এলাকায় প্রায় তিন-চার বছর দেখা যায়নি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে। তাতলা পঞ্চায়েত প্রধান পার্থপ্রতিম দে-কে রানাঘাটের সভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) সোমবারই ইস্তফা দিতে নির্দেশ দিলেন। শনিবার, রানাঘাটের সভা থেকে একইসঙ্গে স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, “কে পঞ্চায়েত প্রধান হবেন আমাকে জানান সরাসরি”। পার্থপ্রতিম দে-কে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে কাজ না করা বাকি পঞ্চায়েত প্রধানদেরও বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
শনিবার, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সভা ঘিরে তুমুল উন্মাদনা ছিল দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। কানায় কানায় পূর্ণ মাঠে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথম থেকেই দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি কাটাছেড়া করেন অভিষেক। বলেন, আগে নিজেদের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করব। বাকি যারা বাংলাকে বঞ্চনা করছে, তাদের রাজনীতির ময়দানে বুঝে নেব। গত বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর ছাড়া নদিয়ায় তেমন ভালো ফল করতে পারেনি তৃণমূল। এদিন অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, কেন রানাঘাটের মানুষ তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন? উত্তর নিজেই দেন তিনি। বলেন, দলেরই কিছু নেতৃত্বের আচরণের জন্য এটা হয়েছে। অভিষেকের কথায়, “কোনও ভুল ত্রুটি হলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের তরফ থেকে ক্ষমা চাইছি। ঘরের ছেলেকে শাসন করুন কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। পরিযায়ী পাখিদের ভোটের পরে আর দেখতে পাবেন না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সব সময় পাশে পাবেন। বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকে কিছু মানুষের জন্য নদিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ভয় পাবেন না নজরদারির দায়িত্বে আমি রয়েছি।“
আরও পড়ুন: ভুয়ো অভিযোগ করে বিপাকে মামলাকারী, হল জরিমানা
ঠিকাদারি করলে তৃণমূল করা যাবে না- ফের রানাঘাট থেকে বার্তা দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। স্পষ্ট জানান, দলে থেকে কোনও অনৈতিক কাজ করলে দল তা বরদাস্ত করবে না। বলেন, ”পঞ্চায়েত ভোট সুস্থভাবে হবে গা জোয়ারি, গুন্ডামি করলে একঘণ্টায় দল থেকে বার করে দেব। ২ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনকে বলব ব্যবস্থা নিতে। যারা একুশে বেইমানি করেছেন আমার কাছে সব তালিকা রয়েছে। ঠিকাদারি করলে পঞ্চায়েতের টিকিট নয়।”
এরপরেই সভামঞ্চে পার্থ প্রতিম দে-র খোঁজ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। “আপনি কি আছেন? থাকলে বলুন শেষ কবে গ্রামে গিয়েছিলেন? প্রধান থাকবেন কেন? সোমবারের মধ্যে ইস্তফা দিন। চারবছর এলাকায় যাননি।“ এরপর মঞ্চে থাকা নেতৃত্বকে তোপ দেগে বলেন, “ব্লক সভাপতিদের বলছি প্রধান কাজ না করলে তার দায় আপনারও।“
মঞ্চে থেকে একই সঙ্গে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও তীব্র আক্রমণ শাণান অভিষেক। নদিয়া CAA-NRC নিয়ে সাধারণ মানুষকে অতঙ্কিত করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। সেই প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, সিএএ-র নামে মানুষকে বোকা বানাতে চাইছে বিজেপি। সিএএ বিল পাশ হওয়ার পরেও আইন প্রণয়ন হয়নি কেন! কারণ বিতর্কের জেরেই সেটা করতে পারছে না কেন্দ্র। “সব পরিচয়পত্র আছে, সরকারি পরিষেবা পাচ্ছেন, তাঁদের বলা হচ্ছে জমির দলিল দেখাতে বলছে”-কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তৃণমূল সাংসদ। স্থানীয় বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারকে বিজেপি আর টিকিট দেবে বলেও কটাক্ষ করেন তৃণমূলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন অভিষেক। বলেন, সিপিএমের হার্মাদরা গেরুয়া পরে বিজেপির জল্লাদ হয়েছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছেন। বলেন, ”আর একটা খুনও যেন নদিয়ায় না হয়, তার দিকে প্রশাসনের নজর রাখতে হবে”।