সাধারণভাবে একটা কথা আগেই বলে নিই। কালীর নাম শুনলেই অথবা কালীমূর্তি দেখলেই আমাদের মনে যে প্রতিক্রিয়া হয়, সে প্রতিক্রিয়া যেহেতু রাধাকৃষ্ণের নাম, লক্ষ্মী-সরস্বতীর নাম শুনলেই অথবা তাঁদের মূর্তি দেখলেই হয় না, তাই কালীর (Kali Puja) সেই বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে আমরা পূর্বাহ্নেই একটু বেশি সচেতন হয়ে এই প্রবন্ধ আরম্ভ করছি। আমরা গাঁয়ে-গঞ্জে দেখতাম— রাধাকৃষ্ণ, লক্ষ্মী-সরস্বতী, শীতলা-ষষ্ঠী অথবা এমনকী দুর্গাপুজোর ব্যাপারেও যে পুরোহিত দৃপ্ত পদক্ষেপে দক্ষিণা-কামে এগিয়ে আসতেন, কালীপুজোর কথা বললে সেই পুরোহিতই পিছপা হতেন। তাঁর অন্তগামিনী দক্ষিণাকামিতার কথা ছেড়েই দিলাম, তিনি সভয়ে বলতেন— না ভাই, কালীপুজোর অনেক হ্যাপা! ব্রত-উপবাস, মন্ত্রোচ্চারণ, পূজোর আঙ্গিক— কোনওটার যদি ত্রুটি হয়ে যায়, তাহলে আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে, আমায় ছেড়ে দাও ভাই।
আবার যে গৃহস্থ দোল-দুর্গোৎসব করে পাড়া মাতিয়ে দিচ্ছেন, দরিদ্র-নারায়ণ সেবা করে সাধারণের আশীর্বাদ লাভ করছেন, সেই গৃহস্থও কিন্তু কালীপুজো (Kali Puja) করতে হলে দুবার ছেড়ে পাঁচবার ভাববেন। তার মধ্যে আবার যদি কালীপুজোর অব্যবহিত কালের মধ্যে সে বাড়ির কারও কোনও বিপদ হয়, মৃত্যু ঘটে, আগুন লাগে, তবে গৃহস্থ পরের বছর থেকেই আর কালীপুজো করেন না। তিনি ভাবেন— জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে হয়তো বা পুজোর আঙ্গিকে কোনও ত্রুটি হয়েছে, কালীপুজো তাঁর সইছে না। এই রকম অনেক বছর পরেও অন্য কোনও গৃহস্থের কালীপুজোর উৎসবে রবাহূত কোনও অধস্তন বংশজের মুখে শোনা যাবে— আমাদের বাড়িতেও তো আগে কালীপুজো হত। তারপর অমুকের এই দুর্ঘটনা হল, আর পুজো বন্ধ হয়ে গেল।
মনে রাখতে হবে— গৃহস্থের এই ভীতি, পুরোহিতের ভাবনা এবং সাধারণ জনেরও ভয়বিহ্বল শ্রদ্ধা— এই রকম একটা পরিমণ্ডলের মধ্যে থেকে আমরা কালীমায়ের চরিত-কথা লিখতে যাচ্ছি। শাস্ত্র এবং তত্ত্বের অনুক্রমে কালীপুজোর (Kali Puja) মধ্যেই কেন শুধু এই ভীতি-ভাবনা এল অথবা সমস্ত দেবতার পরিসরে একমাত্র কালীই কেন এমন ভীতিসঞ্চারিণী দেবী হয়ে রইলেন, তার একটা বিবর্তন এবং বিবরণ এই লেখাটির মধ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
রামপ্রসাদ আর রামকৃষ্ণ— এই দুই ‘রাম’ সর্বসাধারণের মধ্যে কালীমায়ের যত প্রিয়ত্ব স্থাপন করেছেন অথবা প্রিয়ত্বের যে সম্বন্ধে তাঁরা কালীমায়ের (Kali Puja) গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছেন— তা বড় সাধারণ নয়, ভিন্ন স্বাদের তো বটেই। কথায় বলে— মায়ের ঋণ সস্তান শোধ করতে পারে না। কিন্তু আমার ধারণা— মায়ের সাধনার আনন্দে, মায়ের বাৎসল্যরসে এই দুই সন্তান যত ঋণী, স্বয়ং মাও বোধহয় তাঁর এই দুই সন্তানের কাছে ততটাই ঋণী— তাঁর অসামান্যা মাতৃমূর্তি বাঙালির অন্তরে স্থাপন করার জন্য। নইলে, অন্তত কালী মা আমাদের অত কাছের জন ছিলেন না। তাঁর প্রতি যে ভাব ছিল, তাঁর মধ্যে শ্রদ্ধা, ভক্তি যত ছিল, ভয় ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি। এই ভয়ের মধ্যে নানা কারণে ভয়ানক রস এবং বীভৎস রস— দুইই এমনভাবে সংক্রমিত হয়েছিল যে, খুনে জমিদার, ডাকাত অথবা সমাজের সবচেয়ে ক্রুর-কঠিন ব্যক্তিটির উপাস্যা দেবী হিসেবে তিনি প্রায় চিহ্নিতই হয়ে গিয়েছিলেন।
কপালকুণ্ডলার অধিকারী সাগরের উপকূলে নির্জন অরণ্যের মধ্যে মা ভবানীর মন্দিরে পুজারি ছিলেন। তাঁর আচার-ব্যবহার, কপালকুণ্ডলার প্রতি তাঁর স্নেহ আমাদের আশ্বস্ত করে। তিনি যে ভবানী মূর্তির পূজার্চনা বাদ দিয়ে কন্যাসমান কপালকুণ্ডলার সঙ্গেও যেতে পারেন না, সেই মূর্তির চেহারা— মানবাকারপরিমিতা’ বটে, কিন্তু ‘করাল কালীমূর্তি’।
ওই মূর্তির পূজক অধিকারী স্নেহ, দয়া ইত্যাদি একান্ত মানবিক গুণের আধার অন্যদিকে কাপালিকের কথা ভাবুন। ওই একই মূর্তির সাধক হওয়া সত্ত্বেও তাঁর চরিত্রের ‘করাল’ স্বভাব আমাদের চিত্ত বিপন্ন করে। বিজন বনে আত্মীয়-বন্ধু পরিত্যক্ত নবকুমারকে, আশ্রয়প্রার্থী নবকুমারকে সে মায়ের কাছেই বলি দিতে চায়। একটি মানুষকেও সে বলির পশুর অতিরিক্ত মনে করে না। বড় জোর সাধনার উপকরণ। নবকুমারকে হঠাৎ পেয়ে সে খুশি হয়। ভাবে— নরবলির সুযোগ হয়ে গেল। মায়ের ইচ্ছা— ভৈরবীপ্রেরিতোহসি।
বলির পশুকে যেমন খাইয়েদাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়, তেমনই নবকুমারকেও সে তার মনের গোপন অভিলাষ একটুও জানতে না দিয়ে একটি কুটিরে থাকতে দিয়েছে এবং বলেছে— ফলমূল যাহা আছে, আত্মসাৎ করিতে পার। পর্ণপাত্র রচনা করিয়া কলসজল পান করিও। ব্যাঘ্রচর্ম আছে, অভিরুচি হইলে শয়ন করিও। নির্বিঘ্নে তিষ্ঠ— ব্যাঘ্রের ভয় করিও না।
প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে যে ব্যক্তি পরম বিশ্বাসে কল্পিতবলি ছাগশিশুর মতো ফলমূল খেয়ে ভাবছে— এই একটু পরেই আমাকে ছেড়ে দেবে, সে পরের দিন রাত্রেই কাপালিকের ‘মানুষঘাতী’ হাতের স্পর্শ পায়। জিজ্ঞাসা করে, ‘’আমায় কোথায় লইয়া যাইতেছেন?’’ কাপালিক বলে ‘’পূজার স্থানে’, ‘বধার্থ।’’
নবকুমার বাঁচবার জন্য কত শক্তি প্রকাশ করলেন, কত কৌশল করলেন। কিছুই হল না। বরঞ্চ তাঁর বাঁচবার আয়াস দেখে কাপালিক বলল— “মূর্খ কি জন্য বল প্রকাশ কর? তোমার জন্ম আজি সার্থক হইল। ভৈরবীর পূজায় তোমার এই মাংসপিণ্ড অর্পিত হইবেক, ইহার অধিক তোমার তুল্য লোকের আর কি সৌভাগ্য হইতে পারে?”
অথচ এই কাপালিকের উল্টো দিকে অধিকারীকে দেখুন। মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন মাত্রেই আমরা ‘মানবাকারপরিমিতা করাল কালীমূর্তির সামনে কপালকুণ্ডলার মঙ্গল কামনায় তাঁকে ভক্তিতে আনম্র দেখেছি, মন্ত্রপূত বিল্বপত্রে তাঁকে পুজো করতেও দেখেছি। অধিকারী কপালকুণ্ডলাকে পিত্রাধিক স্নেহ করেন। কাপালিকের উদ্দেশ্যও তিনি জানেন। ‘খ্রীষ্টিয়ান তস্কর’রা কপালকুণ্ডলাকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু নৌকো ভেঙে গেলে সমুদ্রতীরে তাকে তারা ফেলে গিয়েছিল। কাপালিক কপালকুণ্ডলাকে নিয়ে আসেন বটে কিন্তু তিনি তাকে পালন করেছিলেন আপন তান্ত্রিক সাধনার উপকরণ হিসেবে। অধিকারী নবকুমারকে জানিয়েছেন— কাপালিক ইহাকে প্রাপ্ত হইয়া যোগসিদ্ধিমানসে প্রতিপালন করিয়াছিলেন। অচিরাৎ আত্মপ্রয়োজন সিদ্ধ করিতেন।
কাপালিক নবকুমারকে যেমন ফলমূল খাইয়ে ব্যাঘ্রচর্মের শয্যায় ঘুম পাড়িয়ে নিজের পথ প্রস্তুত করেছিলেন, কপালকুণ্ডলাকেও তিনি প্রতিপালন করেছেন অনুঢ়া কন্যার সঙ্গম-সিদ্ধিতে ঊর্ধ্বরেতা হওয়ার ‘যোগসিদ্ধিমানসে’। অধিকারী এই সরলা বালিকার জীবনে এই অস্বাভাবিকতা বরদাস্ত করতে পারছেন না। বালিকার প্রতি অসীম মমতায় তাই তিনি নবকুমারের সঙ্গে তার বিয়ের ঘটকালি করছেন। বিয়ের কথা তিনি এখনও বলেননি শুধু শঙ্কা ব্যক্ত করে বলছেন— আর আমিও এই কনাকে মা বলিয়াছি, আমিই বা কি প্রকারে ইহাকে অজ্ঞাতচরিত্র যুবার সহিত একাকী দূর দেশে পাঠাইয়া দিই?
নবকুমার কহিলেন, “আপনি সঙ্গে আসুন।”
অধিকারী। আমি সঙ্গে যাইব? ভবানীর পূজা কে করিবে? ‘ভবানীর পুজো কে করিবে?’ আসলে অধিকারী কপালকুণ্ডলাকে যতটা স্নেহ করেন, মা ভবানীর (Kali Puja) পুজোতেও তাঁর অনুরক্তি কম নয়। ওই নির্জন অরণ্যস্থলীর মধ্যে সঙ্গীবিহীন অবস্থাতেও মায়ের সেবানুরক্তি ত্যাগ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁর পুজোর উপাচার সামান্যই— চিরাচরিত মন্ত্র, বিল্বদল, বিশ্বাস এবং অনুরক্তি। অপরপক্ষে নবকুমার যখন কাপালিককে প্রথম দেখেছিলেন, তখন তাঁর উপাসনা পদ্ধতিও তাঁর নজরে এসেছিল। বর্ণনাটা একটু শোনা যাক।
আরও পড়ুন: ইটিন্ডার সিদ্ধেশ্বরী কালীর পুজো হয় ইছামতীর গলদা চিংড়ির নৈবেদ্য দিয়ে
“… আয়ত মুখমণ্ডল শ্মশ্রুজটাপরিবেষ্টিত। সম্মুখে কাষ্ঠে অগ্নি জ্বলিতেছিল—। নবকুমার একটা বিরাট দুর্গন্ধ পাইতে লাগিলেন, ইহার আসন প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া তাহার কারণ অনুভূত করিতে পারিলেন। জটাধারী এক ছিন্নশীর্ষ শবের উপর বসিয়া আছেন। আরও সভয়ে দেখিলেন যে, সম্মুখে নরকপাল রহিয়াছে, তন্মধ্যে রক্তবর্ণ দ্রব্য পদার্থ রহিয়াছে। চতুর্দিকে স্থানে স্থানে অস্থি পড়িয়া রহিয়াছে— এমনকি, কণ্ঠস্থ রুদ্রাক্ষ্যমালামধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্থিখণ্ড গ্রথিত রহিয়াছে। নবকুমার মন্ত্রমুগ্ধ হইয়া রহিলেন।”
পরের দিন আমরা নবকুমারকে একই জায়গায় দেখেছি। কাপালিক তাকে গায়ের জোরে ‘পূজার স্থানে’ নিয়ে এসেছে। “সৈকতের মধ্যস্থানে নীত হইয়া নবকুমার দেখিলেন, পূর্বদিনের ন্যায় তথায় বৃহৎ কাষ্ঠে অগ্নি জ্বলিতেছে। চতুঃপার্শ্বে তান্ত্রিক পূজার আয়োজন রহিয়াছে, তন্মধ্যে নরকপালপূর্ণ আসব রহিয়াছে— কিন্তু শব নাই। অনুমান করিলেন, তাঁহাকেই শব হইতে হইবে।”
নির্জন বসতিতে কাপালিকের যে শক্তিপুজোর আয়োজন আমরা দেখলাম, তা আমাদের কাছে ভয়ংকর হলেও তান্ত্রিক শক্তিসাধনায় এটা অস্বাভাবিক নয়। শাক্তদের উপাসনা পদ্ধতি এক রকম নয়। একেক সম্প্রদায়ে একেক নিয়ম, একেক রকম আচার। বামাচারী অথবা কুলাচারী শাক্তদের মধ্যে মদ, মাংস, শব-সাধন, নরকপালের পাত্রে খাওয়াদাওয়া করা, মড়া-পোড়ানোর ছাই দিয়ে স্নান করা, সেগুলো খাওয়া— এই সব বীভৎস প্রথা চালু আছে— যা সাধারণে ভাবতেই পারেন না। কিন্তু এই বামাচারী, কুলাচারীরাও কালীপুজোই করেন, অথবা শিবপুজো।
আসলে তান্ত্রিক, অথবা আরও সাধারণভাবে বলতে গেলে, শাক্তদের উপাস্যা দেবী কিন্তু শুধুই কালী নন, উপাস্যা দশমহাবিদ্যা। কালী, তারা অথবা বঙ্কিমের কাপালিক যার কথা বলেছেন— সেই ভৈরবী, ছিন্নমস্তা বা ষোড়শী দেবী— এঁরা সবাই দশ মহাবিদ্যার এক একটি রূপ। যাঁরা দুর্গাপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো বা অন্নপূর্ণা পুজো করেন, তাঁরা যেমন অনেক সময় কালীমূর্তির ওপরেই এই পুজো করেন, তেমনই যাঁরা একান্ত তান্ত্রিক পদ্ধতিতে তারা, ষোড়শী বা ছিন্নমস্তার পুজো করেন, তাঁরাও কালী (Kali Puja) মায়ের মূর্তির সামনেই তাদের ইষ্টদেবতার পুজো সম্পন্ন করেন। সত্যি কথা বলতে কী—অনেক সময় মুর্তিরও দরকার হয় না, মায়ের নাম কালী না হয়ে অন্য কিছু হলেও বাধা নেই। এমনকী যে নামের মধ্যে কালীনামের স্বাদ গন্ধ কিছুই নেই এমন একটা নামের পুজোতেও কালীপুজোর আরোপ ঘটতে পারে।
কালীকে ভয়ঙ্করী রূপে প্রতিষ্ঠা করার জন্ম আরও যেসব মহাবিদ্যা স্বরূপিণী শক্তিতত্ত্বগুলি কালীর সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন, পণ্ডিতদের মতে তাঁরা হলেন ধূমাবতী, বগলামুখী আর ছিন্নমস্তা। ধূমাবতীর চেহারাটা ভাবুন। ঘষ্টানো গায়ের রঙ, খ্যাপা স্বভাব, ময়লা কাপড় পরা, বিবর্ণ কেশ, দাঁত নেইই প্রায়— যা দু-চারটি আছে, তা চেহারাটাকে আরও ভীতিজনক করে তুলেছে। ধূমাবতীর রথের ওপরে বসে আছে অলক্ষুণে কাক। হাতে কুলো আর লম্বিতস্তনী এই দেবীকে দেখে আমাদের চেনা কালীমূর্তির সঙ্গে তাঁর মিল নাও খুঁজে পেতে পারি, কিন্তু কোটরাগত চক্ষু এবং ‘শুষ্কমাংসাতিভৈরবা’ চামুণ্ডার সঙ্গে এই ধূমাবতীর অমিল খুব নেই। যাঁরা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অথবা ভাড়াটের উৎপাতে বিরক্ত হয়ে ‘প্রসিদ্ধ বগলামুখী কবচে’র খোঁজ করছেন, তাঁরা জানবেন ওই ধূমাবতীরই শরণ নিচ্ছেন।
ধূমাবতীর বড় খিদে। খিদের মুখে তিনি প্রিয়জনকে খেয়ে ফেলতেও কসুর করেন না। তবে দশমহাবিদ্যার মধ্যে যে মূর্তিটি কালীমায়ের ওপর আরোপিত হয়ে কালীকে সর্বনাশা করে তুলেছে, সেটি হল ছিন্নমস্তা। ছিন্নমস্তা নিজেই নিজের মাথা কেটে বাঁ হাতে ধরে আছেন। তাঁর লোলজিহ্বার ওপর ছিন্নশির গলা থেকে গরম রক্ত এসে পড়ছে। মুণ্ডমালা গলায় পরে ছিন্নমস্তা দিগম্বরী হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন—’বিপরীত রতে রত রতিকামোপরি’। তাঁর দুপাশে ডাকিনী আর বর্ণিনী— দুই সহচরী ছিন্নমস্তার গলা থেকে উচ্ছলিত রক্তধারা পান করছে— দেবী গলোচ্ছলরক্তধারাপানং প্রকুর্বতীম্।
সাধে কী আর নজরুল লিখেছিলেন— আমি ছিন্নমস্তা চণ্ডী। বোঝা যায়— সর্বনাশা শক্তির মধ্যে ছিন্নমস্তার সঙ্গে উপমা দেবার মতো কেউ নেই এই তিন ভুবনে। যিনি আছেন— তিনি হলেন বৌদ্ধ তন্ত্রের বজ্রযোগিনী। পণ্ডিতেরা বলেছেন — রূপকল্পনার ক্ষেত্রে ছিন্নমস্তা চণ্ডী আর বজ্রযোগিনী— দুজনেই দুজনের কাছে ঋণী। আমাদের চিন্তা অবশ্য অন্য। আমরা ভাবি—এই ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, তারা, উগ্রতারা— সকলেই কালীমায়ের সঙ্গে মিশে গিয়ে শামামায়ের ধারণাটাকেই এমন ভয়ঙ্করী করে তুলল যে, এঁদের সবারই প্রায় পুজো হয় কালীমূর্তির ওপরেই।