুষের বাড়ি
গোটা বিষয়ে বিজেপির দিকে আঙুল তুলে তমলুক সংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘বিজেপি হল খুনিদের দল। একের পর এক সমবায় নির্বাচনে হারের প্রতিশোধ নিতে এই ধরনের খুন করে চলেছে শুভেন্দু। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। নয়তো আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।