এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞের সূচনা করেছে আমাদের দল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। এই যজ্ঞের নেতা হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের নবজাগরণ। জনসংযোগ যাত্রা (Jono Sanjog Yatra)। ২৫ এপ্রিল থেকে সারা রাজ্যে ২ মাস ধরে চলবে। ব্লকে, গ্রামে, বিধানসভায়, জেলায় জনসংযোগ যাত্রা পৌঁছাবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকবেন সাধারণ সম্পাদক নিজে। কোচবিহারের দিনহাটা থেকে সেই যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে।
জনসংযোগ যাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে বলা প্রয়োজন। যাত্রা শুরুর কয়েকদিন আগে দলের প্রধান নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী সেটা বলেছিলেন। পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেটার বিস্তার ঘটান। তৃণমূল কংগ্রেস জনগণের দল। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে, গণতান্ত্রিক, বহুত্ববাদী, ধর্মনিরপেক্ষক মানুষ এই দলের সঙ্গে আছেন। এই কর্মীরাই দলের প্রধান শক্তি। দলের সম্পদ। এই বিশাল জনবাহিনী, কর্মীবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। কারণ সামনে যে বৃহত্তর রাজনৈতিক সংগ্রাম আসছে তাতে সবাইকে যোগ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের কাঁধে প্রথম সেই কর্তব্যটি তুলে নিয়েছন। সারা রাজ্য এভাবে চষে ফেলার দৃষ্টান্ত দেশে বিরল।
আগামীর সংগ্রামগুলির কথা বলা যাক। কিছুদিনের মধ্যে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে চলেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে বল হয় ‘জনগণের নির্বাচন’। কারণ হাজার হাজার প্রার্থী। প্রায় ঘরে ঘরে প্রার্থী। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত এখন গ্রাম-বাংলায় উন্নয়ন করার বা করানোর প্রধান প্রতিষ্ঠান। ষাটের বেশি যে কল্যাণমূলক প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন সেটা কার্যকর করার সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে পঞ্চায়েত। সাধারণ মানুষের আশাভরসার স্থল পঞ্চায়েত। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সে-কারণেই বলেছেন সঠিক প্রার্থী বাছাই করতে হবে। যারা নির্বাচিত হয়ে মানুষকে যোগ্য সম্মান দিয়ে স্বচ্ছভাবে কাজ করবে। সেইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নকে সার্থক রূপ দিতে পারবেন। একটি অভিনব প্রক্রিয়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, মানুষই তার কেন্দ্রের প্রার্থী ঠিক করবে। এই জনসংযোগ যাত্রার সময়েই সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মানুষ নির্ভয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে তাঁর পঞ্চায়েত কেন্দ্রে কাকে প্রার্থী চান সেটা বলতে পারছেন। প্রার্থী বাছাইয়ের এমন ‘চূড়ান্ত’ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আগে কখনও শোনা যায়নি। ‘অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্রের’ কথা শোনা গিয়েছে। কিন্তু সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস এবার যে প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছেন বা অতীতে এদেশের কোথাও হয়েছে কি না তা কেউ বলতে পারছেন না। হয়নি। এতবড় একটি সংগঠনিক কাজ একমাত্র আমাদের পার্টি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই হতে পারে।
আরও পড়ুন: ধন্যি মেয়েদের উপাখ্যান
কয়েকটি জায়গায় সামান্য গোলযোগ হয়েছে। প্রায় অস্তিত্বহীন বিরোধীরা এবং প্রচারমাধ্যম তা নিয়ে কটু মন্তব্য করছে। আমাদের বড় দল। দল সম্পর্কে মানুষের শ্রদ্ধা ও আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী। প্রচুর মানুষ প্রার্থী হতে চান। তার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। আগ্রহের আতিশষ্যে কিছুটা বিপরীত কর্মকাণ্ড হতে পারে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসই পারে এসব সামাল দিয়ে মানুষকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে। এখন সেটাই হচ্ছে। সামনে থেকে, মাঠ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই দৃশ্যটি আমার এবং আমাদের সকলের মন কেড়ে নিয়েছে— একটি দু’বছরের বাচ্চাকে কাঁধে নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হেঁটে যাচ্ছেন। বাচ্চাটি তার মায়ের সঙ্গে মিছিলে এসেছিল। ভাবেনি জনসংযোগ যাত্রা (Jono Sanjog Yatra) জনজোয়ারে পরিণত হয়ে গিয়েছে। মায়ের কোল থেকে আদরে আহ্লাদে বাচ্চাকে হাত বাড়িয়ে নিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঁধে নিয়ে হেঁটে চলেছেন। এক বিশাল খন্দ-বিধুর লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। সব ভেদ তুলে। ছোট বাচ্চাটিকে যেন মনে সাক্ষী রাখছেন। কারা লড়ছে দেশের জন্য, কারা লড়ছে বাংলার জন্য, কারা লড়ছে মানুষের জন্য— ওই এক শিশুর কাছেই সব হিসেব আছে। আমাদের আর কারও কাছে প্রমাণ দেওয়ার নেই। আবালবৃদ্ধবনিতা শামিল হয়েছেন জনজোয়ারে। সাধারণ সম্পাদক নিজেও দুই সন্তানের পিতা। দ্বিতীয়টি তো খুবই শিশু। তাদের রেখে তিনি মিশেছেন মানুষের সঙ্গে। এর মূল্য কী তা বাংলার মানুষ জানে। অমূল্যরতন মানুষ ফিরিয়ে দেবে। দেবেই।
শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের কথাও বলেছেন। রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণ, কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে বিরোধীদের দমন, দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপি নেতাদের জেলের বাইরে রাখার বিরুদ্ধে তিনি তীব্র আন্দোলন ও জনরোষ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। জনসংযোগ যাত্রায় যে বিশাল জনজোয়ার আসছে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
আমাদের সরকারের জনমুখী কাজের প্রচার কম হয় বলে অনেকবার আক্ষেপ করেছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তৃণমূলের নবজাগরণে আর সেই আক্ষেপ থাকবে না। কারণ জনজোয়ারের মাঝে তো বটেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন জনমুখী প্রকল্পের প্রচারে। ক্যারাভ্যান, তাঁবু নিয়ে বিদ্রুপ হয়েছে অনেক। কিন্তু প্রত্যেকটা যাত্রা ও সভাতে সমুদ্রের ঢেউ-এর মতো মানুষ কেন আছড়ে পড়ছে তার ব্যাখ্যা বিরোধীদের কাছে নেই। মানুষের জোয়ার দেখে ওরা ভয় পেয়েছে। মানুষ আমাদের নেত্রী, নেতা ও দলকে আপন করে নিয়ে বাংলা কাঁপিয়ে দিচ্ছে। সমর্থনের, আকাঙ্ক্ষার এই আকাশচুম্বী তরঙ্গ কেউ রাখতে পারবে না। আমাদের নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।