বহুদিন পর দ্বৈত চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। একটি চরিত্রের ‘লুক’ প্রকাশিত এবং তা দেখে ইতিমধ্যেই সকলে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। কারণ ‘মি. ইন্ডাস্ট্রি’ নিজেকে ভাঙার যে প্রয়াস নিয়েছেন, ‘হিরো ইমেজ’ ভেঙে অনেকেই সে সাহস করবেন না! এক লহমায় একমাত্র তুলনা আসতে পারে আরেক ইন্ডাস্ট্রি ‘মি. অমিতাভ বচ্চন’! অন্য আর একটি ‘লুক’ এখনও অপ্রকাশিত বা বলা ভাল, ক্রমশ প্রকাশ্য এবং পরিচালক আত্মবিশ্বাসী, সে ‘লুক’ও মানুষ একই রকম পছন্দ করবে। সব মিলিয়ে কিন্তু গঞ্জ থেকে উঠে আসা এক বাবা-মেয়ের গল্প বলবে ‘আয় খুকু আয়’। শৌভিক তেমনটাই জানালেন। পেশায় হকার নির্মল মণ্ডল তথা প্রসেনজিৎ এ ছবিতে হলেন বাবা আর মেয়ে বুড়ি, যে চরিত্রে অভিনয় করছেন ‘রানি রাসমণি’খ্যাত দিতিপ্রিয়া রায়। বাবা-মেয়ের চিরন্তন ভালবাসার সম্পর্কের গল্পই বুনেছেন শৌভিক, কাহিনি তাঁরই। এই সম্পর্কে নানা চড়াই-উৎরাই, টানাপোড়েন অবশ্যই আসবে, আসবে আরও কিছু চরিত্র কিন্তু সেসব শৌভিক এখন বিস্তারিত বলতে চান না, কারণ সদ্য শুট শুরু হওয়া ছবির গল্প পুরোটা এখনই প্রকাশ হয়ে যাক, তা পরিচালক-প্রযোজক কেউই চান না।
তবে পরিচালক আর যা যা চান তার সবটাই মনমতো করতে পারছেন বলে খুব খুশি তিনি। শৌভিক জানালেন, “নিজের লেখা গল্প বলতেই ভালবাসি। আর ভালবাসি সাধারণ মানুষের গল্প বলতে, চেনা চরিত্রদের নিয়ে গল্প তৈরি করতে। অর্থাৎ আমাদের আশপাশে যাদের দেখি তারাই আমার গল্পের চরিত্র হয়ে ওঠে, তাদের চাওয়া-পাওয়া-পেতে চাওয়া-না পাওয়া এগুলো নিয়ে কাহিনি বুনতে ভাল লাগে। আমার আগের ছবি ‘সুইজারল্যান্ড’-এও তাই ছিল, এখানেও তাই। যদিও ‘আয় খুকু আয়’ এর চরিত্ররা আরও মাটির কাছাকাছি, অর্থনৈতিক বলয়ের আরও প্রান্তের দিকে অবস্থান করে এই বাবা-মেয়ে। এদের গল্পটা বলতে আমার ভাল লাগছে আর আমি আমার মতো করে সেটা শুটও করতে পারছি। এ ব্যাপারে একটা কথা না বলে পারছি না, আমি সত্যি জিৎদাকে ধন্যবাদ দেব যে উনি আমার চাহিদায় শর্ত আরোপ করেননি কোনওরকম। বুম্বাদার চরিত্র দুটোর লুক যে চেঞ্জ করছি তার জন্য আমরা ন্যাচারাল প্রসেসের ওপরে ডিপেন্ড করছি। ফলে সময় লাগছে একটু কিন্তু প্রযোজক সেই সময়টা দিচ্ছেন। আমি আমার মতো করে শিডিউল করে কাজ করতে পারছি।”
আরও একটা ব্যাপারে শৌভিক খুশি, শুটিং হচ্ছে দুর্দান্তভাবে। “বুম্বাদার লুক, অভিনয় মানুষ দেখতে পাবে কিন্তু ওঁর পরিশ্রম, ধৈর্য, আন্তরিকতা এগুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি। আর দিতিপ্রিয়া। কী সাবলীল অভিনয় যে ও করে এবং বুম্বাদার মতো সিনিয়র অভিনেতার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে অভিনয় দেখে আমরা পুরো ইউনিট মুগ্ধ। বুম্বাদা ও জিৎদাও খুব খুশি।” একই সুর দিতিপ্রিয়ার গলাতেও। “রানি রাসমণি-র শুট শেষ হওয়ার পর অনেক অফার আসছিল। টেলিভিশন-এ একটা ব্রেক নেব ভেবেই রেখেছিলাম। বাকি কিছু কাজ করছিলাম, সেই সময়েই জিৎদার অফিস থেকে ফোন আসে এবং আমি গিয়ে দেখা করি। গল্প শুনি। রাজি না হওয়ার প্রশ্নই নেই কারণ গল্প খুব সুন্দর আর বুম্বামামুর সঙ্গে প্রথম স্ক্রিন শেয়ার, সব মিলিয়ে আমার খুবই এক্সাইটেড লেগেছিল। “প্রথম লট-এ চারদিন শুট হয়েছিল কলকাতায়। এরপর বাকি শুট হবে কলকাতার আশপাশে ও তারপর বীরভূম। বোলপুরের প্রত্যন্ত কিছু গ্রাম ভাবা আছে যেখানে ডিসেম্বরের শেষ অবধি ধাপে ধাপে ছবির শুটিং হবে।
আরও পড়ুন: Subramanian Swamy: ফের মোদি সরকারকে নিশানা করলেন স্বামী
আপাতত দিতিপ্রিয়া প্রথম চারদিনের শুটিং-এর স্মৃতিতেই মশগুল। প্রসেনজিৎকে অনস্ক্রিন বাবা হিসেবে পেয়ে ভীষণই আপ্লুত। কারণ জানালেন, “এত বড় মাপের একজন অভিনেতা কিন্তু এত ডাউন টু আর্থ একজন মানুষ বুম্বামামু ভাবাই যায় না। যেহেতু বাবা-মেয়ের গল্প তাই বেশিরভাগ সময় আমাদের দু’জনকে একসঙ্গে সিন করতে হয়। কিন্তু অভিনয়ের পাশাপাশি আমার বড় পাওনা, প্রতি মুহূর্তে শেখা। আমি যে কতটা এনরিচড হচ্ছি, সে আমিই জানি। আর একটা ব্যাপার, একবারের জন্যও আমার মনে হয়নি আমি প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জির সঙ্গে অভিনয় করছি। এই ক’দিনেই এত মিষ্টি আর সহজ একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে।” এটা শৌভিকও মানলেন। কারণ দু’জনের এই বোঝাপড়ার রসায়ন ক্যামেরায় ধরা পড়ছে চমৎকার ভাবে। শৌভিক আরও যেটা জানালেন, “যেদিন প্রথম জিৎদাকে গল্প শুনিয়েছিলাম, সেদিনই দু’জন জানতাম এই চরিত্র বুম্বাদা ছাড়া হবে না। এটুকু বলতে পারি ছবির ট্রেলার বেরোলেই দর্শকও বুঝবেন কেন আমরা ঠিক করেছিলাম, বুম্বাদা না করলে ছবিটা আমরা করবই না।’’
ছবিতে আরও যে শিল্পীরা আছেন তাঁরা প্রত্যেকেই গুণী। তাঁদের অন্যতম হলেন সোহিনী সেনগুপ্ত, শঙ্কর দেবনাথ, রাহুল দেব বোস, সত্যম ভট্টাচার্য, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাই সব মিলিয়ে দর্শকদের যে একটা ভীষণ ভাল ছবি উপহার দিতে পারবেন এ ব্যাপারে শৌভিক প্রত্যয়ী। ছবির সংগীত পরিচালনা করছেন রণজয় ভট্টাচার্য আর মেকআপে সোমনাথ কুণ্ডু। শৌভিককে চিত্রনাট্যে সাহায্য করেছেন সুগত সিনহা।