প্রতিবেদন: সম্প্রতি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu Kashmir) অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী, রেল পরিষেবা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর ফের হামলার পরিকল্পনা করছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। এই বার্তাকে ঘিরে প্রশাসনের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা কিছু জঙ্গি সংগঠন, বিশেষ করে লস্কর-ই-তৈবা এবং জৈশ-ই-মহম্মদ ইতিমধ্যেই আইএসআইয়ের নির্দেশে জম্মু ও কাশ্মীরে তাদের নেটওয়ার্ক সক্রিয় করেছে। লক্ষ্য, নিরাপত্তা বাহিনীর টহলদার দল, রেল অবকাঠামো এবং বিশেষ করে নির্মাণ কাজে নিযুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর হামলা চালানো। গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, হামলার সময় নির্দিষ্ট করে বেছে নেওয়া হতে পারে কোনও বড় উৎসবের আগে বা কোনও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সফরের সময়। বর্তমানে কাশ্মীর (Jammu Kashmir) উপত্যকায় পরিযায়ী শ্রমিকদের উপস্থিতি অনেক বেড়েছে, কারণ নানা সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়নমূলক প্রকল্পে কাজ চলছে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, শ্রমিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হলে একদিকে যেমন জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো যাবে, অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্পগুলিকে ব্যাহত করা সম্ভব হবে, যা বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির পুরনো কৌশল। একইসঙ্গে রেল পরিষেবাকে আঘাত করার পরিকল্পনার মাধ্যমে সাধারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করার ছক আঁকা হয়েছে।
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আগাম জরুরি সতর্কবার্তায় জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ, কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী এবং রেল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জম্মু থেকে বারামুলা পর্যন্ত রেলপথে নিরাপত্তা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি যেসব এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকরা অবস্থান করছেন, সেইসব স্থানে নিয়মিত তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও মজবুত করতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন গতিবিধি নজরে রাখতে সিসিটিভি ক্যামেরা, ড্রোন নজরদারি এবং ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাজকর্ম বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হয়েছে, যাতে কোনও আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই তা ঠেকানো সম্ভব হয়।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে কাশ্মীরে পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর জঙ্গি হামলার ঘটনা নতুন কিছু নয়। ২০২১ এবং ২০২২ সালে একাধিকবার নির্মাণকর্মী ও ফল বিক্রেতাদের নিশানা করে হামলা চালানো হয়েছিল, যার ফলে বহু পরিযায়ী শ্রমিক কাশ্মীর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। গোয়েন্দাদের মতে, সেই পুরনো কৌশলকেই নতুন করে কার্যকর করতে চাইছে আইএসআই ও তাদের মদতপুষ্ট সংগঠনগুলি। এই সতর্কবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ এবং বিশেষত পর্যটক ও শ্রমিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন-চাপের মুখে ইরানের মধ্যস্থতা ও চিনের সমর্থন চাইল পাকিস্তান