প্রতিবেদন: প্রবল দুর্যোগের কবলে পড়েছে উত্তর ভারত। লাগাতার বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসে (floods-landslides) বিপর্যস্ত জনজীবন। বাড়ছে মৃত্যু ও নিখোঁজের সংখ্যা। এই পরিস্থিতির সঙ্গে পরিবেশ ধ্বংস করার সম্পর্ক কতটা তা নিয়ে কেন্দ্রকে নোটিশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত। এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট হিমাচল প্রদেশে বন্যার জলে ভেসে আসা বিপুল সংখ্যক কাঠ দেখে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আদালতের বক্তব্য, প্রাথমিকভাবে এই বিষয়টি পাহাড়ের উপরে অবৈধভাবে গাছ কাটার ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি বিনোদ চন্দ্রন সমন্বিত বেঞ্চ হিমালয় সন্নিহিত রাজ্যগুলিতে অভূতপূর্ব বন্যা এবং এর ফলে সৃষ্ট পরিবেশগত ক্ষতির প্রেক্ষিতে একটি জনস্বার্থ মামলার (পিআইএল) শুনানিতে এই মন্তব্য করেছে। পরিবেশগত বিপর্যয় নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ), পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক, জলশক্তি মন্ত্রক, ভারতীয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) এবং হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব ও জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কাছে নোটিশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সকলকেই দুই সপ্তাহের মধ্যে উত্তর দিতে বলা হয়েছে। লাগাতার পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করার ঘটনার সঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসের মতো বিপর্যয়ের সম্পর্ক কতটা তা খতিয়ে দেখতে চায় সুপ্রিম কোর্ট।
পঞ্চকুলার বাসিন্দা অনামিকা রানার করা আবেদনে ভবিষ্যতে দুর্যোগ প্রতিরোধ এবং হিমালয় সংলগ্ন রাজ্যগুলির ভঙ্গুর পরিবেশ রক্ষার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা, এসআইটি তদন্ত এবং ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশগত তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বেঞ্চ জানায়, আমরা উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ এবং পাঞ্জাবে অভূতপূর্ব ভূমিধস এবং বন্যা দেখেছি। সংবাদমাধ্যমে দেখা গিয়েছে, বন্যার জলে বিপুল সংখ্যক কাঠের লগ ভেসে বেড়াচ্ছিল। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে যে পাহাড়ের উপরে অবৈধভাবে গাছ কাটা হচ্ছে। শীর্ষ আদালতে উপস্থিত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন, এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখেছি যে বন্যার জলে প্রচুর কাঠের লগ ভেসে বেড়াচ্ছে হিমাচল, উত্তরাখণ্ডে। শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে মেহতা আদালতকে বলেন, আমি অবশ্যই পরিবেশ সচিবের সঙ্গে কথা বলব, যিনি সংশ্লিষ্ট মুখ্যসচিবদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন, এই পরিস্থিতি বহাল থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের আর কোনও বন থাকবে না। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, উন্নয়ন প্রয়োজন, কিন্তু পরিবেশের সঙ্গে এর ভারসাম্য বজায় রাখা আমাদের কর্তব্য। সলিসিটর জেনারেল মেহতার স্বীকারোক্তি, আমরা এতদিন প্রকৃতির উপর এই পরিমাণ খবরদারি করেছি যে এখন প্রকৃতি তার প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
আবেদনকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট আকাশ বশিষ্ঠ বেঞ্চকে জানান যে চণ্ডীগড় এবং মানালির মধ্যে ১৪টি দীর্ঘ টানেল রয়েছে। টানেলের কাছে যখনই ভূমিধস হয়, ভিতরে মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেখানে বাতাস থাকে না এবং সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, একদিন ৩০০ জন মানুষ সেখানে আটকে পড়েছিল। কোনও উদ্ধার বা ত্রাণ অভিযান নেই। প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন, আমরা পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করছি।
অবৈধভাবে গাছ কাটাতেই বাড়ছে বন্যা ও ভূমিধস?
