গত ২৫ এপ্রিল কোচবিহারের দিনহাটা থেকে শুরু হয়েছিল পথচলা। তৃণমূলের নবজোয়ার কার্যত এখন জনজোয়ার! বিগত ১৭দিনে ২ হাজার কিলমিটার পথ অতিক্রম করে ফেলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্মসূচির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের থেকে যা অনেকটাই বেশি। কারণ, এই কর্মসূচি শুরুর আগে মোট ৩০ লক্ষ মানুষের সঙ্গে সরাসরি জনসংযোগ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক। সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ১৭ দিনে সেই লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি অতিক্রম করে ফেলায়, নতুন করে কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- প্রাপ্য টাকা ছিনিয়ে আনব: লাভপুরের সভা থেকে কেন্দ্রকে তীব্র হুঁশিয়ারি অভিষেকের
এ প্রসঙ্গে আজ, বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে ছাত্রযুবদের সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃনাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, “শুধুমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক দৃঢ়তা রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মানুষের সঙ্গে মিশছেন। চায়ের দোকানে যাচ্ছেন। হাতে চোট পাচ্ছেন। ভাঙা গলায় কথা বলছেন। তবুও সভা করছেন। মানুষ নিজের প্রার্থী নিজে বেছে নিচ্ছেন। বিরোধীদের বলি, সমালোচনা না করে সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রেস জোটবদ্ধ হয়ে একটি মাত্র জেলায় এমন কর্মসূচি করে দেখান।”
যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষ বলেন, “এই কর্মসূচি ও মানুষে স্বতঃস্ফূর্ত উন্মাদনা শুধু তৃণমূলের জয় নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় নয়, বাংলার মানুষের জয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উন্নয়নের জয়। সিপিএম তাদের রাজত্বে সন্ত্রাস কায়েম করেছিল। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুয়ারে সরকার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছে।”
সায়নীর আরও সংযোজন, “আমরা যাঁরা রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত নতুন, শিখছি, তাঁদের কাছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কর্মসূচি অনুপ্রেরণা। রাহুল গান্ধী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য করেছিলেন ভারত জোড়োযাত্রা। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জনসংযোগ যাত্রা সংগঠনকে আরও শক্তিশালী, আরও বেশি বেশি করে মানুষের সঙ্গে দলের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তাই বিরোধী নেতাদের বলছি, এসি ঘর থেকে বেরিয়ে মানুষের কাছে যান। আগে মানুষের মন জিতুন, পরে ভোটে জেতার কথা ভাববেন। এই কর্মসূচি সকলের সামনে হচ্ছে। মিডিয়ার সামনে হচ্ছে। কোনও লুকোচুরি নেই। তৃণমূল তো মা-মাটি-মানুষের দল, তাই মাটির সঙ্গে মিশতে হবে।”
এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে দলের আইটি সেলের ইনচার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কর্মসূচিকে বিপ্লব বলে অভিহিত করতে চাই। গোটা দেশে এমন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আগে হয়নি। শাসক দলে থাকার পরও এমন কর্মসূচি কেউ করতে পারে, সেটাই ভাবা যায় না। ১৭দিন, ৮টি জেলা, ২হাজার কিমি পথ অতিক্রম। বিরোধীদের ব্যঙ্গ-কটূক্তি সত্ত্বেও পিছিয়ে যাননি অভিষেক।
রবীন্দ্রনাথ, সুকান্ত ভট্টাচার্যরা বাংলাকে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন, সেই পথেই এগোচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটে দলের জন্য স্বচ্ছ প্রার্থী খুঁজতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্য ছিল, পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রাম বাংলার মানুষের সঙ্গে নিবিড় জনসংযোগের।
এই পর্যায়ে কোচবিহার থেকে শুরু করে পরপর আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও বীরভুমে সফর করেছেন অভিষেক। এই সময়কালে ৫০টি গণ জমায়েত, ৩৫টি বিশেষ অনুষ্ঠান ও ১২টি রোড শো-তে অংশ নিয়েছেন তিনি। এই কর্মসূচিতে মোট ৩০ লক্ষ মানুষের সঙ্গে সরাসরি জনসংযোগ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করার কথা ছিল তাঁর। এই তিন ধরনের কর্মসূচির পাশাপাশি ৮ জেলায় পঞ্চায়েত ভোটের জন্য স্বচ্ছ প্রার্থী খুঁজতে ভোটের আয়োজনও করেছে তৃণমূল। সেখানেও ভাল সাড়া মিলেছে বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। এই কর্মসূচি শেষ হবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগরে। ৬০ দিনের এই কর্মসূচির এখনও ৪৩ দিন বাকি। ৮ জেলার সাড়া দেখে আগামী দিনে আরও বেশি সংখ্যায় মানুষের অংশগ্রহণ আশা করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রয়োজনে কর্মসূচির আরও বাড়াতে পারেন অভিষেক। শুধু সরাসরি জনসংযোগ নয়, নতুন এই প্রচার কৌশলে ডিজিটাল মাধ্যমেও রাজ্যের মানুষকে ছোঁয়ার কৌশল নিয়েছেন অভিষেক। ডিজিটাল মাধ্যমে তাঁর এই কর্মসূচি ১ কোটি বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছে।