প্রতিবেদন : সময়ের সঙ্গে বদলে গিয়েছে ভারতীয় ফুটবলের ক্যালেন্ডার। এখন আর পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ফুটবলার ও অধিনায়ক ঘোষণার মধ্যে দিয়ে মরশুম শুরু হয় না। চরিত্র বদলে গিয়েছে ময়দানের বারপুজোর। তবে ব্যতিক্রম মোহনবাগান। এবার নববর্ষের দিন সবজু-মেরুন সভ্য সমর্থকদের উৎসাহ, উদ্দীপনায় আলাদা মাত্রা এনে দেয় দেশের সেরা টুর্নামেন্টে ক্লাবের অবিশ্বাস্য সাফল্য। সদ্য জেতা জোড়া ভারতসেরার খেতাব আইএসএল লিগ-শিল্ড ও কাপ বারপুজোর দিন ক্লাবে শোভা পেল। মঙ্গলবার সকাল থেকেই দর্শক, সমর্থকরা ক্লাব লনে ভিড় করে আইএসএলে ঐতিহাসিক দ্বিমুকুট জয় উপভোগ করলেন। সামনেই আবার ক্লাবের নির্বাচন। শাসক গোষ্ঠী তাদের একাধিক কাজের খতিয়ান তুলে ধরার সুযোগটাও নববর্ষের মঞ্চে কাজে লাগালেন।
আরও পড়ুন-সামশেরগঞ্জে বাবা-ছেলে খুনে গ্রেফতার দুই দুষ্কৃতী
অমর একাদশের মূর্তি ছোট লনের যেখানে প্রথমে ছিল, সেখানেই তিনটি ট্রফি রাখা হয়েছিল। লিগ-শিল্ড ও আইএসএল কাপের পাশে ছিল এবার কলকাতা হকি লিগ চ্যাম্পিয়নের ট্রফিও। স্মারক হিসেবে তা ক্যামেরাবন্দি করে রাখলেন সমর্থকরা। ট্রফি ঘিরে দিনভর উৎসবের পরিবেশ গঙ্গাপাড়ের ক্লাবে। ট্রফির বাগানে উৎসবের জোয়ার দেখে পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছিল সবুজ-মেরুনের তিন ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ও মানস ভট্টাচার্যের। সুব্রত বলছিলেন, ‘‘আমাদের সময়ে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র ছিল। এখন ফুটবল এবং ফুটবলারদের মান পড়েছে। তবে নববর্ষের সকালে উৎসাহটা কম বেশি প্রায় একইরকম রয়েছে।’’ প্রসূনের কথায়, ‘‘আমরা বাড়ির থেকেও মোহনবাগান ক্লাবে বেশি নিরাপদ ছিলাম। সমর্থকদের ভালবাসা আর ধীরেন দে-র অভিভাবকত্বই আমাদের আত্মবিশ্বাস দিত। ভাল লাগছে এখন ফুটবলে কর্পোরেট এলেও মাঠে মোহনবাগানের দাপট বজায় রয়েছে।’’ মানস বলছিলেন, ‘‘পয়লা বৈশাখের সকালের অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে। ধীরেনদা গরদের ধুতি-পাঞ্জাবি পরে ক্লাবে আসতেন। নিজের পকেট থেকে রুপোর কয়েন বের করে ফুটবলারদের দিতেন।’’
ফুটবল, হকিতে সাফল্য হোক বা নির্বাচনের আগে বিদায়ী কমিটির একাধিক সফল কর্মকাণ্ড, নববর্ষের মঞ্চে উচ্ছ্বাস কর্তাদেরও। সহসভাপতি কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মোহনবাগান মানেই ট্রফির বাগান। বাকিরা শুধু দেখবে আর জ্বলবে। এই সাফল্যের জন্য ধন্যবাদ জানাব দু’জনকে। একজন টুটু বোস। দীর্ঘদিন উনি ক্লাব চালিয়েছেন। আর একজন অবশ্যই সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। ফুটবল এখন যে জায়গায় গিয়েছে, সেখানে বড় কর্পোরেট হাউস দরকার। এই জায়গায় দুর্দান্ত কাজ করছেন মিস্টার গোয়েঙ্কা। প্রথমে ‘এটিকে’ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। আমাদের এই কমিটি প্রথম বৈঠকেই একটি প্রস্তাব নিয়েছিল। গোয়েঙ্কাকে বুঝিয়েছিলাম, ক্লাবের নামের আগে থেকে কেন ‘এটিকে’ সরাতে হবে। মিস্টার গোয়েঙ্কা সেটা বুঝেছিলেন এবং সমর্থকদের আবেগকে গুরুত্ব দিয়েই একজন মোহনবাগানি হিসেবে উনি একাত্ম হয়েছেন ক্লাবের সঙ্গে।’’
সচিব দেবাশিস দত্তর সঙ্গে মোহনবাগান ক্লাবের বারপুজোয় বসেছিলেন এবারের আইএসএলে নজরকাড়া তরুণ বাঙালি ডিফেন্ডার দীপেন্দু বিশ্বাস। সঙ্গী হয়েছিলেন দুই প্রাক্তনী সুব্রত ও প্রসূন। দেবাশিস বলেন, ‘‘মোহনবাগান যা করেছে এই তিন বছরে, তা সম্পূর্ণ এই কমিটির। কোনও একজনের নয়। আজ আমরা শপথ নিচ্ছি, পরের মরশুমেও এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে। সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে চুক্তির সময়ই আমি বলেছিলাম। মোহনবাগান ১৯১১ থেকেই ভারতসেরা ছিলই। ক্লাবকে এবার এশিয়া সেরা করতে হবে। তাই এএফসি টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে আমাদের এগোতে হবে।’’ বারপুজোয় এসেছিলেন প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বোস। যিনি আসন্ন নির্বাচনে ক্লাবের প্রধান বিরোধী মুখ। তিনি বলেন, ‘‘ফুটবল দেখছেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। হকির সাফল্য ধরে রাখতে হবে। তবে ক্রিকেট, টেনিস-সহ অন্যান্য খেলাগুলোর দিকে নজর দেওয়া উচিত।’’
মোহনবাগান-রত্ন করুণাশঙ্কর ভট্টাচার্যের লেখা বই প্রকাশিত হল। ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। উৎসবমুখর বাগানে গান গাইলেন ঋষি চক্রবর্তী। ছিল দেদার খাওয়া ও গল্পে-গানে আড্ডাও।