প্রতিবেদন : গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য করার পরে এই প্রথম মৌলবাদীদের হুমকি কিছুটা হলেও উপেক্ষা করার সাহস দেখাল মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নববর্ষের দিন ঢাকায় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বের করা যাবে না বলে বুধবার থেকে হুমকি দিয়েছে জামাতপন্থী একাধিক মুসলিম জঙ্গি সংগঠন ও আন্দোলনের নেতৃত্ব। তা নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক সমাজ ও বিদ্বজ্জন মহলে প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়। কারণ বাংলাদেশের নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রা বহু বছর ধরেই সেদেশের সংস্কৃতি ও পরম্পরার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। ফলে নববর্ষের অনুষ্ঠান পালনের উপর ফতোয়া জারি করলে তার ফল ভাল হবে না বুঝেই এবার জামাতপন্থীদের চাপের কাছে পুরোপুরি নতজানু হয়নি ইউনুস সরকার। আর তাই তাৎপর্যপূর্ণভাবে মৌলবাদীদের হুমকির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিক্ষামন্ত্রক নির্দেশ দিয়েছে, দেশের সব মাদ্রাসায় উদযাপন করতে হবে চৈত্র সংক্রান্তি এবং বাংলা নববর্ষ।
আরও পড়ুন-রাধিকাপুর সমবায় সমিতির ভোটে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ আসলে হিন্দু সংস্কৃতির অঙ্গ, এই ধুয়ো তুলে এর বিরোধিতায় নেমেছে বাংলাদেশের কট্টর মৌলবাদী মুসলিমরা। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে জারি করা এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, চৈত্র সংক্রান্তি, বাংলা নববর্ষ এবং আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উপলক্ষে সব মাদ্রাসায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠান পালন করতে হবে। দু’দিনের অনুষ্ঠানকে উৎসবমুখর করে তুলতে নিতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। লক্ষণীয়, গত ২৩ মার্চ সংস্কৃতি মন্ত্রকের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, দেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হবে নববর্ষ। প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগেই নববর্ষের দিন প্রথম বের করা হয়েছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। সেই অসাম্প্রদায়িক উৎসবের রঙে মুছে গিয়েছিল ধর্মের ভেদাভেদ। ১৯৯০তে পয়লা বৈশাখের সকালের এই অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ৩৯ বছর ধরে সমানে চলে আসছে সেই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। অতীতে এই অনুষ্ঠানের উৎসাহদাতার ভূমিকায় ছিলেন শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া-সহ বিভিন্ন নেতৃত্ব। এই শোভাযাত্রাকে বাংলাদেশের গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। কিন্তু এবার শোভাযাত্রার আগে ‘মঙ্গল’ কথাটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে কট্টর মৌলবাদীরা। নেপথ্যে উসকানি দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের শীর্ষনেতা নিয়াজ আহমেদ খান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের পড়ুয়াদের পাল্টা হুঙ্কার, রীতি মেনে পয়লা বৈশাখের প্রভাতে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবেই। ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করে সাংস্কৃতিক পরম্পরা নষ্ট হতে দেওয়া হবে না।