যে ভাবে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে বিজেপি সন্দেশখালির মা-বোনেদের সম্মান ২০০০টাকার বিনিময় ভূলণ্ঠিত করেছে, রাজ্যের ১০কোটি মানুষকে দেশের সামনে ছোটো করেছে তার জবাব এই ভোটে বাংলা দেবে। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে শুক্রবার, মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পরেই সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সন্দেশখালি থেকে রাজভবনে শ্লীলতাহানি- বিভিন্ন ইস্যু তুলে বিজেপিকে ধুয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তিনি বলেন, “গোধরা শুনেছি, পুলওয়ামা শুনেছি, আর সন্দেশখালি দেখলাম।“ গেরুয়া শিবিরের মিথ্যাচারের বেলুনে পিন ফুটে গিয়েছে- তীব্র কটাক্ষ অভিষেকের।
এদিন দলীয় নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন জমার পরেই আলিপুর জেলাশাসকরে অফিসের বাইরেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সেখান থেকেই একের পরে ইস্যু তুলে বিজেপিকে বিদ্ধ করেন অভিষেক। তীব্র নিশানা করে অভিষেক বলেন, “সন্দেশখালিতে চিত্রনাট্য তৈরি করেছিল বিজেপি। তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা। তৃণমূলকে ছোট করতে গিয়ে বাংলাকে ছোট করেছে। দেশের কাছে বাংলাকে বদনাম করা হয়েছে। ২০০০ টাকার বিনিময় ভুল বুঝিয়ে মা-বোনেদের দিয়ে মিথ্যে মামলা করিয়েছে। বাংলার ১০ কোটি মানুষকে সারা দেশের সামনে অপমান করা হয়েছে। গোধরা, পুলওয়ামা শুনেছি, এবার সন্দেশখালি চোখে দেখলাম। সন্দেশখালির বেলুন এরা ফুলিয়েছিল, সেই বেলুন ফেটে গিয়েছে। রোবট নামিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক, চলচ্চিত্র করেছিল।” এরপরেই সন্দেশখালির মহিলাদের কুর্নিশ জানিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, সন্দেশখালির মা-বোনদের আসল সত্যি তুলে ধরেছে বিজেপি প্রার্থীর ভাইরাল ভিডিও। “এই জল অনেকদূর গড়াবে। ভাইরাল ভিডিও নিয়ে দলগতভাবে আমি শীর্ষ আদালতে যাব। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অনুরোধ করেছি, তিনি যেন ভাইরাল ভিডিওর পুঙ্খানুপুঙ্খ পিডিএফ কপি রাজ্যকে সুপ্রিমকোর্টে জমা দিতে বলেন। বাংলার মা-বোনেদের সম্মান নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলতে আমরা দেব না।”
অভিষেকের কথায়, “সন্দেশখালি কাণ্ডে সিবিআই বা ইডির তদন্ত যে সঠিক পথে পরিচালিত হয়নি তা তো স্পষ্ট। এটা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম, সবটাই সাজানো নাটক। এই যে রোবট নামিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক, সেটাও তো পরিকল্পিত।” এরপরই জনপ্রিয় গোয়ান্দা চরিত্র ফেলুদা এবং জটায়ুর উদাহরণ টেনে অভিষেক বলেন, “ফেলুদা নয়, সিবিআই-ইডির তদন্ত জটায়ুর মতো! জটায়ু যখন তদন্ত করতো তখন একটা লোককে চিহ্নিত করে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য তদন্ত করতো! আর ফেলুদা তদন্ত করে দেখতো ঘটনাটা কীভাবে হয়েছে,, আসল দোষী কে।”
আরও পড়ুন- বাংলার মাটি সম্প্রীতির ঘাঁটি বুঝে নিক গেরুয়া দুর্বৃত্ত
বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, “বিজেপির প্রকৃত স্বরূপ এবার বেরিয়ে আসছে। মহিলারা-ই বিজেপির স্বরূপ প্রকাশ করছে। বিজেপির পদাধিকারীরা অভিযোগ করছে। প্রধানমন্ত্রী সাদা কাগজ প্রকাশ করেছেন ঠিকই। মানুষ ভোট বাক্সে এর জবাব দেবে। বাংলা বিরোধী বলতাম টাকা আটকে রেখেছেন বলে। এবার মানুষ বুঝতে পারছেন বাংলা বিরোধী কেন? দুটো আসনে বাড়তি অগ্রাধিকার পেতে এইসব করেছে।”
রাজভবনের অস্থায়ী মহিলা কর্মীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে রাজভবনে সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো নিয়েও এদিন রাজ্যপালকে ধুয়ে দেন অভিষেক। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, “বাইরের ফুটেজ দেখিয়ে কী হবে? ক্ষমতা থাকলে রাজ্যপাল তাঁর করিডোর, চেম্বারের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আনুন।” অভিষেকের কথায়, “আমার বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ ওঠে, আমি যদি তা খারিজ করতে ভিডিয়ো দেখাই, তা হলে তো সমস্ত ফুটেজ দেখাব। চেম্বার, সিঁড়ি, করিডর— সব জায়গার ভিডিয়ো দেখানোর কথা। কিন্তু রাজ্যপাল শুধু বাইরের ভিডিও প্রাকাশ্যে এনেছেন। এ তো পুরো নাটক।”
তীব্র আক্রমণ করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “ইনি রাজ্যপাল পদের কলঙ্ক। মেয়ের বয়সী মেয়েকে চাকরি দেওয়ার নামে শ্লীলতাহানি করেছেন। আমরা অনেক রাজ্যপাল দেখেছি। জগদীপ ধনখড়কেও দেখেছি। কিন্তু এই রকম নীচে নামতে কাউকে কাউকে দেখিনি।” অভিষেকের কথায়, “রাজ্য সরকারের উচিত রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া। রাজ্যপাল বলে তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন না। আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত।”