১৬ এপ্রিল থেকে সর্বস্তরের অভিযান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে চোখে দেখে সমীক্ষা, সন্দেহ হলেই বাতিলের সুপারিশ করুন

শুধু তাই নয়, কাজের দায়িত্ব বণ্টন থেকে তারিখ ও দিন নির্দিষ্ট করে জেলা থেকে বুথ লেভেল পর্যন্ত কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক।

Must read

বাংলাজুড়ে ভুয়ো ভোটার ধরার অভিযান আরও জোরদার করতে একগুচ্ছ পরার্মশ দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে সারাবছর ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করতে বা ভুয়ো ভোটার ধরতে মাঠে থাকবে দল। কোথাও কোনওরকম সন্দেহ হলেই তা বাতিলের সুপারিশ করতে বলা হয়েছে। তার জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। শুধু তাই নয়, কাজের দায়িত্ব বণ্টন থেকে তারিখ ও দিন নির্দিষ্ট করে জেলা থেকে বুথ লেভেল পর্যন্ত কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক।

আরও পড়ুন-‘আইপ্যাকের কেউ টাকা চাইলে হেল্পলাইন নম্বরে জানান’: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

দিল্লি ও মহারাষ্ট্রের ভুল বাংলায় নয় : অভিষেক দিল্লি ও মহারাষ্ট্রের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ওরা যে ভুল করেছে, আমরা সে ভুল করব না। অভিষেক বলেন, দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল চার হাজারের কিছু ভোটে হেরেছেন। দেখা যাচ্ছে বিজেপি সেখানে কায়দা করে ৩৫ হাজারের বেশি ভোটারের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে। আবার মহারাষ্ট্রে শেষ চার মাসে ৩৯ লক্ষ ভোটার যুক্ত হয়েছে। এসব কিছুই ওরা খেয়াল করেনি। কিন্তু আমরা করেছি। বাংলা এসব চলবে না।
ওরা বিজেপির কারচুপি ও ষড়যন্ত্র ধরতে পারেনি। সময় থাকতে তা আমরা ধরে ফেলেছি। তাঁর কথায়, আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। একজনও ভুয়ো ভোটার যেন না থাকে তা সুনিশ্চিত করতে হবে। নতুন ভোটার যেখানে-যেখানে আছে, সেখানে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বছরে চারবার ভোটার তালিকায় নতুন ভোটারের নাম ওঠে। সেখানে ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন ছাড়া কোনও ভোটারের নাম যেন না ওঠে।
জেলা-অঞ্চল-বুথ কমিটি : কমিটির প্রসঙ্গে তুলে অভিষেক বলেন, আগামিকাল থেকে নতুন কমিটি তৈরির কাজ শুরু হবে। যেখানে-যেখানে বিএলএ-১ আছে তারা বিএলএ-২ নিয়োগ করবে। এর জন্য জেলায় সাংগঠনিক বৈঠক করে পাঁচটি করে নাম পাঠাবেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির কাছে। আগামী ১৭ তারিখের মধ্যে এই নাম পাঠাতে হবে। আগামী ২৭ তারিখের মধ্যে ব্লক ও টাউন কমিটি তৈরি করতে হবে। ২৮ তারিখ থেকে অঞ্চল কমিটির কাজ শুরু হবে। ৩ এপ্রিল তা পেশ করতে হবে। ৪-১৪ এপ্রিল বুথ কমিটির কাজ শেষ করতে হবে। এর মধ্যে বিএলএ-২-র নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। জেলা কমিটি মাসে একটা করে বৈঠক করবে। ব্লক কমিটি ১৫ দিন অন্তর বৈঠক করবে। টাউন কমিটি দু’সপ্তাহ অন্তর আর অঞ্চল কমিটি একবার বসবে। বিএলএ-১ এবং বিএলএ-২— এদের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে ভোটার লিস্ট সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ রেখে প্রতিটি বিষয় দেখবে।
প্রশিক্ষণ শিবির : আগামী ১৫ এপ্রিলের আগে প্রতিটি বিধানসভায় প্রশিক্ষণ শিবির হবে। ৩৬ জনের মধ্যে এখান থেকে চার-পাঁচজন করে প্রতিটি বিধানসভায় যাবে এবং এদের সঙ্গে আইপ্যাকের প্রতিনিধিরাও থাকবে। তারা টেকনিক্যাল বিষয়ে বুঝিয়ে দেবে। ১৫ এপ্রিলের মধ্যে শেষ না হলে ৩০ এপ্রিলের শেষ করা হবে।
প্রত্যাশিত ফল হয়নি কেন : বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরে অভিষেক বলেন, বেশ কিছু জেলায় প্রত্যাশিত ফল হয়নি। একাধিক জেলার উদাহরণ তুলে অভিষেক বুথ ভিত্তিক ভোটের অঙ্ক দিয়ে দেখান বহু জায়গায় ৫০টির বেশি ভোটে দল হেরেছে সেখানে কেন হেরেছে তার সমীক্ষা করতে হবে। জেলা সভাপতিদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, সাংগঠনিক বৈঠক দেখে বুথ অঞ্চল এবং দলীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এর সুরাহা করতে হবে।
জনসংযোগ আরও নিবিড় করতে হবে। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতে হবে যে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও সমস্ত সামাজিক প্রকল্প চালু রেখেছে। তবু কেন তারা সরকারের পক্ষে বা তৃণমূলের পক্ষে আসছেন না সেটা নিজেদেরকেই খুঁজে বার করতে হবে। ফাঁকগুলোকে পূরণ করতে হবে। কবে শীর্ষ নেতৃত্ব বা রাজত্ব থেকে কর্মসূচি দেওয়া হবে সেই আশায় বসে থাকলে চলবে না, নিজেদেরও কর্মসূচি নিতে হবে।
৫০ শতাংশের বেশি হারে রদবদল : যেসব জায়গায় গড়ে ৭০ শতাংশের বেশি ভোটে হেরেছে সেখানে ঢালাও রদবদলের সুপারিশ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োজনে অঞ্চল এবং বুথ সভাপতি ও বদলের কথা বলেছেন।

আরও পড়ুন-তৃণমূল কংগ্রেসের চাপে মুখরক্ষার চেষ্টা, আধার-ভোটার কার্ড ইস্যুতে মঙ্গলে বৈঠক ডাকল কমিশন

আইপ্যাক-এ ক্রসচেক : বহু ক্ষেত্রে আইপ্যাক-এর নাম করে পদ পাইয়ে দেওয়া বা টাকা চাওয়ার অভিযোগ এসেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। এদিনের ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন এই ধরনের প্রতিশ্রুতি কেউ দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা তাঁর অফিসে জানাতে হবে। একটি নম্বর দিয়েছেন সে কারণে। সেটি হল ৮১২৪৬৮১২৪৬
অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর অফিস থেকে কেউ গেলে আগে থেকেই জেলা সভাপতিদের জানিয়ে দেওয়া হবে কখন কোন সময় তাঁর প্রতিনিধি যাচ্ছেন, এর অন্যথা হলে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে।
সন্দেশখালি ও আরজি কর : বিজেপি সন্দেশখালি ও আরজি করের ঘটনাকে সামনে এনে বাংলাকে কালিমালিপ্ত করেছে। আগামী দিনে আরও বেশি করে রাস্তায় থেকে পাল্টা প্রচার করতে হবে। এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়া যাবে না।

Latest article