মৌসুমি দাস পাত্র, নদিয়া: শীতকালে আগের মতো আর মেলে না সুগন্ধী খেজুরগুড়। কমে গিয়েছে খেজুরগাছের সংখ্যা। পাশাপাশি কমছে রসের মান ও পরিমাণ। এখন খেজুর রস ও গুড়ের চাহিদা খুব বেশি থাকায় চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে গুড়ে মেশানো হচ্ছে চিনি। ফলে গুড়ের মান কমতে শুরু করেছে। খেজুরগুড়ে লাল রঙ আনতে চিনি পুড়িয়েও ব্যবহার করা হচ্ছে। আগের মতো স্বাদও তাই আর মিলছে না।
আরও পড়ুন-জন্মভিটেয় সমাহিত উস্তাদ, রাষ্ট্রীয় সম্মানে বিদায়
এই অবস্থায় খেজুরগুড়ে গন্ধ, স্বাদ বজায় রাখতে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক প্রশাসন। আলোচনাও শুরু হয়েছে এ নিয়ে। কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের মাজদিয়ায় বহু পুরনো ও বিখ্যাত খেজুরগুড়ের হাট বসে। গোটা ব্লকে শিউলি থেকে গুড় ব্যবসায়ীর সংখ্যা কয়েক হাজার। শিউলিদের অধিকাংশই মাজদিয়ার গুড়ের হাটে তাঁদের গুড় নিয়ে আসেন বিক্রির উদ্দেশ্যে। এ বছর আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা পড়া ও ভাল রস পেতে শিউলিদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে একটা ভাল খেজুরগাছ থেকে চারবার পর্যন্ত রস নেওয়া যায়। তারপর গাছকে ক’দিন বিশ্রাম দিতে হয় রসে শর্করার পরিমাণ বাড়ার জন্য। প্রতি গাছ থেকে গড়ে রোজ ৭ লিটার মতো রস পাওয়া যায়। তা থেকে ১০ লিটার রস জ্বাল দিয়ে ১ কেজি মতো গুড় হয়। এর সঙ্গে আছে জ্বালানি খরচ। তাই ভাল গুড়ের জন্য ভাল দাম দিতে হয়। ১ কেজি খাঁটি খেজুরগুড়ের দাম ২৫০ টাকার নিচে কোনওভাবেই হয় না।
আরও পড়ুন-দুই মামলা, সজোরে দুই ধাক্কা দুই বিচারপতিকে
কিন্তু বাজারে খেজুরগুড় ১০০-১২০ টাকা কেজি দরেও পাওয়া যায়। গেদে মাঝেরপাড়ার গুড় ব্যবসায়ী বিপ্লব মণ্ডল বলেন, ‘ভাল গুড়ের পাইকারি দাম ২৮০-৩০০ টাকা পড়ে যায়।’ আদিত্যপুরের গুড়চাষি নেপাল বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা বাড়ি থেকে ঝোলা গুড় ১৫০ টাকা, দানা গুড় ২০০ টাকা ও পাটালি ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। শ্রমের দাম নিই না বলেই ভাল গুড় এত কমে দিতে পারছি। ভাল গুড় কোনওভাবে এর কমে দেওয়া যায় না।’ এ বিষয়ে বিডিও সৌগত কুমার বলেন, ‘গুড়ের মান নিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরই ল্যাবে টেস্টিংয়ের ব্যবস্থা করার কথা আলোচনা হয়েছে পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসন মিলে। গুড়চাষিরা যাতে উপযুক্ত দাম পান, তা দেখার পাশাপাশি ল্যাবে টেস্টিংয়ের মাধ্যমে গুড়ের মান ধরে রাখা যাবে।’