আমরা দেখলাম সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের বাড়ি গিয়ে বিজেপির (CPM-BJP) নেতারা বৈঠক করলেন।
এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়।
আমরা অতীতেও প্রমাণ দিয়েছিলাম ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বামের ভোট রামে গিয়েছিল বলেই বিজেপি ১৮টি আসনে জয়লাভ করেছিল।
এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে যেখানে-যেখানে বামের ভোট নিজেদের কাছে ফেরত এসেছে সেখানে-সেখানেই বিজেপির ভোট কমেছে।
ঠিক যেভাবে সিএএ ও এনআরসি নিয়ে বিজেপি সরকারের ডাবল রোল সারা দেশের মানুষ দেখছে, আড়াই বছর আগে বিল পাশ করার পরেও আজও রুলস তৈরি করতে পারেনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলায় এসে এক ধরনের কথা বলেন, আসামে গিয়ে আরেক ধরনের কথা বলেন আর বিজেপির স্থানীয় নেতারা সস্তার রাজনীতি করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন, ঠিক একইভাবে উত্তরবঙ্গ বিভাজন নিয়ে বিজেপির ডবল রোল আমরা বহুবার দেখেছি।
কেন্দ্রীয় নেতারা বাংলায় এসে বলেন আমরা বঙ্গভঙ্গ চাই না, অথচ তাঁদের রাজ্যের নেতারা বঙ্গভঙ্গের উসকানি দেন।
রাজনীতিতে পেরে না উঠে ও ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন হতে হতে অন্তর্দ্বন্দ্বে জীর্ণ বিজেপি আজ ডুবন্ত মানুষের মতো খরকুটো ভেবে বামফ্রন্ট বা কোথাও কোথাও কংগ্রেসকে আঁকড়ে ধরছে।
৩৪ বছরের অপশাসনের পর বাংলার মানুষ ইতিমধ্যেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বামফ্রন্টকে শূন্য করে দিয়েছে।
আর শতাব্দীপ্রাচীন কংগ্রেসও বাংলায় শূন্য। আগামী দিনে ভারতবর্ষে শূন্যের দিকে এগোচ্ছে।
একদিকে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কমরেডদের যেমন দেখেছিলাম নীতি-আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে সাম্প্রদায়িক দল আইএসএফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিল। অন্যদিকে কংগ্রেসকেও দেখেছিলাম সেই জোটে শামিল হতে।
আরও পড়ুন: ফিরল দুঃস্বপ্নের স্মৃতি, ভোপালে গ্যাস লিক করে বহু মানুষ অসুস্থ
মনে পড়ে সেই দিনের কথা, যেদিন বিরোধী জোটের সভায় কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বক্তব্য রাখাকালীন মঞ্চে এলেন আব্বাস সিদ্দিকি। মঞ্চে এলে মহম্মদ সেলিম অধীর চৌধুরির হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন।
রাগ করে অধীর চৌধুরি মঞ্চ ছাড়তে উদ্যোগী হলে বিমান বোস তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছিয়ে অধীরবাবুর রাগ কমান।
একদিকে নির্বাচন কমিশন, একদিকে জগাই-মাধাই-এর জোট, অন্যদিকে বিজেপির মিথ্যা অপপ্রচার, প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ তাবড় তাবড় নেতাদের ডেইলি প্যাসেঞ্জারি, কলের জলের মতো কোটি কোটি টাকা খরচ, সেন্ট্রাল এজেন্সি ও মিডিয়ার অপব্যবহার, নিট ফল অবকিবার ২০০ পার বলে মানুষের রায় পগার পার। ৭৭ থেকে কমতে কমতে কত এসেছে সেটা সম্ভবত বিরোধী দলনেতাও সঠিকভাবে বলতে পারবেন না।
মানুষের রায়ে শূণ্য হয়ে যাওয়া সিপিএম (CPM-BJP) একটা মিছিল করে যতই ঘুরে দাঁড়াতে যাক, বাংলার মানুষ তাদের রাজনৈতিক কোমর ভেঙে দিয়েছে, ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব না।
আর জাতীয় কংগ্রেস এই বাংলায় ইতিমধ্যেই সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে।
তাই বিজেপি (CPM-BJP) নেতাদের মনে করিয়ে দেওয়া উচিত, শূন্যের সঙ্গে যাই গুণ করবেন, তার ফলাফল কিন্তু শূন্যই হবে।
এই সহজ অংকটা বোধহয় বিজেপি নেতৃত্ব ভুলে গিয়েছে। বিধানসভা নির্বাচন বা আসানসোল উপনির্বাচন বা সাতটি বিধানসভার উপনির্বাচন কোনোটাই রাজ্য পুলিশ দিয়ে হয়নি।
কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে গণতান্ত্রিকভাবে মানুষ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসকে যোগ্য জবাব যেভাবে দিয়েছিলেন, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনেও যদি ইন্টারপোলের পুলিশও আসে, তার ব্যতিক্রম হবে না।
দুশ্চিন্তা একটাই।
সিপিএম শূন্য, কংগ্রেস শূন্য। এখন অন্তর্দ্বন্দ্বে জেরবার বিজেপিও যদি অচিরে শূন্য হয়ে যায়, তাহলে রাজনীতির আঙিনায় মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস খেলবেটা কার সঙ্গে?
তাই শ্যামামায়ের বিসর্জনের দিন প্রার্থনা করি তিনি যেন খেলার মাঠে বিরোধীদের অন্তত টিকিয়ে রাখেন, যাতে করে মানুষের আশীর্বাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে তাদের ডজন ডজন গোল দিতে পারে।