সোনার সংসার

Must read

গয়নাগুলোই প্রাণ
হাতে গয়না, পায়ে গয়না, নাকে-কানে-গলায়-কোমরে গয়না। সোনার সাজে ঘুরে বেড়াতেন গৃহিণীরা। অনুষ্ঠানে, পুজোয় তাঁদের জন্য ভারী ভারী সোনার গয়না বানিয়ে দিতেন কর্তারা। সেই সময় একটু সম্পন্ন গৃহস্থ মানেই প্রচুর গয়নাগাটি। গৃহিণীরা পরতেন। জমাতেন। বাক্স খুলে দেখতেন। অন্দরমহলে গয়নাগুলোই ছিল তাঁদের প্রাণ। এমন সব গয়না ছিল, যেগুলোর নামও আজকাল প্রায় শোনাই যায় না। গোড়ে, ছালনা, পিন খাড়ু, চাউদানি এয়ারিন, দমদম গোখরি বা ঝাঁপা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন-এক পয়েন্টই অনেক, বলছে কেকেআর

স্ত্রী-ধনে পরিণত
একটা সময়ের পর শুধু সাজসজ্জা থেকে গয়না স্ত্রী-ধনে পরিণত হয়েছে। বিপদে পড়লে গয়নাই রক্ষা করবে, এই ধারণা প্রায় বদ্ধমূল। নাকে নথ ও নোলক ছিল এয়োতির চিহ্ন। ফাঁদি নথ এত বড় হত যে তার ভিতর দিয়ে অনায়াসে ভাত খাওয়া যেত। অনেক মহিলাই নাকের মাঝের সেপ্টামে একটা অদ্ভুত গয়না পরতেন। দেখতে দুই দিক চাপা বোতামের মতো। নাম নাকঠাসা। এতে নাকের অশুভ বাতাস পিউরিফায়েড হয়ে স্বামীর গায়ে পড়ত।
অদ্ভুত ডিজাইন সুন্দর নাম
আগে মেয়েদের মাথার গয়না বলে কিছু ছিল না। টায়রা আর টিকলি কী জিনিস, একপ্রকার অজানাই ছিল। ধীরে ধীরে পাল্টাল দিন। মেয়েরা মাথার অলঙ্কার হিসেবে পরতে লাগলেন চৌঙ্ক, শিষফুল, ছোটি ও মৌলি। কপালে পরতেন দমনি, কুটবি, তাওয়াইট, চাঁদটিকা, ঝুমর, গুছই, বারোয়াট আর বিন্দলি। এই বিন্দলিই পরে বিন্দি নাম নিয়েছে। নবাবি আমলে স্বামীর সম্মান অনুযায়ী স্ত্রী নথ পরতেন। পায়ের সোনার নূপুর পরতেন একমাত্র রাজপরিবারের মেয়েরা। মেয়েরা বাপের বাড়ি এলেই পুরনো গয়না ভেঙে নতুন ডিজাইন বানানো হত। স্বর্ণকার বাড়ি আসতেন গয়নার ডিজাইন নিয়ে। অদ্ভুত সব ডিজাইন, সুন্দর সুন্দর নাম— মাক্কি, কেশর, ডালবোলাক, চানবোলাক, হীরাকাট বোলাক। নাকছাবিরও কত কায়দা— ডালিমফুল, লবঙ্গ, বড়োইফুল, চালতাফুল, দামালকাট। নাম হত নকশা অনুযায়ী।
বৈদিক যুগ থেকে
গলার হারে মুক্তার মালার চল সবচেয়ে প্রাচীন। বৈদিক যুগ থেকে। তবে ঊনবিংশ শতকে চম্পাকলি, হাঁসুলি, ইতরাবদন, গুলবন্ধ, কান্দি, মোহরণ, হাউলদিল নামে নানা রকম গলার হার পরতেন মেয়েরা। হাতের গয়নার মধ্যে বাজুবন্ধ, তাবিজ, অনন্ত, বাউটি, মানতাসা আর রতনচূড় ছিল প্রসিদ্ধ। মানতাসা হল অনেকটা রিসলেটের মতো। কিন্তু এই গয়না ছিল বেশ ভারী এবং চওড়া। রতনচূড় হাতের উপরভাগ অর্থাৎ তালুর উল্টো দিকে পরা হত। কবজির কাছে চুড়ির মতো আটকানো থাকত এবং বাকি অংশ ছড়িয়ে হাতের আঙুলের সঙ্গে লাগানো থাকত। রতনচূড়কে আজকাল হাতপদ্ম বলে। আংটির চল বহু পুরোনো। শকুন্তলার আমল থেকেই। আরশি আর ছল্লা নামে দুই রকম আংটি ছিল। বড় আকারের তর্জনীতে পরতে হত। কোমরে পরার জন্য ছিল পাহজেব, বঞ্জর, জিঞ্জির। যাদের পয়সাকড়ি কম তাঁরা বউদের কোমরে পরার জন্য কিনে দিতেন গোটাহার, আর নিমফল।

আরও পড়ুন-কেরিয়ার বাঁচানোর জন্য কল্যাণকে আজ জুনিয়র ডাক্তারদের সংবর্ধনা

সাহিত্যে গয়না
বাংলা সাহিত্যে রকমারি গয়নার উল্লেখ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মণিহারা’ গল্পে মণির অলঙ্কারপ্রীতির কথা পাঠকদের অজানা নয়। যদিও এই কারণেই তাঁর মর্মান্তিক পরিণতি ঘটেছিল। কিশোরীচাঁদ মিত্রের স্ত্রী কৈলাসবাসিনী দেবীর ‘গহনার ফর্দ’য় নানারকম গয়নার বিবরণ পাওয়া যায়। বেগম রোকেয়া এক সালঙ্কারা বধূর বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, ‘মাথায় সিঁথির অলঙ্কার ৪০ ভরি, কর্ণে ২৫ ভরি, কণ্ঠে ১২০ তোলা, সুকোমল বাহুলতায় প্রায় দুই সের, কটি দেশে ৬৫ ভরি, চরণযুগলে ২৪০ ভরি স্বর্ণের বোঝা!’
উপরের দিকে যাবে
অতীতে ছিল ভারী গয়নার চল। বর্তমানে হালকা গয়নার কদর বেড়েছে। এর মূল কারণ সোনার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। আগে ভারি গয়না তৈরি হলেও ডিজাইন ছিল একঘেয়ে। এখন ডিজাইনে বৈচিত্র এসেছে, নতুনত্ব এসেছে। অল্প সোনা দিয়ে কারিগররা অত্যাধুনিক ডিজাইনের গয়না তৈরি করছেন। কথা হল শহরের নামী স্বর্ণব্যবসায়ী রূপক সাহা-র সঙ্গে। তিনি জানালেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে সোনার দামের অদ্ভুত রকমের পরিবর্তন ঘটেছে। একশো বছরের ইতিহাসে চোখ রাখলে আমরা দেখব, সোনার অ্যাভারেজ গ্রোথ আছে ২০ থেকে ২১ শতাংশ। ঠিকঠাক বললে, ২০.৬৭ শতাংশ। এই বছরের কথাই যদি বলি, গত তিন মাসে সোনার দাম ৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে কনফিউশন তৈরি হয়েছে। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না— সোনার গয়না এখন কিনবেন, নাকি কিছুদিন অপেক্ষা করবেন। ইন্ডাস্ট্রি বলছে, বর্তমান অবস্থায় হয়তো মাইনর কারেকশন এর মধ্যেই হতে পারে। কিন্তু আগামী দিনে ইন্ডাস্ট্রি দেখছে সোনার দাম আরও অনেক উপরের দিকে যাবে।

আরও পড়ুন-দহন শেষে কালবৈশাখীর সম্ভাবনা

গয়নার বিবর্তন
গয়না শিল্পের বিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এই শিল্পে বিবর্তন ঘটেছে। তবে এর কারণগুলো আমাদের বুঝতে হবে। ধরা যাক কারও দশ লক্ষ টাকা বাজেট। কিন্তু কেনার সময় সোনার দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে গেল। তখন তো সমস্যা। বাজেট তো ১৫ লক্ষ শতাংশ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে প্রত্যেক স্বর্ণশিল্পী বা ব্যবসায়ী গ্রাহকদের সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণের চেষ্টা করছেন। হালকা ওজনের গয়না দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিছু মানুষ অপপ্রচার করে বলেন, সোনার বিক্রি নেই। এটা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল। দাম বাড়া সত্ত্বেও সোনার আমদানি কিন্তু বেড়েছে। বিক্রি আছে বলেই বেড়েছে। গয়না ইনভেস্টমেন্টের জন্য বিক্রি হতে পারে, ব্যবহারের জন্য বিক্রি হতে পারে। সোনা যখন ৫ হাজার টাকা ছিল তখন মানুষের মনে হয়েছিল দাম বেশি। সোনা যখন ৮ হাজার টাকা হয়েছিল, তখনও মনে হয়েছিল দাম বেশি। সোনা যখন ১০ হাজার টাকা, তখনও মনে হয়েছে দাম বেশি। এখনও মনে হচ্ছে সোনার দাম বেশি।’’ তাঁর পরামর্শ, ‘‘গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, দাম যতই বাড়ুক, সোনা কেনা কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ সোনার দাম আগামী দিনে আরও বাড়তে চলেছে। সুতরাং আপনার সংগ্রহে যদি সোনা থাকে, তাহলে নিজেকে সুরক্ষিত ভাবতে পারবেন। এই কারণেই রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কগুলো সোনা কিনছে। রাষ্ট্রগুলো সোনা কিনছে। সুতরাং একজন গ্রাহক ব্যবহারের জন্য যখন সোনা কিনছেন, সেটাও কিন্তু তাঁর একটা ইনভেস্টমেন্ট। সোনার দাম অনেক বেশি, তা সত্ত্বেও বিক্রি হচ্ছে ভালই।’’
বারো মাসে তেরো পার্বণ
বউবাজার এলাকার স্বর্ণব্যবসায়ী দুলাল দত্ত। কথা হল তাঁর সঙ্গে। তিনি জানালেন, আমি ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে অলঙ্কার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বউবাজারে আমাদের বহু পুরনো দোকান। আগে ভারী সোনার গয়না তৈরি হত। গত কয়েক বছরে সোনার গয়নার ডিজাইনে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। ভারী জিনিসের কদর কমেছে। বেড়েছে হালকা গয়নার কদর। কারণ সোনার দাম অত্যধিক বেড়ে গেছে। এখন দশ গ্রাম সোনার দাম প্রায় এক লক্ষ টাকা। ফলে সাধারণ মানুষকে ভাবতে হচ্ছে গয়না কেনার আগে। আগে লার্জ স্কেলে ব্যবসা চলত। এখন ব্যবসা ছোট হয়ে গেছে। তবু গয়না বিক্রি হচ্ছে। এই পাড়ায় এতগুলো দোকান তো চলছে। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। উৎসবের মরশুমেই মূলত সোনা কেনা হয়।
কথা হল বউবাজারের স্বর্ণশিল্পী পরিমল কর্মকারের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘‘আমি প্রায় ৩৫ বছর ধরে স্বর্ণশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। বিরাট পরিবর্তন দেখেছি। প্রথম যখন আসি, তখন সোনার দাম ছিল ১০ গ্রাম ২৬০০ টাকার মতো। সেটা এখন হয়ে গেছে প্রায় এক লক্ষ টাকার মতো। আগে ভারী সোনার গয়নার চাহিদা ছিল। এখন গ্রাহকরা হালকা সোনার গয়নাই বেশি কিনছেন। যদিও বড় বড় দোকানে এখনও ভারী সোনার গয়না পাওয়া যায়। আমরাই তৈরি করি। আগে তিন-চার ভরি সোনার গয়নায় মধ্যবিত্ত পরিবার মেয়ের বিয়ে দিত। এখন সেটা এক-দুই ভরিতে নেমে এসেছে। তাতে হালকা পাতলা গয়না হয়। বিয়ের মরশুমের পাশাপাশি অক্ষয় তৃতীয়া, ধনতেরাস, দুর্গাপুজো, রথযাত্রার সময় সোনা কেনার চল রয়েছে। সোনার দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় কারণেই এখন রুপো, ইমিটেশন, প্লাটিনামের গয়নায় চাহিদা বেড়েছে।’’
বউবাজারের আর-এক স্বর্ণশিল্পী দেবাশিস বৈদ্য জানালেন, অর্ডার আসছে। সোনার গয়না কিনছেন মূলত উচ্চবিত্তরাই। মধ্যবিত্তরা মেয়ের বিয়ে ছাড়া অন্য কোনও উপলক্ষে সোনার গয়না কিনতে সাহস পাচ্ছেন না। বিয়ে, পৈতে, অন্নপ্রাশনেও উপহার হিসেবে সোনার গয়নার চাহিদা কমেছে।

আরও পড়ুন-পণ্ড ম্যাচ, নাইটদের আকাশ মেঘাচ্ছন্নই

রাজ্যের অবস্থা ভাল
বর্তমানে একটা সোনার গহনা মাল্টিপল ইউজ করা হচ্ছে। পরা হচ্ছে নানারকম পোশাকের সঙ্গে। এখন মাসে মাসে টাকা জমিয়ে গয়না কেনার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। বিবর্তনের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এই সুযোগগুলো আসায় বহু মানুষের মধ্যে সোনা কেনার আগ্রহ আগের তুলনায় বেড়েছে। গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এখন গয়না তৈরি হচ্ছে। চাহিদা আছে বলেই স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা কারিগরদের কাছে যাচ্ছেন। কারিগররা নানা রকমের গয়না তৈরি করছেন। আগে বাঙালিরা হীরের গয়না খুব একটা পরতেন না, এখন পরছেন। এর পাশাপাশি অন্যান্য ধাতুর গয়নারও দারুণ চাহিদা বেড়েছে। প্লাটিনাম সোনার তুলনায় সস্তা। ফলে প্লাটিনামের গয়না বিক্রি হচ্ছে। রুপোর গয়নার চাহিদা আগে তুলনায় বেড়েছে। গ্রাহকদের মানসিকতা বুঝে এখন তৈরি হচ্ছে গয়না। রূপক সাহা জানালেন, আমাদের রাজ্যের কারিগররা অন্য রাজ্যের কারিগরদের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ। কারণ আমাদের কারিগররা কম ওজনে সুন্দর সুন্দর সোনার গয়না তৈরি করতে পারেন। তাই অন্য রাজ্যেও তাঁদের চাহিদা রয়েছে। বহু রাজ্যের তুলনায় আমাদের রাজ্যের অবস্থা অনেকটাই ভাল। এখানে স্বর্ণশিল্পে একটা স্থিরতা রয়েছে।

আরও পড়ুন-মধ্যরাতে মুম্বইয়ের ইডি দফতরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

সোনার হলমার্কিং
ভারতে সোনা হলমার্কিং স্কিম পরিচালনা করার জন্য ভারত সরকার একচ্ছত্র এজেন্সি হিসাবে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডসকে চিহ্নিত করেছে। এই স্কিমের অধীনে, ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস সোনার ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স মঞ্জুর করে এবং শংসায়িত গহনা ব্যবসায়ীরা তাঁদের গহনাগুলিকে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস অনুমোদিত যে-কোনো অ্যাসেয়িং এবং হলমার্কিং কেন্দ্র থেকে হলমার্ক করাতে পারে। ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস হলমার্ক নিশ্চিত বিশুদ্ধতাসম্পন্ন গয়না যদি কেউ কেনেন, বিশেষভাবে সেক্ষেত্রে সোনার সঙ্গে অন্য ধাতুর মিশ্রণের পরিমাণটি জানা যায়। তাই, গ্রাহক এই নিশ্চয়তা পান যে ২২ ক্যারেটের সোনার অলংকারে ২২ ক্যারেটই আছে। হলমার্ক করা সোনার ওপর ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস শংসায়িক গয়না ব্যবসায়ী বা গয়না প্রস্তুতকারকের শনাক্ত করারও প্রতীক থাকে। ভারতে হলমার্ক করা গয়না ব্যবসায়ীদের সম্পূর্ণ তালিকাটি ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস-এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। যদি কোনও বিনিয়োগকারী অভিযোগ করেন এবং হলমার্কিং নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন, সেক্ষেত্রে তাঁরা ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস-এর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের দেশে কেবলমাত্র তিনটি গ্রেডে হলমার্কিং করা হয়। ২২, ১৮ এবং ১৪ ক্যারেট। সেই অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের সোনাকে শংসায়িত করা হয়। সোনা কেনার সময় ক্রেতাকে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস অনুমোদিত অ্যাসেয়িং এবং সোনার হলমার্কিং কেন্দ্রের লোগোটিও পরীক্ষা করে নিতে হবে, যেখান থেকে গয়না ব্যবসায়ী গয়নাগাটির বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করিয়ে হলমার্ক করিয়েছেন।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

সোনার ক্যারেট
সোনা ক্যারেটে পরিমাপ করা হয়। আপনার কিনতে চাওয়া প্রতিটি সোনার গয়না অথবা সোনার কয়েনে এটা কীভাবে দাম ও মজবুতিকে প্রভাবিত করে, সেটা জানা আবশ্যক। ২৪ ক্যারেট সোনা বলতে খাঁটি সোনাকে বোঝায়। (৯৯.৯৯ শতাংশ খাঁটি। অন্যদিকে ২২ ক্যারেট সোনা ৯১.৬ শতাংশ বিশুদ্ধ। সোনার অলংকার কখনওই ২৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে প্রস্তুত হয় না। কারণ, সোনার সবথেকে খাঁটি রূপটি অত্যন্ত নমনীয়। গয়না প্রস্তুতির জন্য উপযুক্ত নয়। ফলে তার সঙ্গে তামা, রুপো, নিকেল বা জিঙ্কের মতো অন্য ধাতু মেশানো হয়। যখন সোনার বালা, চেন, নেকলেস ইত্যাদির মতো সোনার গয়না কেনা হয়, তখন তার মেকিং চার্জের ওপর নজর রাখা উচিত। সাধারণত সোনার গয়নার মেকিং চার্জ প্রতি গ্রাম অনুযায়ী হয়। সোনার গয়না কেনার আগে ব্যবসায়ীর সুনাম দেখে নেওয়া উচিত। অপরিচিত লোকের থেকে কিনলে তা সাশ্রয়ী নাও হতে পারে। বিশেষ করে সোনার বিশুদ্ধতার দিক থেকে।

আরও পড়ুন-বিষয় এবং ভাবনা চমকে দেয়

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সোনার গয়না
খনি থেকে তোলা প্রায় শতকরা ৪৯ ভাগ সোনা দিয়ে গয়না তৈরি হয়। সোনার গয়না যে কোনও সময়, যে কোনও রূপে ঝিলিক দিতে পারে। সে নিজেই কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানে একটি যথার্থ সেট হয়ে ওঠে। তা কোনও সাধারণ পারিবারিক গেট-টুগেদার, বা কোনও বিয়ে বা সহকর্মীদের সঙ্গে কোথাও বেড়ানোই হোক না কেন। এখানে কিছু আইডিয়া দেওয়া হল :
বিয়ের কনের জন্য
বিয়ের পোশাক লাল, সাদা, গোলাপি, হলুদ, নীল বা ধূসর বর্ণের হতে পারে বা দারুণ কোনও চকমকে সংমিশ্রণও থাকতে পারে। এছাড়াও পরা যায় চিক বা কণ্ঠহার, নেকলেস, রানি হার, টায়রা মাং টিকা বা টিকলি ইত্যাদি। সেইসঙ্গে সোনার বালা, কঙ্কণ, কোমরবন্ধ, নেকলেস, আংটি, কানের দুল, হাতফুলেও কনেকে সাজানো যায়।
বিয়ের অতিথি
পুরনো সোনার নেকলেসের সেট আত্মীয় অথবা বন্ধুর বিয়েতে কাজে লাগানো যায়। গাউন, ভারী শাড়ি, লেহেঙ্গা বা অন্য কোনও ভারী পোশাকের সঙ্গে পরলে আশ্চর্য জাদু তৈরি করবে।
উৎসব-অনুষ্ঠানে
দুর্গাপুজো দীপাবলি, ভাইফোঁটা, রাখিপূর্ণিমা ইত্যাদি উৎসব অনুষ্ঠানে নিজেদের সাজিয়ে তুলতে মহিলারা সোনার কানের দুল, বালা, নূপুর, নেকলেস, আংটি এবং কঙ্কণ পরতে পারেন।
কর্মক্ষেত্রে
কর্পোরেট ইভেন্টে হালকা সরু সোনার গয়না পরে নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করা যায়। পশ্চিমি পোশাকের ক্ষেত্রে একটা সোনার পেনডেন্ট, একটা হালকা সোনার আংটি বা এক জোড়া আকর্ষণীয় বালা চলতে পারে। কুর্তি বা হালকা ওজনের শাড়ির মতো প্রথাগত পোশাকের সঙ্গে সমসাময়িক বা প্রথাগত সোনার সেট ভাল মানায়৷ মোটাসোটা সোনার গয়নার বদলে সূক্ষ্ম ডিজাইন বেছে নেওয়া যায়। তাতে আধুনিক পোশাকে সোনার সম্মান ও সৌন্দর্য দুটিই যোগ হবে৷ পারিবারিক গেট টুগেদারে কানের দুল, ব্রেসলেট, নেকলেস, বালা, নূপুর, নাকছাবি ইত্যাদির মতো সোনার গয়না সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে পারে৷ প্রথাগত পোশাকের সঙ্গে সোনার গয়না শুভ বলে মনে করা হয়। সোনা সমৃদ্ধি এবং ধনসম্পদকে চিহ্নিত করে এবং বিশ্বাস করা হয় এটা সৌভাগ্য ও প্রাচুর্য নিয়ে আসে।

Latest article