প্রতিবেদন : এককথায়, নড়বড়ে সরকার বাঁচানোর বাজেট। কোনওভাবেই যাকে বলা যায় না ইউনিয়ন বাজেট। প্রকৃত অর্থেই একে বলা যেতে পারে বিহার-অন্ধ্রপ্রদেশের বাজেট। বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য মঙ্গলবার যেভাবে কল্পতরু হয়ে উঠলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, তাতে যে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি এবং আদর্শের আবমাননা করা হয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। এবং যথারীতি বঞ্চিত করা হয়েছে বাংলাকে। কেন্দ্রের সংকীর্ণ মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশকে খুশি করাই এই বাজেটের আসল লক্ষ্য। আর্থিক বরাদ্দের বড় অংশই রাখা হয়েছে এই ২ রাজ্যের জন্য। বাংলা বঞ্চিতই ছিল, বঞ্চিতই রয়ে গেল। এই বাজেটে উল্লেখযোগ্য কোনও দিশা নেই। রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রায় একই সুরে মন্তব্য করেছেন, এটা ব্যর্থ বাজেট, আবার জিরো ওয়ারান্টি। ২ জোট শরিককে ঘুষ দিতে এই বাজেট। একটি সরকার বিস্ফোরণের আগে আসলে সময় কিনতে চাইছে। প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, এটা কুর্সি বাঁচাও বাজেট। এই বাজেট দেশের জন্য নয়। বাংলাকে কিছুই দেওয়া হয়নি। ওরা আসলে বাঙালিদের সহ্য করতে পারে না। প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের কথায়, এটা দেশের বাজেট নাকি বিহার, অন্দ্রপ্রদেশের বাজেট তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ভেট দেওয়ার বাজেট। গদি টেকানোর বাজেট।
আরও পড়ুন-জিরো গ্যারান্টি, জিরো ওয়ার্যান্টি : অভিষেক
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, বিহারে শুধুমাত্র ৪টি এক্সপ্রেসওয়ে এবং একটি সেতু তৈরির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। দরাজ হাতে টাকা দেওয়া হচ্ছে কোশী নদী-সহ বিহারের সামগ্রিক বন্যা নিয়ন্ত্রণে। পাশাপাশি রাজগির, নালন্দার পর্যটনেও বরাদ্দ করা হয়েছে ঢালাও অর্থ। এখানেই শেষ নয়, ভাগলপুরে ২৪০০ মেগাওয়াটের বিদ্যৎপ্রকল্প, নতুন বিমানবন্দর, মেডিক্যাল কলেজ এবং ক্রীড়া পরিকাঠামোও আছে নীতীশকে দেওয়া পুরস্কারের তালিকায়। আর চন্দ্রবাবু নাইডুকে তোয়াজ করতে গিয়ে অন্ধ্রের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের অঙ্ক ১৫ হাজার কোটি টাকা। সঙ্গে আরও বেশ কিছু প্রকল্পের জন্য ঢালাও বরাদ্দ। অথচ নির্লজ্জভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে বাংলাকে। বাংলার প্রাপ্য দীর্ঘদিনের বকেয়া টাকার ব্যাপারে গেরুয়া বাজেটে খরচ করা হয়নি একটি বাক্যও। সবচেয়ে অবাককাণ্ড, বিহারে বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিশাল অঙ্কের টাকা বরাদ্দ করা হলেও প্রতিবেশী রাজ্য বাংলার বন্যা-নিয়ন্ত্রণে অর্থবরাদ্দের ক্ষেত্রে অনীহায় প্রমাণিত হল মোদির প্রতিহিংসাপরায়ণতা। আসলে নীতীশ এবং চন্দ্রবাবুর ক্ষেত্রে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর নীতি নিয়েছেন মোদি। সমর্থনের বিনিময়ে দু-জনের শর্ত ছিল বিহার এবং অন্ধ্রের জন্য বিশেষ মর্যাদা। কিন্তু মোদির পক্ষে সেই দাবি পূরণ করা সম্ভব না হওয়ায় পাছে দুই চূড়ান্ত সুবিধাবাদী মুখ্যমন্ত্রী ভোলবদল করে মোদির সরকারকে ফেলে দেন, সেই ভয়েই দুজনের কাছেই কল্পতরুর ভূমিকায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। শুধু বিহার বা অন্ধ্র নয়, নয়া গেরুয়া শাসনে আসা রাজ্য ওড়িশার জন্যও ধর্মীয় পর্যটনের নামে মোটা অঙ্ক বরাদ্দ করা হয়েছে। গেরুয়া অসম এবং উত্তরাখণ্ডের বন্যা-নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ উদ্যোগ প্রতিফলিত হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেট বরাদ্দে। সবমিলিয়ে নিজেদের এবং শরিক দলগুলোর স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিজেপির সংকীর্ণ রাজনীতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি।