প্রতিবেদন: বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন ও বর্তমান পরিস্থিতির জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ চার নেতাকেই দোষারোপ করা শুরু করেছেন দলের মধ্যম ও নিচুতলার নেতা-কর্মীরা। বলা হচ্ছে, আওয়ামি লিগ সরকারের যাবতীয় ভুল পদক্ষেপের জন্য মূলত এরাই দায়ী। আর শেখ হাসিনা এই চার অতি প্রভাবশালী নেতাদের কথা চোখ বুজে বিশ্বাস করে দলের জন্য চরম দুঃসময় ডেকে এনেছেন। ক্ষমতাশালী কতিপয় নেতার উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার মাশুল শুধু হাসিনাকেই দিতে হচ্ছে তাই নয়, বাংলাদেশের ভিতরে তীব্র আক্রোশের মধ্যে পড়তে হচ্ছে বিপুল সংখ্যক সাধারণ নেতা-কর্মীদের। দিশাহীন ও দুর্বল অন্তর্বর্তী ইউনুস সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই দেশের মৌলবাদী জামাত আর বিএনপি নেতাদের উপর। আওয়ামি লিগের যে নেতারা এখনও দেশে রয়েছেন জামাত-বিএনপির প্রতিহিংসার আতঙ্কে কাটাচ্ছেন তাঁরা। নির্বিচারে মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি চলছে। বিপন্ন সময়ে এখন দলনেত্রীর পাশাপাশি সাধারণ কর্মীরা দুষছেন হাসিনার চার প্রধান পরামর্শদাতাকেই। তাঁদের ক্ষোভ, এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গ্যাং অব ফোরের জন্য। যাঁরা প্রভাব বিস্তার করে দেশের মানুষের প্রকৃত চাওয়া-পাওয়া ও বাস্তবতা থেকে অন্ধকারে রেখেছিলেন হাসিনাকে।
আরও পড়ুন-সমন্বয়ের অভাব বাড়ছে, বৈঠক ডাকল কেন্দ্র
আওয়ামি লিগের সাধারণ কর্মীদের অভিযোগের আঙুল যে চার নেতার দিকে তাঁরা হলেন শেখ হাসিনার ছেলে তথা তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে পরামর্শদাতা মার্কিনপ্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয়, বাংলাদেশের প্রাক্তন বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। অভিযোগ, এই চারজন স্রেফ নিজেদের স্বার্থে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে হাসিনা সরকারকে ডুবিয়েছেন। এই চারজনকেই চোখ বুজে বিশ্বাস করতেন হাসিনা। তাঁদের পরামর্শের উপর তাঁর পুরোপুরি আস্থা ছিল। অথচ এই নেতাদের বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ ছিল। এখন তা আরও জোরালো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আওয়ামি লিগের যে বাকি নেতারা মাটিতে পড়ে থেকে কাজ করতেন, তাঁদের কথা শেখ হাসিনা শোনেননি। এই গ্যাং অব ফোর নিজেদের স্বার্থেই হাসিনাকে বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা বুঝতে দেননি। অনেকে এও বলছে এই চারজনের প্রভাবে এমনকী শেখ হাসিনার মতো পোড় খাওয়া জননেত্রী নিজের সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলেন। আওয়ামি লিগের একাংশ এখন দুষছেন বিনা নির্বাচনে হাসিনার চতুর্থবার ক্ষমতায় ফেরার সিদ্ধান্তকে। বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার তীব্রতাই বুঝতে পারেনি হাসিনা। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে নির্বাচনে লড়তে চেয়েছিল। তখন হাসনা তা মানলে এই পরিস্থিতি আসত না। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর আওয়ামি লিগের কিছু নেতা হাসিনাকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাও তিনি মানেননি। উল্টে সামরিক গোয়েন্দা শাখার সদস্যদের দিয়ে ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়ে যাওয়া, ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলনকে দমন করার রাস্তায় হাঁটেন। এটাই শেষপর্যন্ত সর্বনাশ করেছে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের। বিরোধীহীন একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগে উৎসাহী দলের উপরতলার কিছু নেতা নিজেদের স্বার্থে আওয়ামি লিগের সাধারণ কর্মীদের বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মত উঠে আসছে।