এয়ারফোর্স ওয়ান : ট্রাম্পের জন্য ‘ফ্রি’ উড়ন্ত উপহার কাতারের!

Must read

আশিস গুপ্ত: “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির নতুন সংজ্ঞা ঠিক করে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। কাতারের রাজপরিবার এখন তাঁকে একটি বোয়িং ৭৪৭-৮ বিলাসবহুল বিমান উপহার দিতে চাইছে—তাও আবার একদম ফ্রি! হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন—একটি ৪০০ মিলিয়ন ডলারের প্লেন, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, যেন এটি দুধ-চিনি ছাড়া চায়ের সঙ্গে আসা বিস্কুট! প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও (Donald Trump) অবশ্য দেরি না করে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা করলেন: প্রতিরক্ষা দফতর একটি পুরনো এয়ারফোর্স ওয়ানের বদলে একটি ঝকঝকে নতুন ৭৪৭ পাচ্ছে, তাও বিনামূল্যে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এই বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হতেই ট্রাম্পের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা। বলা হয়েছে, কাতারের কাছ থেকে এভাবে ‍‘উপহার’ নেওয়ার পিছনে স্পষ্ট অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। কারণ মার্কিন সংবিধানে বলা আছে, বিদেশি সরকারদের কাছ থেকে উপহার পেতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন দরকার। অনুমোদন ছাড়া কীভাবে এমন বহুমূল্য উপহার গ্রহণ করতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট? তবে সংবিধান যে ‍‘ট্রাম্পীয় ব্যতিক্রম’ বিষয়ে নীরব, সেটাও এখন স্পষ্ট। সিনেটর চাক শুমার ঠাট্টা করে এক্স-এ লিখেছেন: “আমেরিকা ফার্স্ট! কিন্তু এয়ারফোর্স ওয়ান: কাতার প্রেজেন্টস। একেবারে রিক্লাইন সিট, মিডল-ইস্ট ফ্লেভার, আর প্রেসিডেন্টের জন্য রোজ ওয়াটার!”
এদিকে বিতর্কের মুখে হোয়াইট হাউস বলেছে, সবকিছু আইন মেনেই হবে। অন্যদিকে বিতর্কের আঁচ পেতেই ইস্যু থেকে খানিক পাশ কাটিয়ে কাতার বলেছে, এখনও আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত কিছু হয়নি।
মজার ব্যাপার হল, ২০২০ সালের পর থেকেই ট্রাম্প বারবার দুঃখপ্রকাশ করে আসছেন যে নতুন এয়ারফোর্স ওয়ান তাঁর পছন্দমতো সময়ে আসছে না। বোয়িং তাঁকে জানিয়েছে, তাদের গাড়ি আর বিমান বানানোর মাঝে একটু সময় লেগে যায়। তাই ট্রাম্প এবার নিজেই সমাধান খুঁজে বের করলেন—যেখানে কাতার আছে, সেখানে বিলম্ব নেই। আরও আকর্ষণীয় তথ্য—এই বিমানটি পরে তার প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে থাকবে। অর্থাৎ, ভবিষ্যতের দর্শনার্থীরা শুধু ট্রাম্পের লেখা বই নয়, বরং একটি মধ্যপ্রাচ্যীয় উপহার পাওয়া ‘জাতীয় সম্পদ’-এর দর্শনও পাবেন। সুশাসন পর্যবেক্ষণ সংস্থা CREW বলছে, একজন বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকের আগে যখন সেই দেশের সরকার আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে এমন একজন প্রেসিডেন্টকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের উপহার দেয়, তখন সেটিকে আমাদের সংবিধানে সাধারণত ‘উপহার’ নয়, ‘ঘুষ’ বলেই উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তবে প্রশ্ন উঠছে—এটি কি একদম নিখুঁত ট্রাম্পীয় চালে চলা এক ধাপ্পাবাজি, নাকি বৈদেশিক কূটনৈতিক রকমারি? ট্রাম্পের মুখে যেহেতু ‘ফ্রি’ শব্দটি এসেছে, বোঝাই যাচ্ছে এয়ারফোর্স ওয়ান এখন ‘মেক আমেরিকা গিফটফুল এগেইন’ যুগে প্রবেশ করেছে। পরিশেষে, প্রশ্ন একটাই— কোনটা বেশি ওজনদার: প্লেনটি নাকি ট্রাম্পের আত্মপ্রশংসা?

আরও পড়ুন-পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেব, বার্তা বিএলএ-র

Latest article