গত বছর সেপ্টেম্বরে ছবির কথা ঘোষণা করেছিলেন সপ্তাশ্ব এবং পরমব্রত। এই বছর সরস্বতী পুজোয় মুক্তি পেয়েছিল টিজার। আগামী ৪ নভেম্বর মুক্তি পেতে চলেছে পরমব্রত-শুভশ্রী-বনি সেনগুপ্ত অভিনীত ছবি ‘ডাঃ বক্সী’ (Doctor Bakshi)। ভীষণই প্রাসঙ্গিক এক বিষয়কে সিনেমায় তুলে ধরতে চলেছেন পরিচালক। হামেশাই টিভির পর্দায় বা খবরের কাগজের পাতায় আমরা চিকিৎসক- রোগী বা রোগীর পরিবারের দ্বন্দ, হেনস্তা নিয়ে খবর দেখে থাকি। জল গড়ায় আইন-আদালত অবধি। এমনকী সরকারি হস্তক্ষেপও হামেশাই হয়। সব মিলিয়ে শুধু যে চিকিৎসক তা নয় চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপরেই সাধারণ মানুষের বিশ্বাস নিয়ে ইদানীং বড় প্রশ্নচিহ্ন। বিদায় নিয়েছে শ্রদ্ধা, জন্মেছে ভয়। এই বিষয়গুলি মাথায় রেখেই ছবির ভাবনা ভেবেছিলেন পরিচালক সপ্তাশ্ব বসু। তবে শুধু এটুকুই নয়, একই সঙ্গে রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরা থাকবে পুরো কাহিনি।
টিজার দেখেই তৈরি হয়েছিল উৎসাহ। শুরুতেই শোনা গিয়েছিল ডাঃ বক্সী অর্থাৎ পরমব্রতর কণ্ঠে গীতার প্রবচন। ষড়রিপু নিয়ে যে উক্তি গীতায় রয়েছে তা ইদানীং বেশিরভাগই বিস্মৃত হয়েছেন। সে কথা মনে করিয়েই তিনি বলেন, গীতায় লেখা থাকলেও আসলে মানুষ এর মর্মার্থই বোঝেনি সেভাবে। এ কারণেই ডাক্তারির মতো পেশা নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা মানুষের মনে তৈরি হয়েছে সেই দায়িত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই সংশ্লিষ্ট পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের। একাংশের তীব্র লোভই চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ‘কারবার’ বানিয়ে তুলেছে! আর সেই ধারণাকে নস্যাৎ করতেই আগমন ‘ডাঃ বক্সী’র। সপ্তাশ্বর আগের ছবি ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ তে ডাঃ বক্সী’ (Doctor Bakshi) চরিত্রটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। সেই চরিত্রকেই এ ছবিতে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন পরিচালক।
লড়াই যখন নিজের মানুষদের সঙ্গে হয় তা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এও গীতারই উক্তি! সম পেশার মানুষদের সঙ্গে লড়তে গিয়ে কঠিন ও কোণঠাসা হতে যেমন হয়েছে তেমনই হতে হয়েছে নানা বিপদের সম্মুখীন। কারণ ডাঃ বক্সীর কাছে তাঁর পেশা কারবার নয়, মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি পালনও। মানুষের বিশ্বাস-ভরসাকে মান্যতা দেওয়ার ব্রত। তাদের অসহায়তার আশ্বাস হওয়া। কিন্তু এই করতে গিয়েই তার যে অভিজ্ঞতা হয় তা থ্রিলারের চেয়ে কিছু কম নয়!
আরও পড়ুন-ফের একাধিক স্কচ অ্যাওয়ার্ড পেল রাজ্য
তবে পরমব্রতর পাশাপাশি আরও যে দুই অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন, তাঁদেরও বেশ ভিন্নধর্মী চরিত্রে দেখা যাবে ‘ডাঃ বক্সী’তে (Doctor Bakshi)। শুভশ্রী আছেন এক ট্রাভেল ব্লগারের ভূমিকায়। চরিত্রের নাম মৃণালিনী। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে খুব পপুলার, প্রচুর ফলোয়ার তার। আচমকা এক খুনের সঙ্গে জড়িয়ে যায় সে। এই ঘটনা কি আসলে কোনও চিকিৎসা সংক্রান্ত অপরাধ? কোন বড় চক্র কি জড়িয়ে এর সঙ্গে? ডাঃ বক্সী কি তাকে এর থেকে উদ্ধার করতে পারবে? এই নিয়ে পরতে পরতে সাসপেন্স তৈরি হবে। পরিচালক জানিয়েছেন, শুভশ্রীকে এই ধরনের চরিত্রে আগে দেখা যায়নি। প্রচুর শেডস আছে ওর চরিত্রটিতে। আসলে একটি হেরিটেজ হোটেলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান উপলক্ষে যায় মৃণালিনী। নিজের কাজ ও নিজের সঙ্গে একা একটু সময় কাটানোর জন্য যায় সে। কিন্তু কাজে ব্যস্ত থাকাকালীনই খুনটি ঘটে এবং জড়িয়ে যায় সে।
এই প্রথম ভিলেনের ভূমিকায় বড়পর্দায় অভিনয় করেছেন বনি সেনগুপ্ত। এক জেল ফেরত আসামির চরিত্রে আছেন তিনি। চরিত্রের নাম আদিত্য। উৎসবে অংশ নিতে আদিত্যও যায় ওই হোটেলে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফের সেও জড়িয়ে যায় একই ঘটনায়। আছেন অভিনেত্রী মাহি কর, এক শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পীর ভূমিকায়। নাম শ্রদ্ধা। উৎসবের অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে সেও। এছাড়াও আছেন অভিনেতা সৌম্যজিৎ মজমদার, রাহুল রায়। সব মিলিয়ে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হয়। এখানেই ডাঃ বক্সীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চরিত্রে শান্ত, স্তিতধী। ঠান্ডা মাথায় নিজের মেডিক্যাল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে তিনি জট ছাড়িয়ে সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেন। এইভাবেই চিকিৎসা কেলেঙ্কারির এক বড় রহস্য উন্মোচিত হয়। তবে কাজটি করতে গিয়ে তিনি নিজেও সব সময় যে নৈতিকতার পথে থাকতে পেরেছেন তা নয়। কিন্তু প্রশ্ন যেখানে এক বড় অপরাধ উন্মোচনের সেখানে তাঁর পথের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে লক্ষ্য! ছবিতে প্রতিটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে ঘনীভূত হয়েছে রহস্য। তাই আদতে ছবিটি হয়ে উঠেছে একটি মেডিক্যাল থ্রিলার। পুরো ছবি জুড়ে সারাক্ষণই কাজ করবে এক টেনশন।
ছবির শ্যুটিং হয়েছে উত্তরবঙ্গ, মুর্শিদাবাদ, কলকাতার শহরতলি অঞ্চলে। চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন অর্ণব ভৌমিক এবং শুভাশিস গুহ। সংগীত পরিচালনায় অরিন্দম।