কুমিরনামা

চিড়িয়াখানা বা সংরক্ষণ কেন্দ্রে কুমির দেখেছেন বহু মানুষ। কিন্তু এই জলচর চতুষ্পদ প্রাণীটি সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা নেই অনেকের। জানেন কি, বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে কয়েকটি কুমির? কেউ বয়সের কারণে, কেউ দৈর্ঘ্যের কারণে। এছাড়াও কুমির নিয়ে আছে বেশকিছু রোমহর্ষক ঘটনা। সেইসব একত্রিত করে পাঠকের দরবারে হাজির করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

অনেক প্রজাতিই লুপ্তপ্রায়
কথায় বলে ‘জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ’। দুটিই হিংস্র প্রাণী। ভয়ঙ্কর। রাজ করে বেড়ায় নিজের নিজের এলাকায়। তবে বাঘ নিয়ে যত চর্চা হয়, ততটা হয় না কুমির নিয়ে। এরা একপ্রকার জলচর চতুষ্পদ প্রাণী। দেখা যায় আফ্রিকা, এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। বিষুবীয় অঞ্চলে থাকে। শীতল পরিবেশের প্রতি এরা সংবেদনশীল। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে ইওসিন যুগে এরা অন্যান্য ক্রোকোডিলিয়ান প্রজাতির থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল। ক্রোকোডাইলোমর্ফিয়ার অন্যান্য শাখার মতো এই শাখাটিও বিগত সাড়ে ২২ কোটি বছর ধরে নানা গণ-বিলুপ্তি সত্ত্বেও টিকে আছে। অবশ্য বর্তমানে বাসস্থানের সমস্যা ও বেআইনি শিকারের ফলে কুমিরের অনেক প্রজাতিই বিপন্ন বা লুপ্তপ্রায়। চিড়িয়াখানা বা সংরক্ষণাগারে কুমির দেখেছেন বহু মানুষ। কিন্তু তাদের সম্পর্কে খুব বেশি জানা নেই অনেকের। বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে কয়েকটি কুমির। সেইগুলোর উপর আলোকপাত করা যাক।

আরও পড়ুন-দেখবি যত ফুলবি তত

সবচেয়ে বয়স্ক কুমির
বিশ্বের প্রাচীনতম কুমির হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ‘হেনরি’। বয়স ১২৩ বছর। ৭০০ কেজি ওজন, ১৬ ফুট লম্বা এই কুমিরটি হিংস্র প্রকৃতির। ৬ সঙ্গিনী ও দশ হাজার বাচ্চা রয়েছে তার। মানুষখেকো এই কুমিরের নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত শিকারি হেনরি নিউম্যানের নামে। জানা যায়, হেনরির জন্ম বতসোয়ানার ওকাভাঙ্গো ডেল্টায়, যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। যেখানে ১৯০০ সালের ১৬ ডিসেম্বর কুমিরটির জন্ম। ভয়ঙ্কর দাঁত এবং বিশাল শরীরের জন্য বিখ্যাত হেনরি এখন বৃহত্তম জীবিত কুমির বলে মনে করা হয়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় একটি মিনিবাসের সমান।
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে বতসোয়ানার আদিবাসীদের কাছে এক আতঙ্ক ছিল এই কুমির। হেনরির যেখানে জন্ম হয়েছিল, তার কাছাকাছি এলাকায় এক আদিবাসী জাতির বাস ছিল। কানাঘুষো শোনা যায়, সেই এলাকায় গিয়ে অনেক শিশুকে খেয়ে ফেলেছিল হেনরি। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আদিবাসীরা তখনকার খ্যাতিমান শিকারি হেনরি নিউম্যানের সাহায্য চেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তাঁর নামেই কুমিরটির নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু হেনরি নিউম্যান কুমিরটিকে শিকার না করে আজীবনের জন্য বন্দি করে রেখেছিলেন। গত তিন দশক ধরে হেনরি দক্ষিণ আফ্রিকার স্কটবার্গের ক্রোকওয়ার্ল্ড কনজারভেশন সেন্টারে রয়েছে। আকার, বয়স এবং তার মানুষখেকো অতীত চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিদিন তাকে দেখার জন্য বহু মানুষ ভিড় জমান।
হেনরি নীল নদের কুমির। সাব-সাহারান আফ্রিকার ২৬টি দেশে এই প্রজাতির কুমির রয়েছে। হিংস্র প্রকৃতির জন্য পরিচিত এইসব কুমির প্রতি বছর শত শত মৃত্যুর জন্য দায়ী।
হেনরির গর্জন
সম্প্রতি প্রাণ হাতে নিয়ে হেনরিকে দেখতে গিয়েছিলেন কিংস অফ পেইনের কো-হোস্ট তথা বিখ্যাত টিভি পার্সোনালিটি রবার্ট আলেভাই। কাছে যেতেই তাঁকে তেড়ে আসে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক কুমিরটি। বয়সের ভারে যদিও নড়াচড়ার ক্ষমতা হারিয়েছে, কিন্তু গর্জন করার ক্ষমতাটা অতি মাত্রায় বেড়েছে হেনরির। গায়ের কাছে মানুষের গন্ধ পেতেই, কুমিরটির আচরণ পাল্টে যায়। হেনরিকে দেখে পিলে চমকে গিয়েছিল রবার্ট আলেভাইয়ের। মুহূর্তটি বন্দি করা হয়েছে ভিডিওয়। সেই ভিডিওটি সমাজ মাধ্যমে ঝড়ের বেগে ভাইরাল হয়েছে। কুমিরটিকে দেখে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে নেট নাগরিকদের। ভিডিওয় দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রোকওয়ার্ল্ড কনজারভেশন সেন্টারে একটি ঝিলের পাড়ে রোদ পোহাচ্ছিল হেনরি। সেখান থেকেই ভাইরাল হয়েছে এই ভয়ানক এবং বিপজ্জনক ভিডিও। আলেভাই নিজেই ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন। ইতিমধ্যে চল্লিশ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে আলেভাই জানিয়েছেন, হেনরিকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবন্ত কুমির বলে মনে করা হয়। খুব শীঘ্রই ১২৪ বছর বয়সে পা দেবে সে। হেনরির বিশাল আকার, তার ঐতিহাসিক তাৎপর্য তাকে অন্যান্য সরীসৃপদের মধ্যে অন্যতম করে তুলেছে। এই কারণেই, এতদিন তিনি হেনরিকে দেখার জন্য আগ্রহী ছিলেন। যখন প্রথম হেনরির সঙ্গে দেখা হয়, মুগ্ধও হয়েছিলেন, ভয়ও পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আলেভাই। এরই পাশাপাশি, কুমিরটিকে কাছ থেকে দেখতে দেওয়ার জন্য তিনি ক্রকওয়ার্ল্ড কনজারভেশন সেন্টারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হেনরির সঙ্গে দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতাটিকে তিনি ‘শ্বাসরুদ্ধকর’ বলে অভিহিত করেছেন।

আরও পড়ুন-জনসংযোগ, রোড শো, পথসভা

ক্যাসিয়াস নেই
হেনরি সবচেয়ে বয়স্ক কুমির হলেও, কিছুদিন আগে পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় কুমির ছিল অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী ১৮ ফুট লম্বা লবণাক্ত জলের ‘ক্যাসিয়াস’। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে উঠেছে তার নাম। দুঃখের খবর, সে আর নেই। সম্প্রতি কুমিরটি মারা গেছে। যে অভয়ারণ্যে বাস করত, সেখানকার কর্তৃপক্ষ কুমিরটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ধারণা করা হয়, ক্যাসিয়াসের বয়স হয়েছিল ১১০ বছরের বেশি।
মেরিনল্যান্ড মেলানেশিয়া ক্রোকোডাইল হ্যাবিট্যাট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই ক্যাসিয়াসের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছিল। অভয়ারণ্যের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অনেক বয়স হয়েছিল তার। মনে করা হয়, অন্যান্য বন্য কুমিরের তুলনায় ক্যাসিয়াস অনেক বেশি বছর বেঁচে ছিল।
অভয়ারণ্যের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্যাসিয়াস ১৯৮৭ সালে নর্দার্ন টেরিটরির কাছ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এই অভয়ারণ্যে আসে। ক্যাসিয়াস একটি লবণাক্ত জলের কুমির ছিল। ক্যাসিয়াসের মৃত্যুতে অভয়ারণ্যের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করে বলা হয়েছে, কুমিরটিকে গভীরভাবে মিস করা হবে। কিন্তু আমাদের ভালবাসা ও তার স্মৃতিতে আমাদের হৃদয়ে অটুট থাকবে। ২০১৩ সালে ফিলিপাইনের লোলং কুমিরের মৃত্যুর পর ক্যাসিয়াস সবচেয়ে বড় কুমিরের খেতাব পায়।
বিশ্বের বৃহত্তম কুমির লোলং
কুমির লোলংয়ের দৈর্ঘ্য ছিল ৬ দশমিক ১৭ মিটার। অর্থাৎ ২০ ফুট ৩ ইঞ্চি। সে ছিল লবণাক্ত জলের কুমির। তাকে ফিলিপাইনে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ধরা হয়েছিল। ২৩৭০ পাউন্ড বা ১০৭৫ কিলোগ্রাম ওজনের লোলং ছিল এখনও পর্যন্ত পরিমাপ করা বিশ্বের বৃহত্তম কুমির। মানুষ ও গবাদি পশুর উপর হামলা চালাত। সেই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে বুনাওয়ান, আগুসান দেল সুরে বন্দি করা হয়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার মৃত্যু হয়। আরও কয়েকটি বড় আকারের কুমির সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ব্রুটাস এবং গোমেক পাপুয়া
ব্রুটাস হল একটি ১৮ ফুটের নোনা জলের কুমির। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড নদীতে বাস করে। প্রায় ২০০০ পাউন্ড বা ৯০৭ কিলোগ্রাম ওজনের ব্রুটাস তার সামনের পা হারিয়ে ফেলে। হাঙরের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে তার এই অঙ্গহানি ঘটে। পর্যটকদের কাছে সে দারুণ জনপ্রিয়। প্রায়শই নদীতে ভ্রমণের সময় তাকে দেখা যায়। ব্রুটাসের উপস্থিতি এবং চিত্তাকর্ষক আকার তাকে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সুপরিচিত কুমিরের একজন করে তোলে।
গোমেক পাপুয়া ছিল নিউ গিনিতে বন্দি একটি ১৭ ফুটের লবণাক্ত জলের কুমির। ১৯০০ পাউন্ড বা ৮৬২ কিলোগ্রাম ওজনের গোমেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার সেন্ট অগাস্টিন অ্যালিগেটর ফার্ম জুলজিক্যাল পার্কে থাকত। তাকে দেখার জন্য উপচে পড়ত ভিড়। বহু বছর ধরেই বন্দিদশায় ছিল। ১৯৯৭ সালে তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন-৯ জনেও প্রথম পয়েন্ট ইস্টবেঙ্গলের

পাল্টা কামড় কুমিরকে
এবার কুমির সম্পর্কিত রোমহর্ষক ঘটনার উল্লেখ করা যাক। ধরুন, একটি কুমির আপনাকে আক্রমণ করেছে। আপনি কী করবেন? প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করবেন। পালাবেন। এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু যদি কুমিরের কবল থেকে রেহাই পেতে উল্টে কুমিরটিকেই কামড়ে দেন, কেমন হবে? কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার এক কৃষকের বেলায় এমনটাই ঘটেছে। ওই কৃষকের নাম ডেভেরক্স। তিনি জানিয়েছেন, একটা কুমির তাঁকে আক্রমণ করে। নিজের প্রাণ বাঁচাতে তিনি কুমিরের শরীরে কামড় বসান। যন্ত্রণায় কুমিরটি তাঁকে ছেড়ে দেয়। এইভাবেই তিনি ভয়ঙ্কর কুমিরের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন।
হ্রদ থেকে উঠে যাচ্ছিলেন
নর্দার্ন টেরিটরি এলাকায় বাস করা গবাদি পশুর খামারি ও কৃষক কলিন ডেভেরক্সকে ১০ ফুট লম্বা একটি লোনা জলের কুমির কামড়ানোর পরে এক মাস হাসপাতালে কাটাতে হয়। ডেভেরক্স জানান, কুমিরটির কবল থেকে বাঁচার জন্য তার চোখের পাতা কামড়ে দেন তিনি। ডেভেরক্স আরও জানান, তিনি ফিনিস নদীর কাছে বেড়া নির্মাণের জন্য গিয়েছিলেন। সেই সময় সেখানকার একটি হ্রদে থামার পরেই হয় ঘটনার সূত্রপাত। তিনি মাছেদের হ্রদের মাঝখানে সাঁতার কাটতে দেখেন কুমিরকে। ডেভেরক্স যখন হ্রদ থেকে উঠে যাচ্ছিলেন, তখন কুমিরটি এসে ডান পা কামড়ে ধরে। তারপর তাঁকে টেনে জলে নিয়ে যায়। কুমিরটিকে কামড় দেওয়ার আগে ডেভেরক্স নিজের অন্য পা দিয়ে লাথি মেরে কুমিরকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি একটি অদ্ভুত অবস্থায় পড়েছিলাম, কিন্তু ঘটনাক্রমে আমার দাঁত তার চোখের পাতার কাছাকাছি চলে এসেছিল। কুমিরটা বেশ মোটা ছিল। আমি ওর চোখের পাতায় দাঁত দিয়ে জোরে কামড় বসাই। তখন সে আমাকে ছেড়ে দেয়।’’

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর মুকুটে ৬৪টি হীরে : ব্রাত্য

চোখ খুলে দিয়েছে
ডেভেরক্স এরপর এক মুহূর্ত দেরি না করে লাফিয়ে হ্রদের জল থেকে উঠে যেখানে গাড়ি রেখেছিলেন সেদিকে দৌড়ন। কুমিরটিও জল থেকে উঠে মিটার চারেক তাড়া করে। তারপর থেমে যায়। ডেভেরক্স পায়ে রক্তপাত বন্ধ করতে একটি তোয়ালে ও কিছু দড়ি ব্যবহার করেন। তারপর তাঁর ভাই এসে তাঁকে ১৩০ কিলোমিটার দূরের রয়্যাল ডারউইন হাসপাতালে নিয়ে যান। ডেভেরক্স বলেন, ‘‘কুমিরটা যদি আমার শরীরের অন্য কোথাও কামড়াত, তাহলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত।’’
জলাভূমি এলাকায় বেড়া ঠিক করতে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে নিয়মিতই ঘুরে বেড়াতে হয় তাঁকে। কিন্তু এই ঘটনা তাঁর চোখ খুলে দিয়েছে। তাঁকে এখন অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।
শতাধিক কুমিরকে হত্যা
এবারের ঘটনা ব্যাংককের। কিছুদিন আগে টাইফুন ইয়াগির কারণে ক্রমাগত বৃষ্টিতে আশপাশের এলাকায় দেখা দেয় ভারী বন্যা। এর মধ্যেই জীবনের সবথেকে কঠিন সিদ্ধান্তটি নিতে হয়েছিল ন্যাথাপাক খুমকাদকে। থাইল্যান্ডের উত্তর অংশের লামফুন এলাকার এক কুমিরচাষি তিনি। বিপন্ন প্রজাতির কুমিরের একটি খামার চালান। প্রায় ১৭ বছর ধরে তিনি ওই সংরক্ষণ কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টির মধ্যে এলাকার মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি নিজের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেন। একপ্রকার বাধ্য হয়ে হত্যা করেন নিজের খামারের প্রায় শতাধিক কুমিরকে। যেগুলির কোনও-কোনওটি প্রায় তিন মিটার পর্যন্ত লম্বা।
বিপজ্জনক হয়ে ওঠে
গত সেপ্টেম্বরে মাস জুড়ে থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে তীব্র মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয়। যার ফলে জায়গায় জায়গায় ধস নামে। বন্যা দেখা দেয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত্যু হয় ২০ জনেরও বেশি মানুষের। লামফুন প্রদেশেও তাণ্ডব চালায় প্রকৃতি। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দেখা দেয় বন্যা। অবিরাম বর্ষণে ন্যাথাপাক খুমকাদের সিয়ামিজ কুমিরের ঘেরাটোপও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘেরাটোপের ভিতর জলের নীচে থাকা দেওয়ালটি ধসে যায়। বাইরের দেওয়ালটিও ঝুরঝুরে হয়ে পড়েছিল। যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। খুমকাদের খামারের কর্মীরা, যত দ্রুত সম্ভব পুকুরটি ঠিক করার চেষ্টা করে, তবে অবিরাম বৃষ্টি তাদের কাজ কঠিন করে দেয়। এই অবস্থায় খুমকাদের কুমিরের খামার, তাঁর প্রতিবেশীদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। খুমকাদ ভয় পান, খামারের দেওয়াল ভেঙে গেলে কুমিরগুলি পালিয়ে যেতে পারে। প্লাবিত গ্রামাঞ্চলে ঘোরাফেরা করতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দাদের এবং তাদের গবাদি পশুদের আক্রমণ করতে পারে। সেই ক্ষেত্রে গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দাদের প্রাণ সংশয় তৈরি হবে। এই পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, তার জন্য তিনি তাঁর খামারে থাকা প্রায় শতাধিক কুমিরকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ব্যবসার বড় ক্ষতি স্বীকার করেন তিনি।

আরও পড়ুন-মাদারিহাট থেকে মেদিনীপুর প্রার্থীদের ঘিরে জনজোয়ার

সাহসী এবং দায়িত্বশীল
সংবাদমাধ্যমে খুমকাদ বলেছেন, ‘‘তাদের সবাইকে হত্যা করাটা, আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। আমার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। প্রাচীরটা ধসে গেলে অনেক মানুষের প্রাণ সংশয় হত। আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না। এতে জননিরাপত্তার বিষয় জড়িয়ে ছিল।’’ সিয়াম কুমিরের পুকুরের দেওয়ালটা ক্ষয়ে যাওয়াতেই এই জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। খুমকাদের বলেছেন, ‘‘সেদিন, অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছিল। পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। এই গভীর সংকটে আমায় অত্যন্ত জরুরি সিদ্ধান্ত নিতেই হত। শেষ পথ ছিল ওদের সবাইকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে হত্যা করা। যদি একান্তই প্রয়োজন না হত, তাহলে আমরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করতাম না। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে, ওটাই সবথেকে ভাল, দ্রুত এবং নিরাপদ রাস্তা বলে আমার মনে হয়েছিল।’’
তাঁর এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন ল্যামফুনের মৎস্য বিভাগের প্রধান পর্নথিপ নুয়ালানং। ন্যাথাপাক যা করেছেন, তা ‘সাহসী এবং দায়িত্বশীল’ পদক্ষেপ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। নুয়ালানং জানিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরগুলি যদি লোকালয়ে পৌঁছত, তা হলে অনেক ক্ষতি হতে পারত। মৃত কুমিরগুলির মধ্যে একটির নাম ছিল আই হার্ন। সেটিই ছিল ন্যাথাপাকের সংরক্ষণকেন্দ্রের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ কুমির এবং বাকি কুমিরদের নেতা। বিশাল আকার এবং প্রজনন ক্ষমতার জন্য সুনাম ছিল আই হার্নের। ৩৭ বছরের খুমকাদের পরিচিত ‘ক্রোকোডাইল এক্স’ নামে। থাইল্যান্ডে কুমির চাষ একটি লাভজনক শিল্প। এই শিল্প থেকে বছরে আনুমানিক ১৮ হাজার কোটি আয় হয় ওই দেশের।

Latest article