অসীম চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল : ‘আসানসোলে সংগঠন অত্যন্ত নড়বড়ে’। সংবাদমাধ্যমের কাছে এই সত্য ফাঁস করে দেওয়ায় দলের শীর্ষ মহলের বিষ নজরে পড়েছেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল (Agnimitra Paul)। তাঁর সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই আসানসোল লোকসভা আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে মুখ খোলায় তাঁকে শুধু রাজ্য নেতৃত্বই নয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও বিরাগভাজন হতে হয়েছে বলে সূত্রের মাধ্যমে জানা গিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই আসনে তাঁকে প্রার্থী করে বলির পাঁঠাই করা হয়েছে বলে প্রকারান্তরে সংবাদমাধ্যমের কাছে অনুযোগের সুরে বলতে শোনা যায় এই ফ্যাশন ডিজাইনারকে।
আরও পড়ুন – ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে একসাথে
কেন তিনি দলের এই দৈন্যদশার কথা সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বললেন, তা জানতে ইতিমধ্যেই তাঁকে দলের শীর্ষ মহলের প্রশ্নবাণের মুখেও পড়তে হয়েছে। এদিকে আসানসোলে তাঁর ছেড়ে আসা আসনে অগ্নিমিত্রা পলকে প্রার্থী করার পরই বালিগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় এক ট্যুইট বার্তায় লেখেন, ‘শত্রুঘ্ন সিনহার বিরুদ্ধে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবেন অগ্নিমিত্রা।’ বস্তুত বাবুলের সেই কথারই প্রতিধ্বিনি শোনা যায় খোদ অগ্নিমিত্রার কণ্ঠেও। শত্রুঘ্ন সিনহাকে ‘বহিরাগত’ বলার পর থেকেই আসানসোলের ছন্নছাড়া বিজেপি নেতৃত্বকে কার্যত সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা এড়িয়েই চলতে হচ্ছে।
কারণ প্রথমদিনই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এই বহিরাগত তত্বের প্রেক্ষিতে বিজেপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন তোলেন, আসানসোলে শত্রুঘ্ন সিনহা যদি বহিরাগত প্রার্থী হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কী? তিনিও তো গুজরাতের অধিবাসী, নাকি তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন বলে তাঁর ক্ষেত্রে সাত খুন মাফ! এই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে খোদ বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পলকেও। ফলে দ্বিমুখী অস্বস্তির কাঁটায় বিদ্ধ এখন আসানসোলের বিজেপি নেতৃত্ব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর এক নেতা বলেন, অগ্নিমিত্রা পলের (Agnimitra Paul) সমর্থনে আসানসোলে প্রচারে সম্ভবত কেন্দ্রের কোনও ওজনদার নেতাই আসবেন না।
এর কারণ হিসেবে কেন্দ্রের নেতাদের অজুহাত, দলের দুর্বলতার কথা সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করার শাস্তিস্বরূপ এখানে তেমন ওজনদার কাউকেই প্রচারের তালিকায় রাখা হয়নি। ওই বিক্ষুব্ধ নেতার দাবি, আসলে বিপুল ব্যবধানে পরাজয়ের আশঙ্কাতেই বিজেপির কোনও কেন্দ্রীয় নেতা আর নতুন করে মুখ পোড়াতে এই শহরে আসবেন না বলেই ঠিক করেছেন। অন্যদিকে রাজ্য নেতৃত্বের অপদার্থতার প্রতি একটা অন্যরকম বার্তা দিতেও কেন্দ্রীয় নেতারা এই এড়িয়ে যাওয়ার পন্থা অনুসরণ করেছেন বলে দাবি করেন ওই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর গেরুয়া নেতা।