নাশকতা না কি দুর্ঘটনা? এটা বুঝতেই লেগে গেল অনেকটা সময়। শেষমেশ যা উঠে এল তা চুম্বকে এরকম—
জইশ-ই-মহম্মদের ‘হোয়াইট কলার মডিউল’ এই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। তারাই এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। সেটা এখন স্পষ্ট।
এই হোয়াইট মডিউলের জাল সীমান্তের ওপার পর্যন্ত বিস্তৃত। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
হোয়াইট মডিউলের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদীদের অর্থ জোগানো, সন্ত্রাসবাদীদের নিয়োগ করা এবং অস্ত্র পাচার চালানো হত। এ ব্যাপারে একটি আন্তর্জাতিক চক্র সক্রিয় ছিল। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তৎপরতায় ওই আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী মডিউলের হদিশ মিলেছে।
গোয়েন্দারা নাকি এখন খোঁজ চালাচ্ছেন দুটি বিষয়ে—
বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া হুন্ডাই আই ২০ গাড়ির চালক ডাঃ উমর নবি ও ফরিদাবাদে যাঁর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছিল সেই ডাঃ মুজাম্মিল গনাই, এই দুজন তুরস্কে গিয়েছিলেন ট্রেনিং নিতে। দুজনের পাসপোর্টেই তুরস্কের ছাপ মিলেছে। তুরস্কেই তাঁদের সঙ্গে ভিন দেশি সন্ত্রাসবাদী হ্যান্ডেলারের যোগাযোগ হয়েছিল কিনা।
বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হুন্ডাই আই ২০ গাড়িটির সঙ্গে একটা লাল রঙের ফোর্ড ইকো স্পোর্ট গাড়িও ছিল। সেটা কোথায় গেল?
আরও পড়ুন-উৎসবের আলো
এইসব উপাত্ত ও কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে নানা অনুত্তরিত জিজ্ঞাসার উদয় হচ্ছে, হয়েই চলেছে, একের পর এক। প্রশ্নগুলো সাজিয়ে দিলাম, হয়তো পরপর নয়, খানিকটা এলোমেলোভাবেই।
অমিত শক্তিধর অমিত শাহের গোয়েন্দাদের তো অজানা ছিল না কিছুই। তাঁরা তো জানতেন, কে বা কারা পোস্টার লাগাচ্ছে। কোন ডাক্তার কার রান্নাঘরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত করছেন, সবকিছুই। তবু তাঁরা আটকাতে পারলেন না লালকেল্লার মতো সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় হিসেবে চিহ্নিত একটা এলাকার জঙ্গিদের ঘটানো বিস্ফোরণ! কেন?
ভোটের বাজার গরম করতে নরেন্দ্র মোদি সর্বত্র সর্বদা বলেছেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ জারি হয়েছে। তবু বাঁচানো গেল না ১৩টি নিরীহ প্রাণ। কেন?
‘জইশ-এর বদলা’। ‘হোয়াইট কলার মডিউল’। এসব তো শুনছি, শুনেই চলেছি। কিন্তু যেটা জানতে চাইছি, সেটা হল, দিল্লির বিস্ফোরণ যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, সেটা বুঝতে ও জনসমক্ষে বলতে অমিত শাহর দফতর ৪৮ ঘণ্টা সময় নিল কেন?
সেদিন বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে উমর নাকি লালকেল্লার পার্কিং লটে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বসেছিল। যে লালকেল্লায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বদা কঠোর। সেখানে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিস্ফোরক মজুত করা একটা গাড়িতে জনৈক ‘আত্মঘাতী জঙ্গি’ বসে বসে খবর পড়ছিলেন! কেন?
গোদি মিডিয়ার একাংশ আবার ক্যালেন্ডার ভুল করার তত্ত্ব খাড়া করেছে। উমর নাকি জানতই না সোমবার লালকেল্লা বন্ধ থাকে। তাই সেখানে পৌঁছে সেকথা জানতে পেরে সে হতাশ হয়ে পড়ে। তাই ওখানে ৩ ঘণ্টা বসে থাকার পর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আচমকা বিস্ফোরণ ঘটে যায়। শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখে এই তত্ত্ব খাওয়ানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু অযুত হিসাবনিকাশ করে যে জঙ্গি ঢুকে পড়ল প্রধানমন্ত্রীর নাকের ডগায়, হাই সিকিওরিটি জোনে, তার জানা ছিল না সোমবার লালকেল্লা বন্ধ থাকে কিংবা সে গোলমাল করে ফেলেছিল সেদিন সোমবার না অন্য কোনও বার! এসব কথা কাকে গেলাতে চাইছেন কত্তা? শুনলে তো ঘোড়াতেই হাসবে।
গত ২৬ জানুয়ারি জইশ-ই-মহম্মদের ছকের খবর শোনা যায়নি। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় দাবি করা হয়েছিল ঘরে ঢুকে জইশকে নির্মূল করা হয়েছে তা যদি সত্যি হবে, তবে কীভাবে সাত মাসের মধ্যে জইশ ভারত জুড়ে জাল বিছিয়ে, গোয়েন্দাদের বোকা বানিয়ে আর একটা হামলার ছক কষল?
গোদি মিডিয়ার একাংশ আবার বলছে, আগামী ৬ ডিসেম্বর, বাবরি ধ্বংসের দিন হামলার ছক কষেছিল জঙ্গিরা। ধৃত সন্দেহভাজনদের জেরা করে এই তথ্য নাকি জেনেছেন অমিত শাহর গোয়েন্দারা। এত কিছু জানলেন যাঁরা, তাঁরা কিন্তু এখনও জানতে পারেননি, ৬ ডিসেম্বরের হামলার জন্য ১০ নভেম্বর বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে উমর কেন দিল্লিতে গেল এবং সেখানে ১১ ঘণ্টা ধরে কখনও কনট প্লেস, কখনও অক্ষরধাম ঘুরে ঘুরে বেড়াল, আর কেনই বা শেষে লালকেল্লায় এসে তিন ঘণ্টা ধরে বিশ্রাম নিল? ৩ ঘণ্টা ধরে বিস্ফোরক ঠাসা গাড়িতে বসে সে কী করছিল?
এসব প্রশ্নের উত্তর মনে হয় কোনও দিনই জানতে পারব না আমরা।
আরও পড়ুন-৩০ বছরে জলবায়ু ঝুঁকিতে বিশ্বে ৯ নম্বরে ভারত
ঠিক যেমন জানতে পারব না, দিল্লিতে বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশ জুড়ে সতর্কতা জারি হওয়ার ফলে বীরভূমে নাকা তল্লাশির জেরে গাড়ি-ভর্তি অবৈধ বিস্ফোরক ধরা পড়লেও তা নিয়ে বঙ্গ-বিজেপির মুখে কুলুপ কেন?
তার সম্ভাব্য কারণ এই যে, নলহাটি থানার পুলিশ সঙ্কেতপুর এলাকা থেকে যে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িটি ধরেছে সেটিতে ৫০টি ব্যাগে ২০ হাজার জিলেটিন স্টিক ছিল, কিন্তু সে-গাড়ি কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নন, তিনি একজন হিন্দু, নাম নারায়ণ ঘোষ।
কালীমূর্তি ভাঙার ঘটনাতেও একজন নারায়ণ দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বিজেপির নাচনকোঁদন স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।
এবারও বুঝি তাই!

