সংঘর্ষে ফের মৃত্যু, ঢাকায় কার্ফু, নামল সেনা

বেলা আড়াইটা নাগাদ সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। মীরপুর এলাকার দখল নেয় পুলিশ এবং ছাত্রলিগ-যুবলিগ।

Must read

সৌম্য সিংহ: বাংলাদেশে জারি করা হল কার্ফু। নামানো হল সেনা। বিবিসিকে উদ্ধৃত করে এখবর জানিয়েছেএকটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিক। কোটা বিরোধী আন্দোলন আরও হিংসাত্মক রূপ নেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে। বাংলাদেশের নরসিংদী জেলে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। ১০০র বেশি বন্দি পলাতক। আন্দোলনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১০৫ হয়েছে বলে বেসরকারি সূত্রে দাবি।

আরও পড়ুন-তথ্য-প্রযুক্তি, বিশ্ব-বিভ্রাট, বিপর্যস্ত বিমান ব্যাঙ্ক-মিডিয়া

অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে। দফায় দফায় সংঘর্ষের জেরে ঢাকা যেন উপদ্রুত রাজধানী। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শুক্রবার ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩ জন— আবদুল গনি(৪৫), রাকিব(২২) এবং রাসেল। গুলশানের একটি হোটেলে স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করতেন গনি। সকালে উত্তর বাড্ডার বাড়ি থেকে কাজে বেরিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরে তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর আসে ছেলে আল আমিনের কাছে। মুন্সিগঞ্জের ছেলে রাকিব বিদ্যুতের কাজ করতেন। তাঁর মাথায় ছিল গভীর ক্ষতচিহ্ন। আফতাবনগর এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। দু’জনকেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এদিন দুপুর ২-২০ মিনিট নাগাদ মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। আর জুম্মার নামাজের পরে রাসেলকে আনা হয় রামপুরার ফরাজী হাসপাতালে। এই হাসপাতালে প্রায় ২০০ জনকে গুরুতর জখম অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪০। একটি ইংরেজি সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪। তবে বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। সরকার এই সংখ্যাটা কমিয়ে দেখাচ্ছে বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।

আরও পড়ুন-যৌন হেনস্থার অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

টিভি অফিসে ভাঙচুর-আগুন
বৃহস্পতিবার রাতের দিকে ঢাকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের অফিসে চড়াও হয়ে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় সশস্ত্র আন্দোলনকারীরা। ঢাকায় ১৯ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, নরসিংদী, মাদারীপুর,সিলেট, রংপুর, ঢাকার সাভার থেকে আরও ৮ জনের মৃত্যুর খবর আসে।

নামল ৩০০ প্লাটুন বিবিজি, বন্ধ ট্রেন, নিষিদ্ধ সভাসমিতি
শুক্রবার বিরোধীদের কমপ্লিট শাটডাউন আন্দোলন আরও হিংসাত্মক চেহারা নেওয়ায় বাংলাদেশ জুড়ে ৩০০ প্লাটুন বিজিবি বা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর জওয়ান নামানো হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই নামানো হয়েছে ৭৫ প্লাটুন। শুক্রবার বেলা পৌনে ৩টে নাগাদ বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সমস্ত স্পর্শকাতর এলাকার দখল নিয়েছে তারা। এদিকে এদিনই ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে সমস্তরকম সভাসমাবেশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে ইন্টারনেটে। শুক্রবার দুপুর ১২টার পর থেকে সারা দেশে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচলও। এদিকে আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অশান্তির খবর আসছে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর সহ বিভিন্ন জেলা থেকেও।

আরও পড়ুন-গাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে নোংরা গালাগালি, চটি তুলে মারতে ছুটল গদ্দার

সংঘর্ষ অব্যাহত জুম্মাবারেও, টহল হেলিকপ্টারের
বৃহস্পতিবারের পরে শুক্রবার জুম্মাবারেও ঢাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং ছাত্রলিগ-যুবলিগের সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ঢাকার বাড্ডা, রামপুরা, যাত্রাবাড়ি, পল্টন, প্রেস ক্লাব, সেগুনবাগিচা, উত্তরা, মোহম্মদপুর-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর আসে। বেলা ৩টে নাগাদ বাড্ডায় হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা যায়। রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্ক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পালা চলে। ইট-পাটকেলের জবাবে সাউন্ড গ্রেনেড এবং কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। দুপুরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে মীরপুরের ১০ নম্বর গোলচত্বরেও। প্রেস ক্লাব এবং সেগুনবাগিচা, শিল্পকলা অ্যাকাডেমি, বিজয়নগর-সহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ হয় বিএনপি সমর্থকদের। বেলা আড়াইটা নাগাদ সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। মীরপুর এলাকার দখল নেয় পুলিশ এবং ছাত্রলিগ-যুবলিগ।

আরও পড়ুন-নারী জাগরণে সারদামণি

পাসপোর্ট অফিসে আগুন
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সাইনবোর্ড এলাকায় পাসপোর্ট অফিসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। আগের রাতে আগুন লাগানো হয় পিবিআই অফিস এবং আওয়ামি লিগের অফিসে।

ফিরছেন পড়ুয়ারা
এদিকে ভারত এবং নেপালের মোট ৪৯ জন পড়ুয়া চুয়াডাঙার দর্শনার চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে ফিরে আসেন। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ১১টার মধ্যে তাঁরা ফিরে আসেন এপারে। আরও অনেক শিক্ষার্থী দেশে ফেরার অপেক্ষায়।

Latest article