সংবাদদাতা, নদিয়া : পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচের নিরিখে চলতি সপ্তাহে নদিয়া জেলা রাজ্যে এক নন্বর স্থান দখল করল। চলতি সপ্তাহে ১৯৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার মধ্যে ১৩৭.০৬ কোটি টাকা খরচ করেছে জেলা। সেক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ টাকা খরচ করা হয়েছে। এর পরেই থাকা কোচবিহার জেলা ৬৯ শতাংশ টাকা খরচ করেছে। প্রসঙ্গত, আড়াই মাস আগেও নদিয়া জেলা ছিল ১৯তম স্থানে। এরপরই জেলা প্রশাসনিক কর্তারা ক্রমাগত পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে আলোচনা ও চাপের কৌশল নেওয়ায় এই পারফরম্যান্স সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিছু দিন আগেই পারফরম্যান্সের নিরিখে তিন ধাপে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ১২০ জন কর্মীকে বদলি করা হয়।
আরও পড়ুন-চলন্ত ট্রেনে আগুন, আতঙ্ক
পাশাপাশি পিছিয়ে থাকা ৫০টি পঞ্চায়েতকে নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করে কড়া হুঁশিয়ারি দেন ক্ষুব্ধ জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ। মিটিংগুলিতে জেলাশাসক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জিলা পরিষদ) অনুপ দত্ত, ডিপিআরডিও দীপঙ্কর দাস-সহ একাধিক প্রশাসনিক কর্তা। প্রতিটি পঞ্চায়েত ধরে ধরে পর্যালোচনা হয়। সেখানে যে পঞ্চায়েতে কোটি টাকার উপর পড়ে আছে তার কাজ কী হবে বা যে পঞ্চায়েতে ১০ লক্ষ টাকা পড়ে আছে তার কাজই বা কী হবে সেই পথনির্দেশ দেন জেলাশাসক। এর পরও কোনওভাবে উন্নয়ন না হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। জেলায় মোট ১৮৫টির মধ্যে ৫০টি পঞ্চায়েত বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে যায়। সবথেকে বেশি পিছিয়ে ছিল কালীগঞ্জ ব্লক। এই ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েত পিছিয়ে যায়। এর পরেই করিমপুর ২ ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েত পিছিয়ে যায়। পিছিয়ে পড়ে করিমপুর ১, চাপড়া ও চাকদহ ব্লকের ৫টি করে মোট ১৫টি পঞ্চায়েত। এছাড়াও কৃষ্ণনগর ২ ও শান্তিপুর ব্লকের ৩টি করে এবং রানাঘাট ১ ও ২ ব্লকের দুটি, কৃষ্ণগঞ্জ, কল্যাণী ও হরিণঘাটা ব্লকের দুটি করে পঞ্চায়েত পিছিয়ে যায়। এই পঞ্চায়েতগুলি পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচ করতে পারেনি। কোনও কোনও পঞ্চায়েত আবার স্কিম করতে পারেনি। কেউ জিপিএমএস করতে পারেনি। এগুলিতে টেন্ডারও ঠিকঠাক হচ্ছিল না। করিমপুর ১ পঞ্চায়েতে ১ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা পড়ে ছিল। হিংনাড়া পঞ্চায়েতে প্রায় দেড় কোটি টাকা পড়ে থাকে। এই ৫০টি পঞ্চায়েতে বেশ কিছু দিন ধরে প্রায় ২০ কোটি টাকা পড়ে ছিল।মানুষ বিভিন্ন কাজ করাতে এসে ফিরে যাচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবেই সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা পেতে সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছিল। উন্নয়নের কাজ কোনওভাবে ব্যাহত হলে ও সাধারণ মানুষের পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হলে জেলা প্রশাসন যে কঠোর হবে সেই বার্তা স্পষ্ট করে দেন জেলাসাসক। তাই কোন পঞ্চায়েতে কত টাকা পড়ে আছে শুনে নিয়ে জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ সেইমতো কাজের নির্দেশ দেন। সীমান্ত এলাকার একটি পঞ্চায়েতে এক সপ্তাহে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কোনও টাকা খরচ না হওয়ায় জেলাশাসক তাদের প্রতিদিন ৭৫ হাজার টাকা খরচের নির্দেশ দেন। এর পরই পরিশ্রম এবং চিন্তাভাবনার ফসল হিসাবে সেরার স্থানে পৌঁছে যায় নদিয়া জেলা। এ প্রসঙ্গে জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ বলেন, পঞ্চায়েত নিয়ে মিটিং ও আলোচনা হয়েছে। শক্ত হাতে পঞ্চায়েতগুলি যাতে কাজ করে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাতেই নদিয়া রাজ্যে প্রথম হয়েছে।