সুরক্ষিত থাক বনভূমি

বন বা অরণ্য জীবনের অপরিহার্য অংশ। আমাদের নানাভাবে বাঁচতে সাহায্য করে। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কোপ বসান বনভূমির উপর। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজ। জনসাধারণের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ২১ মার্চ উদযাপিত হয় বিশ্ব বন দিবস। এবারেও হয়েছে। জোরদার প্রচারের ফলে আগের তুলনায় সুরক্ষিত থাকছে বনভূমি। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

জীব বৈচিত্র্যের সঙ্গে জড়িয়ে
২০১৯ সাল। অগ্নিদগ্ধ হয় আমাজনের জঙ্গল। প্রথমবার নয়, মাঝেমধ্যেই দাবানলের মতো ঘটনা ঘটে। তবে ওই সময় আগুন বিরাট আকার ধারণ করে। পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় গাছপালা, পশুপাখি। এই অগ্নিকাণ্ড মানবসমাজের ভিত নড়িয়ে দেয়। কারণ আমাজন হল পৃথিবীর ফুসফুস। সেটা ধ্বংস হয়ে গেলে মহাসংকট দেখা দিতে পারে। তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সচেতন মানুষ। তাঁদের মধ্যে দেখা দেয় বিপন্নতা। তাঁরা বোঝেন অরণ্যের গুরুত্ব। পাশাপাশি কিছু মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোপ বসান সবুজ অরণ্যের উপর। অসৎ উপায়ে বনজ সম্পদ ধ্বংস এবং বিক্রি করে ফুলেফেঁপে ওঠেন। এর ফলে সমাজের কতটা ক্ষতি হচ্ছে, তাঁরা বোঝেন না। মনে রাখতে হবে— বন বা অরণ্য জীবনের অপরিহার্য অংশ। যা লক্ষ লক্ষ মানুষের অক্সিজেন, খাদ্য, ওষুধ ইত্যাদির জোগান দেয়। নানাভাবে বাঁচতে সাহায্য করে। পরিবেশগত তাৎপর্যের বাইরেও বন বিশ্বব্যাপী খাদ্য সুরক্ষার স্তম্ভ। ফল, বীজ, শিকড় এবং বন্য মাংসের মতো প্রয়োজনীয় সম্পদ সরবরাহ করে। আমাদের দেশে সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং জীব বৈচিত্র্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে বন। তাই, সেটা সুরক্ষিত রাখা কেবলমাত্র একটি পরিবেশগত প্রয়োজনীয়তা নয়, একটি মৌলিক দায়িত্ব।

আরও পড়ুন-হার্দিক ফিরলেও জয়, অধরা থাকল মুম্বইয়ের

সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন
যে যে কারণে ভারতে বনভূমি সংরক্ষণ প্রয়োজন সেটা একটু দেখে নেওয়া যাক। সবুজ বনভূমি আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষা করে। দিনের বেলা গাছেরা নিজেদের সালোকসংশ্লেষের প্রয়োজনে প্রাণীজগতের পক্ষে দূষিত বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং প্রাণীজগতের অশেষ কল্যাণ সাধন করে। এ আমরা শৈশব থেকেই জানি। পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে। বনভূমি পরিবেশকে দুষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। শহরাঞ্চলে প্রধানত এই কারণেই বৃক্ষ রোপণ করা হয়। পাশাপাশি বনভূমি ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ করে। গাছেরা নিজেদের শিকড়ের সাহায্যে মাটিকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে বৃদ্ধি পায়। এতে ভূমিক্ষয় নিরারণ হয়। সেইসঙ্গে বনভূমি মরুভূমির প্রসার রোধে সাহায্য করে। এছাড়াও বনভূমির গাছেদের পাতা, ফুল, মূল, কাণ্ড প্রভৃতি পচে মৃত্তিকার উর্বরতা বাড়ায়। গাছের প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার ফলে বাষ্পীভবনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বনভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বনভূমি মানুষের অর্থকরী দিক থেকেও লাভজনক। এখান থেকে আহরণ করা ফলমূল, মধু, কাঠ এবং বিভিন্ন ধরনের বনজ সম্পদ মানুষকে জীবিকা নির্বাহ করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন জীবজন্তুর আশ্রয়স্থল ও বাসভূমি হওয়ায় বনভূমি জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষা করে। মনে রাখতে হবে— পৃথিবীর প্রায় ৩১ শতাংশ ভূমি জুড়ে রয়েছে বনভূমি, যা এগুলোকে গ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রগুলির মধ্যে একটি করে তোলে। ৮০ শতাংশেরও বেশি স্থলজ প্রজাতির প্রাণী, উদ্ভিদ এবং পোকামাকড়ের আবাসস্থল। এছাড়াও, বনভূমি বিশ্বব্যাপী ১.৬ বিলিয়নেরও বেশি মানুষকে, বিশেষ করে গ্রামীণ সম্প্রদায়ের অগণিত মানুষকে জীবিকা প্রদান করে। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ অরণ্য ধ্বংস করেছেন। যা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

আরও পড়ুন-বিনিয়োগের বিষয়গুলি দেখতে নির্দেশ মুখ্যসচিবকে, ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রী

স্মারক হিসেবে কাজ
এই বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর ২১ মার্চ, বিশ্ব বন দিবস উদযাপন করা হয়। বিশ্ব বন দিবস আন্তর্জাতিক বন দিবস নামেও পরিচিত। আমাদের জীবনে বনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রতি বছর দিনটি পালিত হয়। এই দিনে, বনের ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়, যা অসংখ্য পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সুবিধা প্রদান করে। নানা অনুষ্ঠান ও আলোচনাসভার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়েছে এই বছরও। বাস্তুতন্ত্রে বন ও গাছের গুরুত্ব স্বীকার করার জন্য ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ প্রথম বিশ্ব বন দিবস প্রতিষ্ঠা করে। ২০১২ সালে রাষ্ট্রসংঘ ২১ মার্চ, দিনটিকে আন্তর্জাতিক বন দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উদযাপন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২১ মার্চ তারিখটি বসন্ত বিষুব দিবসের সঙ্গে মিলে যাওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল, যা আলো এবং অন্ধকারের মধ্যে ভারসাম্যের প্রতীক এবং বন কীভাবে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে তা প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, এই দিনটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এবং বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সরবরাহে বনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্মারক হিসেবে কাজ করে আসছে। ২০২৫ সালের বন দিবসের থিম হল ‘বন এবং খাদ্য’। এর মাধ্যমে বন এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সুরক্ষার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বন নানারকম ফল, বাদাম এবং বন্য উদ্ভিদের মতো অনেক খাদ্য উৎস সরবরাহ করে, যা বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য অপরিহার্য। সেইসঙ্গে বন মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে, জলসম্পদ রক্ষা করতে এবং জীববৈচিত্র্যকে সমর্থন করে, যার মধ্যে কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরাগরেণু অন্তর্ভুক্ত। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মানুষকে খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করার সঙ্গে সঙ্গে বন রক্ষা করার জন্য নিখুঁত পদ্ধতি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করছে। বছর বছর বিশ্ব বন দিবস উদযাপন এবং জোরদার প্রচারের ফলে মানুষের মধ্যে বেড়েছে সচেতনতা। আগের তুলনায় সুরক্ষিত থাকছে বনভূমি।

দেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বনাঞ্চল
সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান
আমাদের রাজ্যের একটি জাতীয় উদ্যান হল সুন্দরবন। এটা সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের কেন্দ্রীয় অংশ। বৃহত্তর সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে অখণ্ড বন, যা বিশ্বে সর্ববৃহৎ। অববাহিকার সমুদ্রমুখী সীমানা এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের প্রায় ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। বঙ্গোপসাগরের ৭৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত জোয়ার এখানে সবসময়ই দেখতে পাওয়া যায়। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনের বর্তমান ভারতীয় অংশটির সংরক্ষণের কাজ আরম্ভ হয়। ১৯৭৩ সালে মূল এলাকাটি ঘোষিত হয় সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসাবে। ১৯৭৭ সালে ২,৫৮,৫০০ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ১৩৩,০০০ হেক্টর মূল এলাকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মর্যাদা পায়। ১৯৮৪ সালের ৪ মে এটা জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষিত হয়। এখানকার সজনেখালিতে, লুথিয়ান দ্বীপে ও হ্যালিডে দ্বীপে আরও তিনটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। এছাড়া, পাথরপ্রতিমায় কুমির প্রকল্প এবং সজনেখালিতে পাখিরালয় রয়েছে। সারা বছর বহু পর্যটক ঘুরে দেখেন।

আরও পড়ুন-এআই নজরদারি মহানগরে নিরাপত্তায় উদ্যোগ পুলিশের

গির জাতীয় উদ্যান
গুজরাটের গির জাতীয় উদ্যান পৃথিবীর অন্যতম সেরা অভয়ারণ্য। সিংহের বিচরণভূমি। স্থাপিত হয়েছে ১৯৬৫ সালে। মোট আয়তন প্রায় ১৪১২ বর্গ কিলোমিটার। বিখ্যাত এশিয়াটিক সিংহের দেখা মেলে একমাত্র এখানেই। এছাড়াও আছে চিতাবাঘ, হরিণ-সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং পাখি। এই অরণ্যে বেড়ানোর আদর্শ সময় ডিসেম্বর থেকে মার্চ।
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান
অসমের ব্রহ্মপুত্র নদের পলি গঠিত সমভূমি অঞ্চলে অবস্থিত কাজিরাঙা। এই জাতীয় উদ্যানে একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষণ করা হয়। জঙ্গল সাফারির সময় তাদের দেখা মেলে। বিশ্বের মোট গন্ডারের দুই-তৃতীয়াংশ আছে এখানে। এছাড়াও আছে বাঘ, হাতি ইত্যাদি। উড়ে বেড়ায় নানা প্রজাতির পাখি। শীতকাল বেড়ানোর আদর্শ সময়। প্রতি বছর বহু মানুষ জঙ্গল সাফারি করেন।
জিম করবেট জাতীয় উদ্যান
উত্তরাখণ্ডের জিম করবেট জাতীয় উদ্যান দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং এশিয়া মহাদেশেরও প্রথম অভয়ারণ্য। নৈনিতাল এবং পৌড়ি গাড়োয়ালে অবস্থিত। ১৯৩৬ সালে অভয়ারণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্যে ছিল বিপন্ন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারদের বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা। প্রথমে শুরু হয়েছিল ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসেবে। পরে জাতীয় উদ্যানে পরিণত হয়। নামকরণ করা হয় বিখ্যাত শিকারি এবং প্রকৃতিপ্রেমী জিম করবেটের নামে। এখানে প্রায় ৫০০ প্রজাতির গাছপালা এবং প্রাণী আছে। দেশের ইকোট্যুরিজমের অন্তর্গত। এই অরণ্যে পর্যটকদের জন্য যাবতীয় সুব্যবস্থা রয়েছে। তাই বছর বছর পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় ৫২০.৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। রয়েছে পাহাড়, নদী, জলাভূমি, তৃণভূমি এবং একটি বিশাল হ্রদ। সমুদ্রতল থেকে গড় উচ্চতা ১,৩০০ থেকে ৪,০০০ ফিট। শীতকালে এই জাতীয় উদ্যান ঘোরার আনন্দই আলাদা। এখানে বিভিন্ন প্যাকেজের জঙ্গল সাফারির ব্যবস্থা আছে। অন্যতম আকর্ষণ সাদা কুমির। এছাড়াও বাঘ, হাতি ইত্যাদির দেখা মেলে। ভ্রমণের সেরা সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।

আরও পড়ুন-ভূমিকম্পে মৃত বেড়ে ১০০০, আফটার শকে ভেঙে পড়ছে বহুতল

রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যান
উত্তর ভারতের বৃহত্তম জাতীয় উদ্যানগুলির মধ্যে অন্যতম রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যান। দক্ষিণ-পূর্ব রাজস্থানে সওয়াই মাধোপুর জেলায় বিন্ধ্য এবং আরাবল্লি পাহাড়ে ঘেরা ১৩৩৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। একটা সময় জয়পুরের মহারাজাদের শিকারভূমি ছিল। ১৯৮০ সালে এই অরণ্য জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পেয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাঘ রয়েছে এই অরণ্যেই। তাই উদ্যানে ঘুরে বেড়ালে বাঘের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে সেটা মূলত শীতকালে। কারণ সেই সময় সূর্যের আলো গায়ে মাখার জন্য বাঘ বাইরে বেরোয়। অবাধে বিচরণ করে। দেখা যায় একেবারে সামনে থেকে। তবে তাদের বিরক্ত করলে বিপদ। বাঘ ছাড়াও আছে চিতা, নীলগাই, বুনো শূকর, সম্বর, চিতল হরিণ, লেজযুক্ত খরগোশ, বনবিড়াল, শ্লথ ভল্লুক, কুমির, ময়ূর ও পাখি। অরণ্যের ভিতরে রয়েছে কয়েকটি সুন্দর জলাশয়। বন্যপ্রাণীরা জল খেতে আসে। রয়েছে পাহাড়ি জৈন মন্দির, কালা গৌর মন্দির এবং অমরেশ্বর মহাদেবের মতো অনেক প্রাচীন মন্দির। এছাড়াও প্রাচীন বটগাছ, রণথম্বোর দুর্গ, রাজবাগ যোগী মহল। ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফির জন্য এই উদ্যান আদর্শ জায়গা।
তাডোবা জাতীয় উদ্যান
মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো জাতীয় উদ্যান তাডোবা। জঙ্গলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পশু এবং পাখি। রয়েছে বাঘও। এই অরণ্যকে বলা হয় দেশের বাঘের রাজধানী। দেশের বৃহত্তম ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম। অরণ্যে পা রাখলেই শুনতে পাওয়া যায় গর্জন। জঙ্গলের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য মুগ্ধ করে সকলকে। চারদিকে সবুজের সমারোহ। আমাদের দেশের অনেক জঙ্গলই বর্ষাকালে বন্ধ থাকে। তবে তাডোবার ক্ষেত্রে তা হয় না। বর্ষায় পায়ে হেঁটে জঙ্গলে ঘুরতে দারুণ লাগে। এই সময় জঙ্গলের পরিবেশ থাকে অতি মনোরম। ছড়িয়ে পড়ে ভেজা মাটির গন্ধ, গাছের গন্ধ। মন মাতাল করে দেয়। তুলনায় গ্রীষ্মে জঙ্গল সফর খানিকটা অস্বস্তিকর। তবে শীতের দিনে বেড়াতে দারুণ লাগে।
নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান
নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান আমাদের রাজ্যের কালিম্পং জেলায় অবস্থিত। ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকারিভাবে ঘোষিত হয়। আয়তন ৮৮ বর্গ কিলোমিটার। উত্তরবঙ্গের এই বনাঞ্চল অনেকটাই দুর্গম। এখনও কিছু কিছু জায়গায় পৌঁছয় না দিনের আলো। আছে খয়ের, শিশু, শিরীষ প্রভৃতি গাছ। বন্যপ্রাণীর মধ্যে দেখা যায় বাঘ, চিতাবাঘ, বনবিড়াল, কালো ভল্লুক, কাঠবিড়ালি, লাল পান্ডা, দেশি বনরুই, সম্বর হরিণ, গোরাল, বন ছাগল ইত্যাদি। কপাল ভাল থাকলে দেখা পাওয়া যায়। উড়ে বেড়ায় নানা প্রজাতির পাখি। গভীর অরণ্যে পায়ে পায়ে বেড়াতে হয়। পদে পদে রোমাঞ্চ। দূর থেকে উঁকি দেয় তুষার ধবল পর্বতশৃঙ্গ। ঝাঁপিয়ে পড়ে ঝরনা। চলার পথের কিছু জায়গা স্যাঁতসেতে, পিচ্ছিল। পাহাড়ি পথ ট্রেকিংয়ের পক্ষে আদর্শ জায়গা। সবুজের সমারোহে একটি দিন কাটালে মন ভাল হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন-”পুলিশ সতর্ক রয়েছে” সাংবাদিক বৈঠকে এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম এবং এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার

কানহা জাতীয় উদ্যান
মধ্যপ্রদেশের কানহা জাতীয় উদ্যান। একে বলা হয় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বাসা। এই অরণ্যে বেড়ালে বাঘের দেখা মিলবেই। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। রয়েছে অন্তত হাজার প্রজাতির গাছ। বাঘ ছাড়াও নানা প্রজাতির হরিণ, শ্লথ ভল্লুক, বুনো কুকুর, লেপার্ড, গৌড়, সম্বর, শেয়াল ইত্যাদি আছে। এছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। সারাদিন চলে কিচিরমিচির। ভেঙে দেয় জঙ্গলের নিস্তব্ধতা। এই জঙ্গলে ট্রেকিং, সাফারি ইত্যাদির ব্যবস্থা রয়েছে। অভয়ারণ্যের ভিতরে আছে সানসেট পয়েন্ট। নাম বামনি দাদর। সেখান থেকে সূর্যাস্ত দেখতে দারুণ লাগে। সবুজ অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় সারাদিন ধরে। জব্বলপুর বিমানবন্দর বা রেলস্টেশন থেকে কানহার দূরত্ব প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার। হলিউড চিত্র পরিচালক রুডইয়ার্ড কিপলিং তাঁর ছবি জঙ্গলবুকের শ্যুটিং করেছিলেন এখানে। তারপর থেকে নতুন প্রজন্ম এই অরণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।

Latest article