প্রতিবেদন : লোকসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাজেট-বক্তৃতা কার্যত ইতিহাস হয়ে রইল। তাঁর ৫৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের বক্তৃতা কাঁপিয়ে দিল নড়বড়ে এনডিএ সরকারকেও। একলহমায় শুনলে মনে হবে বাঘের গর্জন। কেন্দ্রের জনবিরোধী বাজেটের সমালোচনা করলেন একেবারে ইস্যু ধরে ধরে। দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করা থেকে প্রতিশ্রুতিভঙ্গ ও বাংলার প্রতি বঞ্চনার কথা তুলে ধরলেন তাঁর প্রতিটি লাইনে। বিজেপি সাংসদরা বারবার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে তাঁকে বাধা দেওয়ার। এমনকী অধ্যক্ষের বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা উড়িয়ে দিয়ে অসামান্য বডি ল্যাঙ্গুয়েজে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু শুধুমাত্র এই বিশেষণে এই আগুন ঝরানো বক্তৃতাকে বিশ্লেষণ করলে ভুল হবে। আসলে বুধবার সংসদে অভিষেকের বক্তৃতা শুনে মনে হচ্ছিল সংসদে বিরোধী পক্ষের নেতা পরপর যুক্তি তুলে ধরে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন নড়বড়ে মোদি সরকারের অপদার্থতা। একইসঙ্গে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচারকে খোলাহাটে বেআব্রু করে দিলেন। এককথায় এই বাজেটকে বললেন দিশাহীন। বাজেটের ইংরেজি অক্ষরের প্রতিটি শব্দ ধরে ব্যাখ্যা করলেন আসলে বাজেটকে মোদি সরকার কোন ছেলেখেলার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। কুর্সি বাঁচানোর তাগিদে যেভাবে দুই শরিককে নির্লজ্জভাবে তোষামোদ করা হয়েছে বাজেটে তারও কড়া সমালোচনা করেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, এই বাজেট মানে ‘বি’ ফর বিট্রেয়াল, ‘ইউ’ ফর আনএমপ্লয়মেন্ট, ‘ডি’ ফর ডিপ্রাইভড, ‘ই’ ফর এক্সেনট্রিক, ‘টি’ ফর ট্র্যাজেডি।
আরও পড়ুন: ৪ ডিসেম্বর শুরু চলচ্চিত্র উৎসব : মুখ্যমন্ত্রী
২০১৪ সালে সরকার গঠনের আগে বিজেপি আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে তাঁরা কী করেছে? দেশের নাগরিকদের শুধুই ঠকিয়েছে। গৃহবধূদের ঠকিয়েছে, দিনমজুরদের ঠকিয়েছে, কৃষকদের ঠকিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছুঁয়েছে। বাড়িতে রান্না করা নিরামিষ একথালা খাবারের দাম প্রতিবছর ৮ শতাংশ করে বেড়েছে। রান্নার গ্যাসের দাম ১১০০ টাকা ছাড়িয়েছে, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪৩ শতাংশ, আলুর দাম বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। বাংলার বিরোধী দলনেতা বলেছেন, যারা তাদের সঙ্গে থাকবে বিজেপি তাদের সঙ্গে থাকবে। মঙ্গলবারের বাজেট সেই কথাকেই সত্যি প্রমাণ করেছে। অর্থমন্ত্রী নতুন ৩ কোটি বাড়ি বানানোর কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলার ১১ লক্ষ আবাসের বাড়ির কী হবে সে কথার কোনও উল্লেখ নেই। বাংলায় ২০২১-এর পর থেকে বিজেপি হেরেই চলেছে। তাই বাংলাকে কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে বললেও তা করতে পারেনি বিজেপি সরকার। এদিনও সংসদে দাঁড়িয়ে ফের বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করেন অভিষেক। বলেন, শ্বেতপত্র প্রকাশ করে কত টাকা দিয়েছে তা দেখাক কেন্দ্র। বাংলায় বন্যা থেকে গরিব মানুষের ১০০ দিনের কাজের টাকার কথা তুলে ধুয়ে দিয়েছেন বিজেপিকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই যে সব টাকা মিটিয়েছে সে-কথাও বলেছেন।
উত্তরপ্রদেশের ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা বলে বিজেপি। কিন্তু সেখানে বারবার সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হয়। উসকানিমূলক মন্তব্য করে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চলে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো ডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। বিজেপি এটাকে সমর্থন করে না। গোটা দেশের এটা জানা উচিত, লোকসভা হোক কিংবা রাজ্যসভা, এমনকী কোনও রাজ্যের বিধানসভাতেও বিজেপির কাছে একজনও মুসলিম সাংসদ কিংবা বিধায়ক নেই। পতাকার রঙে বৈচিত্র্য থাকলেই হয় না, সংসদে কতজন ভিন্ন ধর্মের সদস্য আছে সেটাই মূল বৈচিত্র্য।
২০২৪ সালের নির্বাচনে দেশের মানুষ মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। এখন কেন্দ্রে একটা নড়বড়ে জোট সরকার তৈরি রয়েছে। গত ২টি মোদি সরকারের তুলনায় এই সরকারে সবকিছুই অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থমন্ত্রী থেকে শুধু করে বিদেশমন্ত্রী পর্যন্ত সবাই একই পদে রয়েছে। শুধু যেটা পাল্টেছে, সেটা হল সংসদে বাজেট অধিবেশনে হাততালি দেওয়ার লোকের সংখ্যা। অভিষেকের কথায়, কুর্সি কি পেটি বাঁধ লিজিয়ে, মৌসম বিগড় নে ওয়ালে হ্যায়।