ভিনরাজ্যে বাঙালি শ্রমিক হেনস্থা: হরিয়ানার চিঠি ঘিরে ফের ক্ষোভে ফুঁসলেন মুখ্যমন্ত্রী

Must read

বিজেপি সরকারের প্ররোচনায় সমস্ত ডবল ইঞ্জিন রাজ্যে বাঙালিদের উপর আক্রমণ অব্যাহত। ভিনরাজ্যে কর্মরত বাঙালি শ্রমিকদের উপর বারবার হেনস্থার অভিযোগ উঠছে। তাতে নবতম সংযোজন বাংলাদেশি সন্দেহে ৫২ জন শ্রমিককে নিয়ে রাজ্যকে হরিয়ানা সরকারের চিঠি। যার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ফুঁসে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata banerjee)। জানিয়ে দিলেন এই “ভাষা সন্ত্রাস” কোনো ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। সারা দেশের বাংলা ভাষীদের পাশে দাঁড়িয়ে তার আশ্বাস- ভয় পাবেন না। বাংলা সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আইনত যা যা করা দরকার করব।” একই সঙ্গে রাজনৈতিকভাবেও এই বাংলা বিদ্বেষের মোকাবিলা করবে তৃণমূল কংগ্রেস। ২৭ জুলাই থেকে রাজ্য জুড়ে পূর্ব ঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি তো হবেই। এছাড়া তিনি যেখানে যেখানে জেলা সফরে যাবেন সেখানেই বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাসের প্রতিবাদে মিছিল করবেন বলে এদিন জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। ২৭ এবং ২৮ জুলাই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করতে বীরভূম যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেও একই ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হবে।

একুশে জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata banerjee)। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে সেই প্রসঙ্গেই ফের সরব হন তিনি। একই সঙ্গে জানান কেন্দ্রীয় সরকারের মদত পুষ্ট নোংরা খেলা এখনো অব্যাহত। নাগরিকত্বের প্রমাণ চেয়ে চোখের বিজেপি শাসিত আসামের ফরেন ট্রাইব্যুনালস এর চিঠি পেয়েছেন ফালাকাটার দুই বাসিন্দা। একই সঙ্গে হরিয়ানা সরকারের তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার এবং ডিএমদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে ৫২ জন শ্রমিকের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহ করা হয়েছে বলেই ইঙ্গিত। এই শ্রমিকেরা মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার ও উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা।

আরও পড়ুন- দেশে প্রথম, ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’: নয়া প্রকল্প ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

একথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওরা কী চাইছে, বাংলা দখল করতে? এখানে কি ভাষা সন্ত্রাস চলছে? এ বার জেলা বেছে বেছে মানুষদের সঙ্কটে ফেলার চেষ্টা চলছে। তবে আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমরা আমাদের কাজ আমাদের মতো ঠিক করব। কেউ ভয় পাবেন না। এই সব করে ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দিয়ে মহারাষ্ট্র ও দিল্লির মতো বাংলা জিতব, তবে বিজেপি ভুল করছে।” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, এটা খুবই উদ্বেগজনক। নিরীহ শ্রমিকদের বাংলাদেশি বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন রুটি-রুজির জন্য যারা পরিশ্রম করেন, তাঁদের এইভাবে অপমান করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। পাশাপাশি, কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানার প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “বাংলার শ্রমিকদের হেনস্তা করা হচ্ছে, অথচ পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিদের এখনও ধরা যাচ্ছে না কেন?” মণিপুরের অশান্তি ঘিরে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকেও কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, বাংলার ব্যাপারে কী ভাবে অসম হস্তক্ষেপ করে? এটা অসাংবিধানিক এবং অনৈতিক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ডবল ইঞ্জিন বিজেপি সরকারকে বলব নিজের চরকায় তেল দিন। আপনা যদি মনে করেন এ ভাবে দেশ চালাবেন, তবে দেশ বিভক্ত হয়ে যাবে।আমাদের দিক না তাকিয়ে আগে নিজের ঘর সামলান। আগুন লাগলে ঘর বাঁচাবেন কীভাবে ভাবুন।”

সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “বাংলার উপর অত্যাচার বরদাস্ত করব না। বাংলা আগে এক নম্বরে ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।”এই ইস্যুতে কেন্দ্রের নীরবতাও প্রশ্নের মুখে তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, “জাতি-ধর্ম-ভাষা বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি। এবার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিশানা করছে। ওদের রুখতেই হবে।”
নবান্ন সূত্রে খবর, ওই ৫২ জন শ্রমিকের সুরক্ষা এবং তথ্য যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। প্রয়োজনে হরিয়ানা সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের পথে হাঁটবে প্রশাসন।

Latest article