প্রতিবেদন : আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের অ্যাকাউন্টে হদিশ মিলল প্রায় দু’কোটি টাকার। ‘সেবাধর্মে’র নামে এই কোটি কোটি টাকা উঠেছে বলে অভিযোগ। কিন্তু সেই টাকা কারা দিলেন? কেনই বা দিলেন? সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। ‘সেবাধর্ম’ শিকেয় তুলে ১০ দফা দাবি আদায়ে লাগাতার অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু আন্দোলনকারীদের এই লাগাতার আন্দোলনে টাকার জোগান দিচ্ছে কারা? সেই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়— বাম, অতিবাম, নব্যব্যবসায়ী ও অসাধু চিকিৎসা ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এই টাকার জোগান আসছে।
আরও পড়ুন- সেজে উঠেছে ঝাড়গ্রামের জুওলজিকাল পার্ক, দেখা মিলবে বাঘ-সিংহেরও
গত ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট রেজিস্টার অব অ্যাসিওরেন্সের দফতরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে নাম নথিভুক্ত করিয়েছে। তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলা হয়েছে। বেসরকারি ব্যাঙ্ক এইচডিএফসি-র কলকাতা হাইকোর্ট শাখায় যে অ্যাকাউন্টটি (নম্বর-xxxxxxxxxx ৩২৫১) খোলা হয়েছে, ১৬ অক্টোবর সেখানে ব্যালেন্স ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। এনজিও-র ইউনিক আইডি হল-ডব্লুবি/২০২৪/০৪৫২৬৮১। সেখানে রাজদীপ সাউ (সম্পাদক), অর্ণব মুখোপাধ্যায় (কোষাধ্যক্ষ) ও দেবাশিস হালদার (সহ-সম্পাদক) বলে উল্লেখ রয়েছে। আর সেখানে যে এনজিওর নামে অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে, তারা নিজেদের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছে রক্তদান শিবির, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ও চক্ষু পরীক্ষার মতো ‘সেবাধর্মে’র কথা। কিন্তু ১৩ সেপ্টেম্বর ট্রাস্ট গঠনের পর ক’টা রক্তদান, চক্ষু ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির করেছে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন পরিষেবা না দিয়ে এই নাম কেনার অর্থ কী? অ্যাকাউন্ট নিয়ে আরও প্রশ্ন, ট্রাস্ট গঠনের পর জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের নামে যে পাবলিক নোটিশ করা হয়েছে, সভাপতি হিসেবে অনিকেত মাহাতো, সম্পাদক রাজদীপ সাউ ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে অর্ণব মুখোপাধ্যায়ের সই রয়েছে। অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের তালিকায় নাম নেই দেবাশিসের। ট্রাস্ট ডিডে নাম রয়েছে কিঞ্জল নন্দের। বিতর্ক দেখা দিয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ঠিকানা নিয়ে। ঠিকানা হিসেবে জানানো হয়েছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাস কে বি হস্টেলের ৩২ নম্বর রুম। প্রশ্ন এখানেই, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে সরকারি ছাত্রাবাসের ঠিকানা কেন? সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনও ট্রাস্টের সম্পত্তি হিসেবে সরকারি সম্পত্তিকে ব্যবহার করা যায় কি? এ-প্রসঙ্গই তুলে কুণাল ঘোষ বলেন, ট্রাস্ট নিয়ে দুর্নীতি নয়। অসৎ উদ্দেশে টাকা দিচ্ছেন অনেকেই। একেবারে রাজনৈতিক দলের মতো এনজিও গঠন করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ফান্ড জোগাড় করা হচ্ছে। ফলে উদ্দেশ নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। কারা টাকা দিচ্ছেন? জুনিয়র ডাক্তারদের এই আন্দোলনের জেরে সরকারি হাসপাতালে অচলাবস্থা বজায় থাকলে কাদের লাভ? তাহলে কি সেইসব বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের মালিকরাই ইন্ধন দিতে টাকা ঢালছেন আন্দোলনে! তিনি বলেন, শুধু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই নয়, বিভিন্ন সামগ্রী দিয়েও এই অনশনকে মদত দেওয়া হচ্ছে। অতিবাম, নব্যব্যবসায়ী ও অসাধু চিকিৎসা ব্যবসায়ীই এই মদতদাতা।