আলিপুর চিড়িয়াখানা, অপরাজিত ১৫০

১৮৭৫-এর ২৪ সেপ্টেম্বর। প্রতিষ্ঠা হয় আলিপুর চিড়িয়াখানার। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে উদ্যোগ নিয়েছিল ব্রিটিশ প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে এগিয়ে এসেছিলেন দেশীয় রাজা ও ধনীদের অনেকেই। বহু বরণীয় মানুষের পদধূলি পড়েছে। দীর্ঘ ইতিহাস। বর্তমানে পালিত হচ্ছে সার্ধশতবর্ষ। ভারতের প্রাচীনতম এই জুলজিক্যাল পার্কে এখন প্রাণীর সংখ্যা প্রায় ২,০০০। বছরে আসেন মোটামুটি ৩৮ লক্ষ পর্যটক। বেড়েই চলেছে জনপ্রিয়তা। জনসমাগম ছাপিয়ে যাচ্ছে অতীতের রেকর্ড। ১৫০ অপরাজিত। আলিপুর চিড়িয়াখানা সাক্ষী হবে আরও অনেক ইতিহাসের। ঘুরে এসে লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

স্মৃতিমেদুর করে তোলে
খাঁচার ভিতর হেঁটে বেড়াচ্ছে বাঘ। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ভয় পাওয়া তো দূর, ডোরাকাটাকে দেখে আনন্দে আত্মহারা পাঁচ বছরের মেয়েটি। মা-বাবার হাত ধরে এসেছে সে। প্রথমবার। বাঘের হিংস্রতা সম্পর্কে ছিটেফোঁটা ধারণা নেই। বইয়ের পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায় ছবি দেখে চিনেছে। বাঘ দেখার পাশাপাশি একে একে দেখেছে সিংহ, হাতি, জেব্রা, জিরাফ, কুমির, ভালুক, বনমানুষ, সাপ, গন্ডার, জলহস্তী, বনবিড়াল, হরিণ, পাখি। ফলে সে দারুণ খুশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণী। এসেছে তারাও। ঘুরে দেখছে দেশ-বিদেশের পশুপাখি। খুশির ঝিলিক তাদের চোখেমুখেও। ঘুরছে। দেখছে। টুকটাক খাওয়া দাওয়া। নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব। দিব্য সময় কাটছে।
সদ্য বিবাহিতা বধূটি এসেছে স্বামীর সঙ্গে। আগেও এসেছে। তবে এবারের আসাটা একেবারেই অন্যরকম। নাতির হাত ধরে এসেছেন ঠাকুমা। এসেছেন প্রৌঢ় দম্পতি। ভাললাগা ছুঁয়ে গেছে তাঁদের মনেও। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে এসেছে স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। উদ্দেশ্য শিক্ষামূলক ভ্রমণ। অনেকেই এসেছেন সপরিবার অথবা সবান্ধব। অর্থাৎ নানা বয়সের, নানা ধরনের মানুষের ভিড় আলিপুর চিড়িয়াখানায়। শহর কলকাতার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এই চিড়িয়াখানা অবশ্যই অন্যতম। প্রতি বছর শীতের মরশুমে উপচে পড়ে ভিড়। তবে বছরের অন্য সময়েও বহু মানুষ আসেন। ঘুরে দেখেন। কলকাতায় বেড়াতে এসেছেন, অথচ চিড়িয়াখানা ঘোরেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অনেকেই একাধিকবার এসেছেন। কেউ কেউ বহুবার। বিভিন্ন বয়সে। কাউকে কাউকে জায়গাটা স্মৃতিমেদুর করে তোলে। দেখতে দেখতে ঐতিহাসিক এই উদ্যান, আলিপুর চিড়িয়াখানা, পেরিয়ে গেল ১৫০ বছর। সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে সার্ধশতবর্ষ। সেই উপলক্ষে, ২০২৪-এর ২৪ সেপ্টেম্বর আয়োজিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা প্রমুখ। জানা গেছে, ভারতের প্রাচীনতম এই জুলজিক্যাল পার্কে প্রাণীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২,০০০। নতুন প্রাণী প্রায়ই আনা হয়ে থাকে। বছরে মোটামুটি ৩৮ লক্ষ পর্যটক আসেন। ঘুরে দেখেন।

আরও পড়ুন-একই নম্বরের এপিক কার্ড একাধিক রাজ্যে, বাংলার ভোটার তালিকায় গুজরাত-হরিয়ানার ভোটার!

তোলা হয়েছিল চাঁদা
ছুঁয়ে দেখা যাক অতীতের পাতা। জানা যায়, উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ব্রিটিশ প্রশাসন কলকাতায় চিড়িয়াখানা স্থাপনের চিন্তাভাবনা শুরু করেন। তবে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে কেটে যায় আরও কয়েক বছর। ১৮৭৫ সালে স্যার রিচার্ড টেম্পল বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর থাকার সময় জিরাট ব্রিজের দুই পাশের বস্তি সরিয়ে চিড়িয়াখানার জন্য জায়গা করে দেওয়া হয়। চিড়িয়াখানার প্রাথমিক খরচের জোগান দিতে দু’লাখ টাকারও বেশি তোলা হয়েছিল চাঁদা। ১৮৭৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথমদিকে পরিচালন কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন জার্মান প্রযুক্তিবিদ কার্ল লুইস শোয়েন্ডলার এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানী জর্জ কিং। উনিশ শতকের প্রায় শুরু থেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে কলকাতা শহরে গড়ে উঠেছিল বিরল পশুপাখির একাধিক সংগ্রহ। তার মধ্যে একটি ছিল বড়লাট ওয়েলেসলির ব্যারাকপুরের বাগানবাড়িতে। আলিপুরের চিড়িয়াখানা শুরুর সময় সেখানে থেকে কিছু পশু স্থানান্তরিত করা হয়। তার মধ্যে ছিল লর্ড ক্লাইভের পোষ্য বলে খ্যাত অদ্বৈত নামের একটি কচ্ছপ। শোয়েন্ডলার নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে কিছু প্রাণী দিয়েছিলেন। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে রয়েছে একটি স্তম্ভও।
আসতেন নবাব
সেই সময় দেশীয় রাজা ও ধনীদের অনেকেই সংগ্রহ করতেন বিরল পশুপাখি। নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ মেটিয়াবুরুজে জীবজন্তুর বিশাল সংগ্রহ গড়ে তুলেছিলেন। পাশাপাশি আগ্রহী ছিলেন তাদের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণেও। জীবজন্তুদের প্রাকৃতিক পরিবেশের মতো উন্মুক্ত এনক্লোজার-এ রাখার ব্যবস্থাও সম্ভবত তিনিই প্রথম করেছিলেন। নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ মাঝেমধ্যেই চিড়িয়াখানায় আসতেন। তাঁর জাপানি কায়দার রিকশায় পশুশালা ঘুরতেন।
তিনি তাঁর ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা থেকে একটি ভারতীয় বাঘ, এক জোড়া মালয় দেশের বাঘ ও এক জোড়া চিতাবাঘ, দুটো বাঘিনি উপহার হিসেবে পশুশালায় পাঠিয়েছিলেন। নবাবের মৃত্যুর পর তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহের কিছু পশুর ঠাঁই হয়েছিল আলিপুর চিড়িয়াখানায়। তার মধ্যে ছিল জাভার বিরল প্রজাতির একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী গন্ডার। মার্বেল প্যালেসের রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক চিড়িয়াখানার পশুদের প্রথম আবাসগৃহ ‘মল্লিক হাউস’ তৈরিতে দান করেন।

আরও পড়ুন-১৬ মাস পর ব্রাজিলের দলে ফিরলেন নেইমার

চিড়িয়াখানার হেডবাবু
আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রথম সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন রামব্রহ্ম সান্যাল। তাঁর তত্ত্বাবধানে সংস্থার পরিচালন পদ্ধতি ও বদ্ধ প্রজনন-সহ বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষা বিশ্বের সম্ভ্রম আদায় করেছিল। তাঁকে ছাড়া চিড়িয়াখানার ইতিহাস রীতিমতো অসম্পূর্ণ। জানা যায়, জর্জ কিং তাঁর প্রাক্তন ছাত্র রামব্রহ্মকে চিড়িয়াখানায় কাজে নিযুক্ত করেন। ১৮৭৬-এর ২৪ জানুয়ারি। ১৮৭৭ সাল থেকে রামব্রহ্ম হেডবাবু হিসেবে কাজের দায়িত্ব পান। তিনি আলিপুর পশুশালার নামকরণ করেছিলেন ‘আলিপুর জীবনিবাস’। পশুপাখিদের বিজ্ঞানসম্মত নামের উল্লেখ থাকা দরকার, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। জীবজন্তুদের স্বাস্থ্য, অসুখবিসুখ, খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও খোঁজখবর রাখতেন। প্রতিদিন সকাল-বিকেল কর্মচারীদের নিয়ে পশুশালা ঘুরে দেখতেন। তাদের নিজের হাতে খাওয়াতেন। সাধ্যমতো অসুস্থ প্রাণীর চিকিৎসা করতেন। প্রয়োজনে পশুচিকিৎসককে দেখিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। অনেক সময় ছোটখাটো অপারেশন করতে হত চিড়িয়াখানার পশুপাখির। সেই ক্ষেত্রে তাঁর ডাক্তারি বিদ্যা কাজে লাগত। কোনও পশুর মৃত্যু হলে তার পোস্টমর্টেমে সাহায্য করতেন পশুচিকিৎসককে। কমিটির কাছে রিপোর্ট পাঠাতেন। ১৮৮০-র ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিনে দর্শকদের টানতে চিড়িয়াখানার ভিতরে ইলেকট্রিক ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রামব্রহ্ম ট্রেন চালানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন বার্ন কোম্পানিকে। পশুশালায় এই ছোট ট্রেন দেখার জন্য খুব ভিড় হয়েছিল। বাংলার ছোটলাট স্যার অ্যাশলে ইডেন স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন সেই দিন। চিড়িয়াখানায় টিকিট বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল হু হু করে। ১৮৮৩-’৮৪ সালের এক হিসাব বলছে, সারা বছরে ১,৮৮,৫৯৩ জন এসেছিলেন চিড়িয়াখানায়।
শিক্ষামূলক ভ্রমণের গন্তব্য
বহু বরণীয় মানুষের পদধূলি পড়েছে। ১৮৯৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর স্বামী বিবেকানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা ও স্বামী যোগানন্দ আলিপুর চিড়িয়াখানায় এসেছিলেন। চিড়িয়াখানার মনোরম পরিবেশ নাকি আনন্দ দিয়েছিল বিবেকানন্দকে। রামব্রহ্মের সঙ্গে বহু ভাবনার আদান-প্রদানও হয়েছিল তাঁর। সেই বছরেই ভারত সরকার রামব্রহ্মকে ‘রায়বাহাদুর’ খেতাব দেয়। ছোটদের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে শিক্ষামূলক ভ্রমণের গন্তব্যও হয়ে উঠেছিল চিড়িয়াখানা। শুরু থেকেই। পশুপাখির জাতি ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ছোটদের পরিচয়ের উদ্যোগ নিয়েছিলেন শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। কলকাতার অন্যতম দ্রষ্টব্য হিসেবে আলিপুর চিড়িয়াখানার উল্লেখ আছে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের প্রচার-পোস্টারেও। ফলে এ এক দীর্ঘ ইতিহাস। কলকাতার সঙ্গে একটু একটু করে বয়স বেড়েছে চিড়িয়াখানার। বয়স হয়েছে, তবে বাতিল হয়নি। বদল এসেছে অনেক। হয়েছে নতুন সংযোজন। সবকিছু নিয়েই আলিপুর চিড়িয়াখানা আনন্দ দিয়ে চলেছে বহু মানুষকে। আজও।
ব্যাটারি চালিত গাড়ি
খাঁচার ভিতর পশুপাখি। বাইরে মানুষ। এইভাবেই চলছিল এতদিন। তবে এবার বিশেষ ভাবে তৈরি গ্লাস এনক্লোজারে ঢুকতে হচ্ছে সাধারণ দর্শকদের। যেন খাঁচায় মানুষ আর পাখিরা মুক্ত। ২০২৪-এর ২৫ নভেম্বর, চিড়িয়াখানায় চালু হয়েছে এই বার্ডস উইংসে ওয়াক ইন ওয়ে। ৬০ মিটার লম্বা এবং প্রায় ৪ মিটার উঁচু কাচের তৈরি খাঁচা। খাঁচায় হেঁটে যেতে যেতে মুক্ত বিহঙ্গদের দেখা যাচ্ছে। দেশ-বিদেশের ১৪টি প্রজাতির পাখি আছে এনক্লোজারে। প্রায় দেড়শো পাখি রাখা হয়েছে। খুব কাছ থেকেই পাখির সঙ্গে তোলা যাচ্ছে সেলফিও। তাই এই কাঁচের খাঁচা দেখে খুশি হচ্ছেন অনেকেই। এই ওয়াক ইন এনক্লোজারের উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে অন স্পট অনলাইন টিকিটের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। বিশাল এলাকা জুড়ে চিড়িয়াখানা। পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখা অনেক মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাঁদের কথা ভেবে চালু হয়েছে বিশেষ ধরনের ব্যাটারি চালিত গাড়ি। মাথাপিছু খরচ ১০০ টাকা। একসঙ্গে ১৪ জন বসতে পারেন। আটজন যাত্রী হলেই গাড়ি চালানো হয়। এক ঘণ্টা আরামে ঘুরে দেখা যায়। এই পরিষেবা দেওয়া হয় সকাল সাড়ে ন’টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত। এমনিতে চিড়িয়াখানার প্রবেশমূল্য পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সিদের জন্য ২০ টাকা, পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে ৫০ টাকা। এখন চিড়িয়াখানা অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে ম্যাপ। নিষিদ্ধ করা হয়েছে পলিথিন ব্যাগ, বাদ্যযন্ত্র। ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ফ্লাইং ডিশ খেলাও নিষিদ্ধ।

আরও পড়ুন-গাড়ি ভাঙচুর ব্রাত্যর, বেধড়ক মার নিরাপত্তারক্ষীদের, আগুন শিক্ষাবন্ধু অফিসে, বামগুন্ডাদের হাতে আক্রান্ত শিক্ষামন্ত্রী

ঐতিহ্যবাহী তালিকায় স্থান
সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ বা ঐতিহ্যবাহী ভবনের তালিকায় স্থান পেয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানাকে ‘গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে কলকাতা পুরসভা। এর স্বীকৃতি হিসেবে চিড়িয়াখানার দরজায় ঐতিহ্যবাহী ভবনের স্মারক হিসাবে নীল ফলক বসানো হয়েছে। ২০২২ সালে প্রথম ব্লু প্লাক বসানো হয়েছিল জানবাজারে, রানি রাসমণির বাড়িতে। এছাড়াও, ভারতীয় জাদুঘর, রাইটার্স বিল্ডিং, জেনারেল পোস্ট অফিস এবং গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট-এর বিল্ডিংয়ে গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ নীল ফলক বসানো হয়েছিল।
গ্রন্থাগার সর্বসাধারণের জন্য
চিড়িয়াখানার ছিল একটি গ্রন্থাগার। যদিও সাধারণ দর্শক বা মানুষজন ব্যবহার করতে পারতেন না। এতদিনে সেটা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। চিড়িয়াখানার প্রথম সুপারিন্টেনডেন্টের হাতে লেখা চিঠি-সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও গ্রন্থাগারে থাকা প্রায় ১৪০০-রও বেশি দুষ্প্রাপ্য বই ডিজিটাল কপি করা হচ্ছে। এও জানা গেছে, এই গ্রন্থাগার যেমন সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনই চিড়িয়াখানার ওয়েবসাইটে গ্রন্থাগারে থাকা বিপুল পরিমাণ বইয়ের ডিজিটাল কপি আপলোড করা হবে। গ্রন্থাগারটি ‘স্যার যতীন্দ্রমোহন টেগোর কেসিআইই অফ ক্যালকাটা’ নামে নামাঙ্কিত৷ শুরুর সময়ে তিনি চিড়িয়াখানার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল, প্রাণীদের চিকিৎসা-সংক্রান্ত পৃথিবীর সমস্ত প্রয়োজনীয় বই এই গ্রন্থাগারে থাকবে। সেই উদ্দেশ্যে তিনি চিড়িয়াখানায় প্রচুর অর্থ দান করেন। সেই অর্থের সাহায্যে ১৮৯৮ সালে চিড়িয়াখানায় এই গ্রন্থাগার গড়ে তোলা হয়। চিড়িয়াখানার আরেক পৃষ্ঠপোষক স্যার জন এডগার এই গ্রন্থাগারের জন্য বইয়ের আলমারি দান করেন। প্রসঙ্গত, আলিপুর চিড়িয়াখানার ১৫০ বছর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হয়েছে একটি বই। এছাড়াও নিয়মিত প্রকাশিত হয় ‘জু নিউজ’ পত্রিকা। বিশেষ বিশেষ দিনকে সামনে রেখে নিয়মিত আয়োজিত হয় অনুষ্ঠান। যেমন, বিশ্ব সাপ দিবস, আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস, বিশ্ব সিংহ দিবস, বিশ্ব হাতি দিবস, বিশ্ব গণ্ডার দিবস। আলোচনা, আঁকা প্রতিযোগিতা, পোস্টার প্রতিযোগিতা, কুইজ ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে পালিত হয় ‘জু ফেস্টিভ্যাল’। বাগানটি সাজানো হয়েছে সুন্দরভাবে। ফোটে নানা রঙের ফুল। এইভাবেই চিড়িয়াখানাকে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছেন কর্তৃপক্ষ। মিলছে সুফলও। তাই তো বছর বছর বেড়েই চলেছে জনপ্রিয়তা। জনসমাগম ছাপিয়ে যাচ্ছে অতীতের রেকর্ড। ১৫০ অপরাজিত। আলিপুর চিড়িয়াখানা সাক্ষী হবে আরও অনেক ইতিহাসের।

Latest article