প্রতিবেদন : যাদবপুরের মৃত ছাত্রকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছিল। তাঁর গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকাও দেওয়া হয়। সেই রাতে তিনতলা থেকে তাঁকে ঠেলে ফেলে হয়েছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা দরকার। যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর তদন্তে নেমে এমনই অভিযোগ তুলেছে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন। রবিবার কমিশনের প্রতিনিধিরা প্রথমে রানাঘাটে মৃত ছাত্রের মামার বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। পরে তাঁরা ঘটনাস্থলেও যান। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যেহেতু কোনও উপাচার্য নেই, তাই তাঁরা রাজ্যপালকে ঘটনার রিপোর্ট দিতে বলেছেন।
আরও পড়ুন-হতাশ বিজেপি, কী করবে ভেবে পাচ্ছে না
তিনি বলেন, মৃতের পরিবার জানিয়েছে, তাঁরা ওই পড়ুয়ার দেহে অসংখ্য সিগারেটের ছ্যাঁকার দাগ দেখতে পেয়েছেন। ছাত্রটিকে যৌন নির্যাতনও করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। হস্টেলে সিটিটিভি নেই কেন? কেন রেজিস্টার রাখা হয় না? কারা সিসিটিভি, রেজিস্টার রাখায় বাধা দিয়েছিল সব সামনে আসা দরকার। এদিন হস্টেলে গিয়ে তাঁরা সুপারকে ডেকে পাঠান। তারপর ঘর খুলিয়ে মৃত ছাত্রের ঢোকেন কমিশনের প্রতিনিধি সুদেষ্ণা রায় ও অনন্যা চক্রবর্তী। অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তো কিছু বলা যাবে না। কিন্তু অত দূরে ছেলেটা কী করে পড়ল? বারান্দা থেকে বেশ খানিকটা দূরে পড়েছে। কী করে পড়ল? তিনি আরও বলেন, তিনজন ছেলে গ্রেফতার হয়েছে, ভাল কথা। কিন্তু এত বছরের অনিয়মকে যারা প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে, সিসিটিভি লাগাতে দেয়নি, তাদের সকলের ভূমিকাই কিন্তু প্রশ্নের মুখে।
আরও পড়ুন-শ্রী অরবিন্দ
এরই মধ্যে সামনে এসেছে মৃত ছাত্রের একটি ডায়েরি। যাতে আরও ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য৷ যে ডায়েরির একটি লেখা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ডায়েরিতে যে চিঠি মিলেছে তা আদতে মৃতের লেখা কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ডিন অফ স্টুডেন্টস-কে লেখা সেই চিঠি ঘিরেই নতুন করে জোরালো হচ্ছে র্যা গিং-তত্ত্ব৷ চিঠিতে মানসিক চাপের উল্লেখ রয়েছে। গত শনিবারই মৃত ছাত্রের একটি ডায়েরি হস্টেলের ঘর থেকে পান তদন্তকারীরা৷ সেই ডায়েরিতে লেখা চিঠি ঘিরেই এবার নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা৷ দেখা গিয়েছে, সেই চিঠির গোটাটাই টানা একভাবে লেখা হলেও তারিখের জায়গায় ডবল রাইটিং পাওয়া গিয়েছে৷ তারিখের জায়গায় লেখা রয়েছে ১০ অগাস্ট৷ অভিযোগ, ৯ অগাস্টের উপরে নতুন করে ১০ অগাস্ট করা হয়েছে সেখানে৷
আরও পড়ুন-নরওয়ে প্রযুক্তিতে তরল নাইট্রোজেন বউবাজারের ভূগর্ভে
কিন্তু ৯ অগাস্ট রাতেই রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ওই ছাত্রকে৷ পরদিন ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। এখন প্রশ্ন, ৯ অগাস্ট ঘটনা ঘটলে, চিঠির তারিখ কেন ১০ অগাস্ট করা হয়েছিল৷ তাহলে কি অভিযুক্তরাই তদন্ত গুলিয়ে দিতে একাজ করেছিল? তদন্তে নেমে সৌরভ চৌধুরীর পর হস্টেলের আরও দুই পড়ুয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের জেরা করে উঠে আসছে হস্টেলের কুৎসিত কাহিনি। সেখানে নতুন ছাত্রদের পরিচয় করানো বা ইন্ট্রো দেওয়ার নামে জবরদস্তি কুৎসিত, অসভ্যতা চলত। সেই সঙ্গে না করলে জুটত মার, নিগ্রহ, বাদ যেত না যৌন হেনস্তাও।