আজ রবিবার ১২.৫৯ প্রয়াত অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrilla Sharma)। বয়স ছিল ২৪। হঠাৎ করেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল। অস্ত্রোপচারও করা হয়। এক সপ্তাহে একাধিক বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তাঁর। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দীর্ঘ লড়াই চালালেও ডাক্তারদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে আজ সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন-প্রয়াত ঐন্দ্রিলা, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
আগের দুবার হয়েছে, তৃতীয় বারও অসাধ্যসাধন করবেন ঐন্দ্রিলা? গত ১ নভেম্বর ফের হাসপাতালে Hospital) ভর্তি হওয়ার পর , অভিনেত্রীর কাছের মানুষ থেকে শুরু করে শুভানুধ্যায়ীরা প্রত্যেকেই এই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেছিল। চিকিৎসকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন যাতে হাসিখুশি লড়াকু মেয়েটাকে একটু সুস্থ করা যায়। গত সোমবার অর্থাৎ ১৪ নভেম্বর থেকে আচমকাই শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে অভিনেত্রীর। বুধবার বার বার হার্ট অ্যাটাক। ফের চিকিৎসকদের মরিয়া চেষ্টা, ভেন্টিলেশনের মাত্রা বাড়ানো থেকে অন্য হাসপাতালের নিউরোসার্জনের পরামর্শ। কিন্তু কিছুতেই কিছু করা গেল না।অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখা বহরমপুরের মেয়ে ‘মিষ্টি’ অচেতন অবস্থাতেও লড়াই চালিয়ে গেছেন। কিন্তু পুরো ইনিংস মাঠে থাকা হল না তাঁর, মাঝপথেই তাঁর স্বপ্নের সফরে দাঁড়ি টানতে বাধ্য হলেন।
আরও পড়ুন-প্রয়াত অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা, হার মানলেন কর্কট রোগের কাছে
অতীতে দু’বার ক্যানসারে (Cancer) আক্রান্ত হয়েও চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন ঐন্দ্রিলা। ১৯৯৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বহরমপুরে জন্ম। উচ্চবিত্ত পরিবারের কন্যা। মা, বাবা, দিদিকে নিয়ে তাঁর আপনজনের বৃত্ত। ২০১৫ সালে, ক্লাস ইলেভেনে পড়ার সময় প্রথম বার ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। কর্কট রোগ থাবা বসিয়ে ছিল তাঁর অস্থিমজ্জায়। লড়াই শুরু, কেমোথেরাপির ফলে মাথার চুল, ভ্রু প্রায় নেই, শরীরও খানিক বিকৃত। বাড়ির বাইরে বেরনোই কঠিন ছিল ঐন্দ্রিলার। শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশিই ছিল মানসিক টানাপড়েন আর অশান্তি। কিন্তু জীবনের সেই লড়াইয়ে জিতে গিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। সেবার যুদ্ধজয়ের হাসি হেসেছিলেন তিনি।২০১৭ সালে ছোট পর্দায় সেই জীবনে হাতেখড়ি হয়েছিল ঐন্দ্রিলার। ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকে শুরু হয়েছিল অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলার যাত্রা। এরপর জীবনে জুড়ে যায় আরেক জীবন, নাম সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury)। কিন্তু নির্মম ক্যানসার ফের তাঁকে টার্গেট করে ২০২১ সালে। সে বার ফুসফুসে টিউমার, তবু হার মানেনি মেয়েটা। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি চলতে থাকে তাঁর অভিনয়ের কাজ।চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জানতে পারেন, ফুসফুসে ১৫ সেন্টিমিটারের একটি টিউমার তৈরি হয়েছে। আবার শুরু বাঁচার লড়াই। তবে এবার সর্বক্ষণ পাশে ছিলেন সব্যসাচী। ২০২২ সালে আবার যুদ্ধজয় করে ছন্দে ফেরেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু রবিবারের দুপুরে মন খারাপের খবরটা সত্যিই কি প্রত্যাশিত ছিল? বিজ্ঞান যাই বলুক, প্রিয়জনেরা দুঃস্বপ্নেও এই দিনটাকে দেখতে চাননি। তাই ঐন্দ্রিলার প্রয়াণে স্যোশাল মিডিয়া থেকে সংবাদমাধ্যম – সর্বত্রই ‘ ফাইটার’ ঐন্দ্রিলার স্মৃতিচারণ!
এই মর্মে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোকপ্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন-প্রয়াত অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা, হার মানলেন কর্কট রোগের কাছে
পশ্চিমবঙ্গ সরকার
তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ
নবান্ন
৩২৫, শরৎ চ্যাটার্জি রোড
হাওড়া- ৭১১১০২
স্মারক সংখ্যা: ২১০/আইসিএ/এনবি
তারিখ: ২০/১১/২০২২
মুখ্যমন্ত্রীর শোকবার্তা
বিশিষ্ট অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার অকাল-প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ হাওড়ায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রতিশ্রুতিময়ী তরুণী এই অভিনেত্রীর বয়স হয়েছিল মাত্র ২৪ বছর।
তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি সিরিয়াল ঝুমুর, মহাপীঠ তারাপীঠ, জীবন জ্যোতি, জীবন কথা, জিয়নকাঠি ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে এবছর ‘অসাধারণ প্রত্যাবর্তন’ বিভাগে টেলি সম্মান অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে।
মারণরোগের বিরুদ্ধে অদম্য মনোবল নিয়ে তিনি যেভাবে লড়াই করেছেন তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর ট্রাজিক প্রয়াণ অভিনয় জগতের এক বড় ক্ষতি।
আমি ঐন্দ্রিলা শর্মার পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়