প্রতিবেদন : কোচবিহারে তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ বর্মা বসুনিয়ার জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। এখানে বাংলা বিরোধীদের-প্রতারকদের-জুমলাবাজদের কোনও জায়গা নেই। ওদের জমানত জব্দ করতে হবে। শুক্রবার সিতাই রোড-শো শেষে বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এদিন দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে শেওড়াতলা থেকে সিতাই বাজার পর্যন্ত রোড-শো করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সঙ্গে ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ৷ রোড-শো আক্ষরিক অর্থেই ছিল জনসমুদ্র। এই রোড-শোর আগে এদিন উত্তরের রাজবংশী সমাজের প্রতিনিধি নেতাদের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠক সারেন অভিষেক। তাঁদের অভাব-অভিযোগ বঞ্চনার কথা শোনেন। তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মা-মাটি-মানুষের সরকার তাঁদের পাশে ছিল আছে থাকবে।
এদিন রোড-শোর দুরন্ত ভিড় দেখে অভিষেক বলেন, কোচবিহারের মানুষের মুড বোঝা যাচ্ছে। তাঁরা আর বাংলা-বিরোধীদের চাইছেন না। তাঁর সংযোজন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদধন্য প্রার্থী জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। বিজেপি আচ্ছে দিনের কথা বলেছিল। আপনারা একবুক আশা নিয়ে ভোট দিয়েছিলেন। দশ বছর আগে একটা ডিমের দাম তিন টাকা ছিল এখন সাত টাকা। যিনি দাঁড়িয়েছেন ভোটে কোচবিহারের সার্বিক উন্নয়ন না করে অমিত শাহের পা ধরে বলল একশো দিন আবাসের টাকা বন্ধ করে দাও। যারা বেইমানি করল তাদের জবাব দেবেন কিনা? অভিষেক বলেন, ২০২১ সালেও বিজেপি জিতেছিল। পাঁচ বছর তো দেখলেন নমুনা। জগদীশ বসুনিয়াকে জেতানো মানে সরাসরি ভাবে প্রতারকদের গালে কষিয়ে থাপ্পড় মারা৷ একাধিক মামলায় যাকে জামিন নিতে হয়েছিল তাকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। অন্যদিকে, শিক্ষিত মার্জিত তৃণমূল প্রার্থী৷ এরা আবার ভুল বুঝিয়ে জিতলে কী করে বাংলার টাকা তুলে অন্য রাজ্যে দেওয়া যায় সে-কাজ করবে৷ কানে শুনে নয় চোখে দেখে ভোট দিন।
কেবল বিএসএফের চোখরাঙানি আর গুলি। রাজবংশী যুবক প্রেমকুমার বর্মনকে গুলি করেছিল নিশীথ প্রামাণিকের অধীনে থাকা বিএসএফ। নৃশংস নির্মমভাবে গুলি করেছিল। তার শরীর থেকে ১৮০টা পেরেকের টুকরো বেরিয়েছে। একবারও প্রতিবাদ করেনি। পাঁচ বছরে উন্নয়নের জন্য দশ পয়সা আনেনি। কিন্তু আচ্ছে দিন এসেছে নিশীথ প্রামাণিকের। ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকায় দিল্লিতে যেখানে থাকে সেখানে অট্টালিকা বানিয়েছে৷ আপনাদের ভোটে এমনভাবে জবাব দিন যাতে সেই প্যালেসের মার্বেল খসে পড়ে। এটা প্রতিবাদের ভোট৷ প্রতিরোধের ভোট। এই লড়াই এদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার লড়াই৷
আরও পড়ুন- সিডনিতে যুবকের হামলা, ছুরির কোপ-গুলিবৃষ্টিতে মৃত একাধিক!
শীতলকুচিতে ১০ এপ্রিল ২০২১ সালে নিশীথ প্রামাণিকের অধীনস্ত সিআইএসএফ গুলি করে পাঁচজনকে হত্যা করে। তাদের হাতে বোম-বন্দুক-লাঠি ছিল না। তারা ভোট দিতে গিয়েছিল। সীমান্তে সকাল-বিকেল বিএসএফের চোখ রাঙানো চলছে। তৃণমূলকে জেতালে কারও সাহস নেই চোখ রাঙায়৷ আপনারা ভোট না দিলে সবার মূল্য শূন্য। আধার প্যান কার্ড লিঙ্কের নামে মোদি সরকার এক হাজার টাকা নিচ্ছে৷ কার পাশে থাকবেন দূরের মোদি না কাছের দিদির? নিশীথ প্রামাণিককে দেখেছেন? যাকে চোখেই দেখেননি তার গ্যারান্টি নেবেন? ২০২১-এর পরে প্রধানমন্ত্রী আসেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসেননি।
এরপরই অভিষেক (Abhishek Banerjee) বলেন, এই কোচবিহারের দিনহাটা থেকে নবজোয়ারের যাত্রা করেছি। আমরা ধর্ম বাড়িতে করব। ভোট দেওয়ার সময় কাজ দেখে ভোট দেব। প্রধানমন্ত্রী বলছেন যারা মাছ খান তাঁরা হিন্দু-বিরোধী। হাত তুলে বলুন কারা মাছ খান? আপনাদের দেশ-বিরোধী বলছে৷ নিশীথ জিতলে মাছ খাওয়া বন্ধ করবে। আমি সকাল-বিকাল মাছ খাই৷ প্রধানমন্ত্রী আমাদের মনের কথা বোঝেন না৷ অমিত শাহ বালুরঘাটকে বেলুরঘাট বলছে৷ এজন্য বাংলা-বিরোধী বলছি। ঝড়ে উত্তরের জেলার বাড়িগুলি তৈরির টাকার অনুমতি দিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন৷ রাজ্য সরকার টাকা দেবে। ক্ষমতা থাকলে জেলে ঢোকান৷ মানুষকে পরিষেবা দেব আমরা৷ ৩১ ডিসেম্বর, এ-বছরের মধ্যে বাড়ির টাকা পাবেন তৃণমূলকে জেতালে এটাই তৃণমূলের গ্যারান্টি। কেন্দ্র সরকার কোথায় কর্মসংস্থান করেছে৷ মোদি সরকার কথা রাখেনি। তৃণমূল কথা রেখেছে। নিশীথ প্রামাণিকের কাছে হিসেব চান, বিজেপির কাছে রিপোর্ট কার্ড চান। বিজেপি কর্মীদের বলবেন কেউ ভোট দিলে বুঝতে হবে যারা বঞ্চিত করেছিল পথে বসিয়েছিল তাদের রাজনীতিকে সমর্থন করছে৷ পদ্মফুল যেন চোখে সর্ষেফুল দেখে। সবাই তৃণমূলে ভোট দিলে কে ক’টা গাড়ি নিয়ে বের হয় দেখা যাবে৷ কোচবিহারের উন্নয়ন আমার থেকে বুঝে নেবেন৷ কোনও ভদ্রলোক বিজেপি করে না, চিটিংবাজ, মাতাল, পাতাখোর সব বিজেপি করে৷ আবার কোচবিহারে বিজয় মিছিল করতে আসব৷