প্রতিবেদন: হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন করে আবার হিংসার আগুন ছড়াল বাংলাদেশে (Bangladesh)। এবার আনসার-বিদ্রোহ। বিক্ষোভ শুরু অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে শুরু হওয়া আনসার-বিদ্রোহের আঁচ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাতেও।
স্থায়ী চাকরির দাবিতে রবিবার ঢাকার সচিবালয় কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখে গ্রামরক্ষী বাহিনী আনসারের সদস্যরা। আটকে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের ৭ উপদেষ্টা-সহ পদস্থ সরকারি আধিকারিকরা। রাতের দিকে সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদের উপরেও চড়াও হয় উত্তেজিত আনসার বিক্ষোভকারীরা। আক্রমণ করে টহলরত সেনাবাহিনীর জওয়ানদেরও। ইট-পাটকেল ছোড়া হয় সেনাকে লক্ষ্য করে। জখম হন ৬ জন। ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায় আনসার সদস্যদের। এরপরেই শূন্যে ২৭ রাউন্ড গুলি চালায় সেনা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে সরকারের ৭ উপদেষ্টা এবং আটক আধিকারিকদের উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারও করা হয় কয়েকজন আনসার সদস্যকে। এই ঘটনার জেরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের সরকারি বাসভবন এবং সচিবালয়ের আশপাশে সোমবার থেকে সমস্তরকম সভাসমিতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে পুলিশ। বেশ কিছু জায়গায় আনসারের উচ্চপদে রদবদলও করা হয়েছে। সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সোমবার বিকেলে ভিডিপির মহাপরিচালক আনসার সদস্যদের দাবি মেনে নিয়েছেন। আসলে খারাপ সময় যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশের। রবিবার থেকে ফের বিক্ষোভ আর অশান্তি শুরু ওপারে। গ্রামরক্ষী বাহিনী আনসার ও বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলের সমর্থকদের সংঘর্ষে নতুন করে অশান্তি ছড়িয়েছে বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজধানী ঢাকায়। রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে ইতিমধ্যে আহতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- নেত্রীর নির্দেশে বক্তা ছাত্রীদল, টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রধান বক্তা দলনেত্রী, থাকবেন অভিষেকও
ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল? রবিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা নাগাদ ঢাকার সচিবালয়ের সামনে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত। পড়ুয়া এবং আনসার সদস্যেরা একে অপরের ওপর চড়াও হওয়ার পাশাপাশি শুরু হয় ইটবৃষ্টি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হস্টেল থেকে পড়ুয়ারা বেরিয়ে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হন। এদিন বেশ কিছুক্ষণ দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা চলার পর পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় পুলিশ। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হয় সেনাবাহিনীও। পুলিশি হস্তক্ষেপে পিছু হঠতে বাধ্য হয় আনসার সদস্যেরা। মূলত, চাকরি সরকারি করার দাবিতে গত দু’দিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছে আনসার। তাদের বক্তব্য, আশ্বাস দেওয়ার পরেও দাবি মানা হয়নি। রবিবার দুপুর থেকে আনসার সদস্যেরা সচিবালয়ের বিভিন্ন গেটের বাইরে বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু করেন। তাঁদের অবস্থানের ফলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। রাত যত বাড়তে থাকে, উত্তেজনা ততই বাড়তে থাকে। এরপরই খবর রটে যায় সচিবালয়ের মধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাদিম ইসলামকে আটকে রাখা হয়েছে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই দলে দলে পড়ুয়ারা বেরিয়ে আসেন। জড়ো হন সচিবালয়ের সামনে। তার পরই আনসার সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। রবিবারের পর সোমবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন জায়গায় থমথমে পরিস্থিতি।
আনসার, বাংলাদেশের (Bangladesh) বিভিন্ন গ্রামের প্রতিরক্ষায় কাজ করা আধা সরকারি বাহিনী। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ৫৪০ বাংলাদেশি টাকার চুক্তিতে কাজ করে থাকে তাঁরা। আনসার সদস্যরা চাইছেন তাঁদের চাকরি স্থায়ী করা হোক। এই দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন তাঁরা। হাসিনা সরকারের পতনের পর কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করেন মহম্মদ ইউনুস সেদিকে নজর থাকবে। এদিকে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সোমবার সনাতন ধর্মালম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মহম্মদ ইউনুস। তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা।