শনিবার আগস্টের শুরুতেই শুরু হতে চলেছে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ (Amader Para Amader Samadhan) কর্মসূচি। তার আগে বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সমস্ত জেলার জেলাশাসকদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করলেন। বৈঠকে মূলত তিনটি ইস্যুতে জোর দেওয়া হয়—ভিন রাজ্যে অত্যাচারিত রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যেই কর্মসংস্থান, বন্যা পরিস্থিতি, ডেঙ্গির প্রকোপ এবং আসন্ন পাড়াভিত্তিক পরিষেবা কর্মসূচি।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, প্রথম আধ ঘণ্টা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। এরপর রাজ্যের মুখ্যসচিব বৈঠক চালিয়ে যান জেলাশাসকদের সঙ্গে। এই বৈঠকে জেলাশাসকদের তিনটি স্পষ্ট নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
* প্রথমত, ভিনরাজ্য থেকে অত্যাচারিত বা সমস্যায় পড়ে যারা রাজ্যে ফিরছেন, সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের যেন কোনওরকম খাওয়া-পরার অসুবিধা না হয়। সমস্ত জেলা প্রশাসনকে তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে দ্রুত সহায়তা পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে।
*দ্বিতীয়ত, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলাকালীন একজন ন্যায্য ভোটারও যেন বাদ না পড়েন—এই বিষয়ে কড়া নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে, তৃণমূল বা বিরোধী—সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে যেন সুষ্ঠুভাবে এই কাজ সম্পন্ন হয়।
*তৃতীয়ত, যেসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানকার মানুষ যেন সরকারি ত্রাণ ও পরিষেবা থেকে কেউ বঞ্চিত না হন। সীমান্তবর্তী ব্লকগুলির ক্ষেত্রে আরও বাড়তি নজরদারি রাখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।জেলায় জেলায় কীভাবে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ (Amader Para Amader Samadhan) প্রকল্প কার্যকর হবে, কোথায় কোথায় ক্যাম্প বসবে, কোন দপ্তরের কী দায়িত্ব—তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। প্রতিটি পঞ্চায়েত ও পুর এলাকায় এই ক্যাম্প বসানোর নির্দেশ ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। নাগরিক পরিষেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই রাজ্য সরকার এই কর্মসূচি নিয়েছে।
আরও পড়ুন-বর্ষায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ জেলাশাসকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে মুখ্যসচিব, দিলেন একাধিক নির্দেশ
তবে শুধু এই কর্মসূচি নয়, বর্ষার মরসুমে ডেঙ্গি ও বন্যা নিয়েও বিশেষ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাসকে ঘিরে ফের একবার বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন, প্লাবনপ্রবণ এলাকাগুলিতে মানুষকে আগেভাগেই সরিয়ে আনার প্রস্তুতি রাখতে হবে। তিস্তা সহ একাধিক নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং, কালিম্পং, উত্তর দিনাজপুরে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সচিব দুষ্মন্ত নারিয়ালাকে এই বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা শাসকদের বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত রাখতে হবে এবং সমস্ত বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থাকে তৈরি রাখতে হবে।
রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই ডেঙ্গির প্রভাব বাড়ছে। বুধবারই ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যসচি পৃথক বৈঠক করেছিলেন। বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও সেই প্রসঙ্গ ফের ওঠে। বিশেষ করে পুরসভাগুলিতে নিকাশি ব্যবস্থা, জঞ্জাল অপসারণ ও জল জমে থাকার জায়গাগুলিতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় হাজারখানেক মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতর, পুর ও পঞ্চায়েত দফতরকে যৌথভাবে নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।