প্রতিবেদন : এর আগে নবজোয়ার কর্মসূচি ও পঞ্চায়েতের প্রচারে যেখানেই গিয়েছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। বাংলার মানুষের হকের টাকা ছিনিয়ে আনতে মানুষকে সংগঠিত হতে বলেছেন। জনসভায় আবেদন করেছেন, বাংলার মানুষের ভোট নিয়ে যে বিজেপি তাদেরই ভাতে মেরেছে সেই বাংলা-বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক দলকে একটা ভোটও নয়। বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েতের প্রচারের শেষ লগ্নেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ওই একই আবেদন রাখলেন গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে। তাঁর স্পষ্ট কথা, ১০০ দিনের কাজের টাকা যারা আটকে রেখেছে, শনিবারের ভোটে তাদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে। প্রথামাফিক নির্বাচনের আগে কলকাতা প্রেস ক্লাবে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (Abhishek Banerjee)। সংবাদমাধ্যমের ভিড়ে ঠাসা ক্লাবে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ধৈর্য ধরে। সেখানে রাজ্যপালের ভূমিকা, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, কেন্দ্রীয় বাহিনী, জ্বলন্ত মণিপুর, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সহ একাধিক ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। এদিন প্রথম থেকেই অভিষেক ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। সম্প্রতি গদ্দার অধিকারী বলেছে, তাকে নাকি উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের অফার দেওয়া হয়েছিল। এর উত্তরে তীব্র কটাক্ষে অভিষেক বলেন, একটাই কথা বলতে হয়, যে লোকটা পাঁচ লাখে বিক্রি হয় তাকে কেউ উপমুখ্যমন্ত্রীর অফার দেয় নাকি?
ন্যায্য পাওনা : বিজেপি একুশ সালে হারার পর থেকেই বাংলার বিরুদ্ধে প্রতিশোধের রাজনীতি শুরু করেছে। ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটির বেশি টাকা বাংলা কেন্দ্রের থেকে পায়। যাঁরা ১০০ দিনের কাজ করেছেন তাঁরা টাকা তো পাননি, সেই খাতে টাকা দেওয়া বন্ধ। সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা বকেয়া। আবাস যোজনায় বিজেপি শাসিত রাজ্য পাচ্ছে কিন্তু বঞ্চিত বাংলা। কেন? যেখানে বিজেপি জিতেছে সেখানে দেব আর যেখানে হেরেছে, সেখানে দেব না? বাংলায় তো তেমনটা হয় না। বিজেপি বাড়ির মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাননি, এমন একটা অভিযোগও দেখাতে পারবেন? বাংলা থেকে ১০ লক্ষ কোটি টাকা তুলে নিয়ে যায় আর বাংলার টাকা দেয় না। মানুষ ভোটে জবাব দেবেন।
কমিশনের ভূমিকা : সবাই ভেবেছিল নবজোয়ার শেষ হলে পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হবে। তা হয়নি। কমিশন নিজের নিয়মে ভোট ঘোষণা করে। এটাই প্রমাণ করে কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে। তৃণমূল বা রাজ্য সরকার দ্বারা পরিচালিত হয় না। কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। স্বাগত জানাচ্ছি। বুথে বুথে থাকুক। রাস্তায় থাকুক। কমিশন যেখানে মনে করে, রাখুক। ভয় কিসের? ভোট তো দেবেন মানুষ। বাহিনী তো নয়।
হিংসা কমেছে : নির্বাচনে একটি মৃত্যুও কাম্য নয়। তৃণমূল কংগ্রেস চায় না। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, বাংলায় হিংসার যে রাজনীতি বাম আমল থেকে শুরু হয়েছিল তা ক্রমশ কমছে। ভোট শান্তিতে হোক। নির্বিঘ্নে হোক। এটাই আমরা চাই। তবে মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করবেন না।
সব থেকে বেশি মনোনয়ন : এবার দেড় লক্ষাধিক প্রার্থী দিয়েছে বিরোধীরা। অতীত ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, কোন বছরের ভোটে এত বিরোধী প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছে। যাঁরা বলছেন, অভিযোগ তুলছেন, তাঁরা তথ্য-পরিসংখ্যান ঘেঁটে নিন। এটা বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে সর্বকালীন রেকর্ড।
রাজ্যপাল মণিপুর যান : রাজ্যপালের সমস্ত বক্তব্য শুনেছি। এটুকু বলা যায়, তিনি যথেষ্ট জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, বিচক্ষণ। বাংলা নিয়ে তাঁর এত চিন্তা, কই একবারও তো রক্তাক্ত মণিপুরের কথা বলেন না? কেন্দ্রকে পরামর্শ দেব, এমন বিচক্ষণ ব্যক্তিকে বাংলায় আটকে রাখা কেন্দ্রের ক্ষতি। তাঁকে মণিপুরের দায়িত্ব দেওয়া হোক।
পাঁচ লাখি গদ্দার : শুভেন্দু ৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে যায় ম্যাথু স্যামুয়েলসের কাছে। তাকে উপমুখ্যমন্ত্রী কে করবে! তাও বুঝতাম অজিত পাওয়ারের মতো ১০০০ কোটি টাকার কেস হলে। ও তো ৫ লাখ টাকাও ছাড়েনি। সারদা-নারদায় নাম আছে। ওর রেট ৫ লাখ।
২০১৮-র পুনরাবৃত্তি হবে না : ভোট এখনও হয়নি। আমরা সর্বস্তরে বলেছি শান্তিপূর্ণ ভোট করতে। আপনারা একবারও বলছেন না মনোনয়ন এত পরিমাণে হয়েছে। বিজেপি কোর্টে যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছে। দিয়েছে। আমি বলি, শুধু স্পর্শকাতর বুথ কেন, সব বুথে থাকুক। আমাদের উদ্দেশ্য খারাপ হলে পার্টি হিসাবে তো আমি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারতাম। যাইনি। আমার অবস্থান স্পষ্ট। অবাধ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক নির্বাচন আমি একা চাইলে সম্ভব নয়। সংবাদমাধ্যমকে দরকার, বাকি দলগুলোকেও দরকার।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি : এটা কী এখনও পরিষ্কার নয়। এটার প্রোপোজাল কী তার তথ্য এখনও কারও কাছে নেই। এটা বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের দেশ।
মণিপুর জ্বলছে : খুব দুঃখজনক ছবি আসছে ক’দিন ধরে। প্রধানমন্ত্রী গত ৩ মাসে কিছু বলেননি। বাইরে যাচ্ছেন, ডান্ডিয়া খেলতে যাচ্ছেন। ডবল ইঞ্জিন সরকারের কী হল? তার মানে সেই সরকার এই হিংসা থামাতে পারছে না।
এজেন্সি রাজনীতি : সায়নী বলে নয়, আমাকেও ইডি-সিবিআই ডেকেছে। আমার স্ত্রীকেও আটকেছে। এজেন্সির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যখন বিজেপিকে ডাকবে, বুঝব এরা নিরপেক্ষ। যাদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছে তাদের ডাকেনি। কারও বিরুদ্ধে কিছু থাকলে ব্যবস্থা নিক। কিন্তু ডেকে বিরক্ত করা, বসিয়ে রাখা, এসব কেন? পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল বিজেপির ফ্ল্যাগ নিলে এগুলো হত না। অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কিন্তু চলে গেল বিজেপিতে। সে এখন ধোয়া তুলসীপাতা।
নির্দল সাসপেন্ড : নির্দল দাঁড়িয়েছে মানে এটা নয় যে তাকে সাসপেন্ড করা হবে। টিকিট না পেয়ে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছে তাদের সাসপেন্ড করা হচ্ছে। ২০০০-এর কাছাকাছি হবে সংখ্যাটা সব মিলিয়ে।
মানুষ জবাব দেবে : মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের কাছে স্পর্শকাতর, একথা অধীরবাবু বলছেন। সুকান্তও একই কথা বলছেন। আবার শুভেন্দুও বলছে। মানুষ তৃণমূলকে সমর্থন করবে কি না সেটা মানুষের উপর ছেড়ে দিন না।
বহিরাগত : শুভেন্দু বলছে, বাইরে থেকে লোক ঢুকছে। ওর কাছে তালিকা থাকলে প্রশাসন বা কোর্টকে জানাক। না হলে কিছু ঘটলে তার দায়িত্ব শুভেন্দু অধিকারীর।
ওয়ার রুম : প্রত্যেকটা বুথ আমাদের ব্যাক অফিসে যুক্ত করা থাকবে। আমরা কিছু হলে ব্যবস্থা নেব। সকাল থেকে ওয়ার রুমে আমরা আমাদের মতো মনিটর করব।
এক নজরে
■ বাংলায় ১৫টি যুগান্তকারী প্রকল্প
■ হেল্পলাইনে ১৫ লক্ষ ফোন
■ দেশে এই প্রথম মানুষ যাঁকে চেয়েছে, তাঁরাই প্রার্থী
■ ফেক জব-কার্ড সবচেয়ে বেশি বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, মহারাষ্ট্রে
■ জুন মাস পর্যন্ত ১৮৬টি সেন্ট্রাল টিম বাংলায় এসেছে
■ ১০০ দিনের কাজের সাড়ে ৭ হাজার কোটি পাওনা
■ কেন্দ্র থেকে বাংলা পায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা ‘
■ বাংলা থেকে কেন্দ্ৰ তুলে নিয়ে গিয়েছে ১০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি
■ চ্যালেঞ্জ, একটা বিজেপি রাজ্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করে দেখাক