আমার গুরুমা সংযুক্তা পানিগ্রাহীর মাধ্যমে বিরজু মহারাজের সান্নিধ্যলাভ। ওঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৬-তে, নিউইয়র্কের বঙ্গসম্মেলনে। ওঁর অনুষ্ঠান ছিল। আমারও ছিল। সেই সূত্রে । এরপর আর দেখা হয়নি। বয়সজনিত কারণেই গুরুজি বেশি ঘোরাঘুরি করতে পারতেন না।
আরও পড়ুন-নিঃসংলাপেও সংবেদ্য তাঁর আকলন
অরবিন্দ ইনস্টিটিউট অব কালচারে একটা অ্যাকাডেমি হওয়ার কথা হয়েছিল। সেই সুবাদে আমি একটা মহারাজজি কে নিয়ে তিনদিনের ওয়ার্কশপ করেছিলাম। এই সময় ওঁকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।
আমি তো কত্থক নৃত্যকলার সঙ্গে যুক্ত নই, ওড়িশি নৃত্যের ছাত্রী। তাই, কত্থকের ক্লাস চলার সময় আমি দূরে দাঁড়িয়ে দেখতাম। মাঝে মধ্যে একটু নাচতাম। উনি আমাকে একদিন বললেন, “বেটি, ইধার আ। কত্থক কিউ নেহি শিখা!”
আরও পড়ুন-আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা
আমি বললাম, শিখা নেহি গুরুজি।
উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “ কত্থক শিখেগা?”
একেবারে শিশুর মতো ছিলেন।
বিরজু মহারাজ এবং গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের যুগল অনুষ্ঠানের কথা ভাবা যায় না। অনবদ্য। দুজনে রাধা-কৃষ্ণ করতেন। স্বর্গীয় সব মুহুর্ত তৈরী হত। ঈশ্বরের সঙ্গে এভাবেই যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব, প্রতিপদে তা দেখিয়ে দিয়েছেন ! আমরা সেসব মুহূর্তের কাছে ঋণী । বিরজু মহারাজ কৃষ্ণের আরাধনা করতেন।
অসাধারণ সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। তেমনই দারুণ তবলা বাজাতেন। চাইলে একজন বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী হতে পারতেন। শেষের দিকে তো হাত নাড়িয়ে শুধু গানই গাইতেন।
সেই বিরজু মহারাজ চলে গেলেন।
আরও পড়ুন-করোনার কোপে
সব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। আমার মনে হয় না ওঁদের মতো গুরু আর কোনওদিন পাওয়া যাবে। এই স্নেহ -ভালোবাসা, সন্তানের মতো করে দেখা – এই যুগটা বোধহয় হারিয়ে যাচ্ছে। শ’য়ে শ’য়ে নৃত্যশিল্পী তৈরি করে গিয়েছেন। তাঁর কাজ, জীবনবোধ, তাঁর বিস্তার রেখে গিয়েছেন শাশ্বতী সেনের মতো ছাত্রীদের মধ্যে। ওঁর কাজ, ওঁর পরম্পরাকে এঁরাই নদীর মতো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যাবেন। এঁদের মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকবেন বিরজু মহারাজ।
সার্থক শিল্পীরা তো কেউ নিজের জন্য বাঁচেন না। সবার মধ্যে নিজের শিল্পের প্রসৃতিতেই তো তাঁদের অমরত্ব অর্জন।