নতুনের কথা বলে লক্ষ্মী ছেলে

'লক্ষ্মীছেলে'র সংজ্ঞা কী? খুব ভাল পড়াশুনোয় যে সে নাকি খুব ধীরস্থির যে সে? লক্ষ্মীছেলেরা কি শুধুমাত্র নিজের বৃত্তকেই সমৃদ্ধ করে? বিপদে পড়লে মানুষ ঈশ্বরের শরণাপন্ন হন কিন্তু ঈশ্বর বিপদে পড়লে কী হয়! এমন নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে আগামী মাসেই মুক্তি পাবে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি 'লক্ষ্মীছেলে'। এই ছবির বিষয় চেনা ছকের বাইরে। ছবির প্রযোজনায় শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়। তিন বছর অপেক্ষার পর মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি ফলে দর্শক-প্রত্যাশা যে অনেক বেশি থাকবেই সেটা স্বাভাবিক। ছবির নেপথ্যের নানা কথা বললেন প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।  তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

আগামী মাসেই বড়পর্দায় মুক্তি পাবে বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘লক্ষ্মীছেলে’ (Lokkhi Chele)। এই ছবির পরিচালক, প্রযোজক, বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে কাস্টিং সবেতেই রয়েছে চমক। কারণ এই ছবির মাধ্যমে প্রায় তিনবছর পর বড়পর্দায় ফিরছেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Koushik Ganguly)। ছবির প্রযোজনায় নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রযোজনা সংস্থা ‘উইন্ডোজ’। ছবিটির মূল চরিত্রে রয়েছেন পরিচালক-পুত্র উজান গঙ্গোপাধ্যায়। করোনা অতিমারির ফলে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর এই ছবির মুক্তি নিয়ে বেশ আগ্রহী সিনেমাপ্রেমীরা। কারণ বেশ কতগুলো এক্স ফ্যাক্টর যেমন নন্দিতা, শিবপ্রসাদ জুটি। পরিচালক, প্রযোজক হিসেবে যথেষ্ট সফল তা বলার অপেক্ষা রাখে না আবার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় মানেই চেনা ছকের বাইরের কিছু। যার ছবি দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন মানুষ। বলিউডে এমন ঘটনা আগে ঘটলেও টলিউডে প্রথমবার একজন সফল পরিচালকের ছবির প্রযোজনায় নামছেন আর এক সফল পরিচালক। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র উজান গঙ্গোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই রসগোল্লা ছবির জন্য বেশ জনপ্রিয় এবং পরিচিত মুখ। ওই ছবিটিও উইন্ডোজেরই প্রযোজনায় তৈরি। তাঁর দ্বিতীয় ছবি এটা এবং সেই সঙ্গে পিতা-পুত্রের জুটিও এই ছবিতে প্রথমবার। কাজেই সবমিলিয়ে অনেকগুলো চমক দেবার জন্য  প্রস্তুত ‘লক্ষ্মীছেলে’।

ছবির পোস্টার প্রকাশিত হয়েছিল তিনবছর আগেই। কিন্তু অতিমারির কারণে এই ছবির মুক্তি পিছতে থাকে। পোস্টার দেখেই বোঝা যায় যে এই ছবি আমগল্প নিয়ে নয়। অন্যধারার ছোঁয়া রয়েছে। সত্যঘটনা  অবলম্বনে তৈরি ‘লক্ষ্মীছেলে’র (Lokkhi Chele) বিষয়বস্তু নিয়ে প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানালেন, আমাদের ক্ষেত্রে কুসংস্কারটা একটা বড় ব্যাপার। এই কুসংস্কার বহু মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সেটা ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় আকার নেয়। কখনও সেটা ধর্মীয় কুসংস্কার, কখনও সামাজিক কুসংস্কার। বিড়াল রাস্তা কাটলে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেব বা এক শালিক দেখব না। যেমন আমরা প্রায়শই কাগজে পড়ি বা অনেক সময় দেখতেও পাই কোনও একটি শিশুর চারটে হাত বা হয়তো চারটে পা নিয়ে জন্মাচ্ছে। এবার সেটা নিয়ে গোঁড়া কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে অনেকেই ভেবে নেবেন সে বুঝি দেবতার অংশ। ওটা যে শিশুটির একটা বড় ধরনের জন্মগত ত্রুটি এবং তার চিকিৎসার প্রয়োজন এটা কেউ ভাবেন না ফলে অনেকক্ষেত্রেই শিশুটির জীবনসংশয় ঘটে যেতে পারে। কিন্তু ওই ধর্মীয় কুসংস্কারে কেউ আঘাত করার সাহস দেখাতে পারবে না কারণ সমাজ তো তাকে দেবতা বানিয়ে দিয়েছে। সেখানে বিজ্ঞান আর কাজ করে না আমাদের অন্ধবিশ্বাস আমরা চাপিয়ে দিই। এমনটা খুব দেখা যায়, শোনা যায় এবং দিনে দিনে আমাদের দেশে এই কুসংস্কার বাড়ছে। গণেশ যে দুধ খায় না এটা এক শ্রেণির মানুষ বিশ্বাসই করবে না। চরণামৃত খেয়ে কারও অসুখ সারে না এই সত্য অনেকেই মানতে চাইবেন না। আমি একটা ধর্মকে বিশ্বাস করি এবং আমি একটা ধর্মীয় কুসংস্কারকে বিশ্বাস করি— দুটোর মধ্যে আকাশপাতাল তফাত। সেটার বিরুদ্ধে আজকের তরুণ প্রজন্মের লড়াইয়ের গল্প ‘লক্ষ্মীছেলে’। লক্ষ্মীছেলে আসলে তাঁরাই যাঁরা নতুনের কথা বলে, সমাজে কুসংস্কারের জগদ্দল পাথর উপড়ে নতুন হাওয়া নিয়ে আসে।
প্রযোজনায় যেখানে শিবপ্রসাদ, নন্দিতা সেখানে ছবির গল্প বা ভাবনা, চিত্রনাট্য তাঁদেরই হবে— কিন্তু না সেই ভুল ভাঙালেন প্রযোজক— নিজেই বললেন, ছবির গল্প নির্বাচনে আমাদের ভূমিকা অবশ্যই ছিল। কৌশিকদা  চার-পাঁচটা গল্প শুনিয়েছিলেন।  আমাদের এই গল্পটা ভাল লাগে কিন্তু ভাবনা, চিত্রনাট্য সবটাই সম্পূর্ণ পরিচালকের। আমাদের কাছে এটা খুব বড় একটা প্রাপ্তি। আমরা এতদিন নিজেরা সিনেমা পরিচালনার পর ‘উইন্ডোজ’-এর মতো এমন একটা প্ল্যাটফর্ম গড়েছিলাম এই উদ্দেশ্যে যেখানে নতুন প্রতিভারা সুযোগ পাবে। তা সে নতুন পরিচালক হোক বা অভিনেতা-অভিনেত্রী বা সুরকার, সংগীতশিল্পী। সাধারণত ‘উইন্ডোজ’ এতদিন তাই করে আসছিল। কিন্তু কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিটা একটা ব্যাতিক্রমী ঘটনা। আমার মনে হয় এই প্রথম কোনও একজন প্রতিষ্ঠিত পরিচালক আর একজন সফল প্রতিষ্ঠিত পরিচালকের ছবি প্রযোজনা করছেন। এটা পশ্চিমবাংলায় সচরাচর শোনা যায়নি।। বলিউডে এমন আকছার ঘটে। কোথাও আমার মনে হয়েছিল এমন একটা মেলবন্ধন দরকার কারণ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দক্ষ পরিচালক, জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। তাঁর মতো একজন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করাটা একটা আলাদা অভিজ্ঞতা। আর তাঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর কিছু শিখলামও কারণ শেখার কোনও শেষ হয় না।

আরও পড়ুন: সুস্মিতার সঙ্গে ডেটে ললিত

নন্দিতা, শিবপ্রসাদের ছবিও নতুনদেরই কথা বলে তাই এখানেও রয়েছে একঝাঁক নতুন তরুণতুর্কি। এই ছবিতে কাজ করেছেন তিনটে নতুন ছেলেমেয়ে। তাঁরা আজকের যুবসমাজের প্রতিনিধি, যাঁদের ভয়ডর বলে কিছু নেই, বুক চিতিয়ে এগিয়ে এসছে সমাজকে নতুন দিন দেখাতে। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র উজান, পুরব আচার্য (শ্রীকান্ত আচার্যর পুত্র) এবং ঋত্বিকা পাল। এ-ছাড়া রয়েছেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, ইন্দ্রাশীষ এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে দেখা যাবে বাবুল সুপ্রিয়কে। কাস্টিং-এর ক্ষেত্রে আলোচনা হলেও মূলবাছাই কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের। সুরকার প্রবুদ্ধ। প্রচলিত শিল্পীরাই গান গেয়েছেন। এই ছবির একটা প্রোমোশনাল গান গেয়েছে লক্ষ্মীছাড়া ব্যান্ড।

এতদিন দেরি কেন লক্ষ্মীছেলের (Lokkhi Chele) বড়পর্দায় আসতে প্রশ্নের উত্তরে শিবপ্রসাদ জানালেন, ২০১৯ থেকে প্রায় যেভাবে বেলাশুরু মুক্তির  অপেক্ষায় ছিল সেইভাবেই ‘লক্ষ্মীছেলে’ও অপেক্ষাতেই ছিল অতিমারির কারণে রিলিজ করা যায়নি। ‘লক্ষ্মীছেলে’র রিলিজ ডেট ছিল ২০২০-র জানুয়ারি মাসে।  ওই সময় উইন্ডোজ-এর আর একটি ছবি মুক্তি পায় ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ যেটা কিছুদিন চলার পর সিনেমা-হলই বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ওটিটিতে চলে সেই ছবি। এরপর ‘বাবা ও বেবি’ মুক্তি পায় তারপর এ-বছর ‘বেলাশুরু’ এবং অবশেষে ‘লক্ষ্মীছেলে’ মুক্তি পাবে।
ছবিটি নিয়ে আশাবাদী প্রযোজক। সব ভাল তার শেষ ভাল যার। অতিমারি পেরিয়ে শিবু-নন্দিতা এবং কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ত্রয়ীর জাদু কেমন চলে সেটাই বলবে ‘লক্ষ্মীছেলে’।

Latest article