তথ্যচিত্রে অপর্ণা

দেশ-বিদেশের উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে সুমন ঘোষ পরিচালিত তথ্যচিত্র 'পরমা : এ জার্নি উইথ অপর্ণা সেন’। স্পেশ্যাল স্ক্রিনিং হয়েছে শহরে। দেখেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন ভাললাগার কথা। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

সত্যজিৎ রায়ের ‘তিন কন্যা’র মাধ্যমে অভিনয়জীবন শুরু অপর্ণা সেনের (Aparna Sen)। ছিলেন ‘সমাপ্তি’ অংশে। মৃন্ময়ীর চরিত্রে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে দেখা গেছে বহু ছবিতে। বাবা চলচ্চিত্র সমালোচক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা চিদানন্দ দাশগুপ্ত। সত্যজিৎ রায়ের বন্ধু। মা সুপ্রিয়া দাশগুপ্ত, সম্পর্কে কবি জীবনানন্দ দাশের খুড়তুতো বোনের মেয়ে।
অপর্ণা তাঁর শৈশব কাটিয়েছেন হাজারিবাগ এবং কলকাতা শহরে। কলকাতার মডার্ন হাই স্কুল ফর গার্লস-এ লেখাপড়া। পরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রী হিসেবে ছিলেন কৃতী। সাহিত্য ভালবাসেন। বিশেষত কবিতা। করেন আবৃত্তি।
‘তিন কন্যা’ ছাড়াও সত্যজিৎ রায়ের ‘পিকু’ এবং ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন। এছাড়াও অভিনয় করেছেন মৃণাল সেনের ‘মহাপৃথিবী’ ছবিতে। অন্য ধারার ছবির পাশাপাশি বহু বাণিজ্যিক ছবিতেও করেছেন কাজ। মহানায়ক উত্তমকুমারের বিপরীতে তাঁকে দেখা গেছে ‘মেমসাহেব’-সহ কয়েকটি ছবিতে। জুটি বেঁধেছিলেন তাঁর প্রথম নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ‘বসন্ত বিলাপ’ এই জুটির অন্যতম বাণিজ্য সফল ছবি। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘একান্ত আপন’-এ অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি পেয়েছিল দারুণ সাফল্য। ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘উনিশে এপ্রিল’ ছবিতে তাঁর অভিনয় ভোলার নয়।
শুরু থেকেই অপর্ণা (Aparna Sen) অভিনয় করে এসেছেন মেধা দিয়ে। সে যে ধারার ছবিই হোক না কেন। পরবর্তী সময়ে দক্ষতা দেখিয়েছেন পরিচালক হিসেবেও। উপহার দিয়েছেন ‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’, ‘পরমা’ , ‘সতী’, ‘যুগান্ত’, ‘পারমিতার একদিন’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’, ‘১৫ পার্ক এভিনিউ’, ‘দ্য জাপানিজ ওয়াইফ’, ‘ইতি মৃণালিনী’ এবং ‘গয়নার বাক্সো’ ছবিগুলো। পেয়েছেন পদ্মশ্রী, জাতীয় পুরস্কার-সহ বেশকিছু পুরস্কার। এছাড়াও পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্মানও। তাঁর পরিচালিত বহু ছবি প্রদর্শিত হয়েছে বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে।
অভিনয় এবং পরিচালনার পাশাপাশি করেছেন সাংবাদিকতা ও সম্পাদনার কাজও। মুক্ত চিন্তক। যুক্তিবাদী। সুবক্তা। নিজে যেমন ভাবেন, তেমন অন্যদের ভাবান। ব্যাপ্তি অনেক। দর্শক-শ্রোতার পছন্দের ব্যক্তিত্ব।
সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র ‘পরমা : এ জার্নি উইথ অপর্ণা সেন’ নির্মাণ করেছেন পরিচালক সুমন ঘোষ। মায়া লীলা ফিল্মস-এর ব্যানারে। রটারডাম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে হয়েছে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার। দেখানো হয়েছে ২০২৪-এর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও। পেয়েছে প্রশংসা।
২১ ডিসেম্বর, কলকাতার সাউথ সিটির আইনক্সে ছিল স্পেশ্যাল স্ক্রিনিং। প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায়। তথ্যচিত্রটি অপর্ণা সেনের নানাবিধ কাজকে অন্বেষণ করেছে। তাঁর সম্পর্কে বলেছেন কল্যাণ রায়, কঙ্কণা সেনশর্মা, গৌতম ঘোষ, রাহুল বসু, শাবানা আজমি প্রমুখ। সঙ্গীত পরিচালনায় দেবজ্যোতি মিশ্র।
স্পেশ্যাল স্ক্রিনিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অপর্ণা সেন (Aparna Sen)। তিনি জানান, ‘‘প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ এই আয়োজনের জন্য। আমি কখনও ভাবতে পারিনি যে আমি একজন পরিচালকের ছবির বিষয় হতে পারি। সুমনের এই ভাবনাটাই আমাকে অবাক করেছিল। এই ছবির জন্য আমার সমস্ত ছবির লোকেশনে বহু বছর পর পুনরায় ভিজিট করেছি। আজ ছবিটি দেখে, এত মানুষের প্রতিক্রিয়া পেয়ে খুব ভাল লাগছে।’’
পরিচালক সুমন ঘোষ জানালেন, সন্দীপ ভুতোরিয়া আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। শুধুমাত্র কলকাতা নয়, সারা ভারত জুড়ে শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের অবদান অকল্পনীয়। তাঁরা আমার তথ্যচিত্রের স্পেশ্যাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করলেন, বিশিষ্ট মানুষেরা ছবিটা দেখতে এলেন, তাঁদের মতামত জানালেন, এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ছবির ভাবনা সম্পর্কে পরিচালক বলেন, ‘‘অপর্ণা সেন আমার ‘বসু পরিবার’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। পরবর্তীকালে অনেক আড্ডা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। অনুভব করি মানুষটার ব্যাপ্তি। তিনি শুধুমাত্র একজন অভিনেত্রী বা পরিচালক নন, একজন সাংবাদিকও। রাজনৈতিক সত্তা, ব্যক্তিত্ব— সবটা নিয়েই একজন অসাধারণ মানুষ। এইরকম মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এই ভাবনা থেকেই আমার মনে হয়েছিল, সবটা নিয়ে মানুষটাকে তুলে ধরা দরকার।” তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি প্রথম তথ্যচিত্র বানিয়েছি অমর্ত্য সেনকে নিয়ে। বিশ্ববরেণ্য বাঙালিদের এক্সপ্লোর করতে আমার খুব ভাল লাগে। জানতে ইচ্ছে হয়, কেন তাঁরা বিশ্ববরেণ্য? বারবার মনে হয়, আমাদের প্রজন্মে কোন জিনিসটার অভাব আছে, যার জন্য আরেকটা পরমা হতে পারেনি? সেটা ভাবনা থেকেই শুরু হয় অপর্ণা সেনকে নিয়ে ছবির জার্নি।’’
স্পেশ্যাল স্ক্রিনিংয়ে উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ রায়, সোহাগ সেন, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, রজতাভ দত্ত, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, তনুশ্রী শংকর, সুবোধ সরকার-সহ শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টরা। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন ভাললাগার কথা।

আরও পড়ুন- যাঁরা আশা জোগালেন

Latest article