কারখানা বিক্রির পথে কেন্দ্র

Must read

সৌমালি বন্দ্যোপাধ্যায়, হাওড়া : দাসনগরের আরতি কটন মিলও এবার বেচে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করল মোদির সরকার। কেন্দ্রের ন্যাশনাল টেক্সটাইল কর্পোরেশনের অধীনে থাকা এই কটন মিলে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কর্মীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া বা আগেই অবসর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাদ ভেঙে জল পড়ছে। অত্যাধুনিক বিদেশি মেশিনপত্র পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। তবুও এই কটন মিল সংস্কারের কোনও উদ্যোগ নেই কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রকের। উল্টে এই মিলটি বিক্রি করে দেওয়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি মাপজোকও করা হয়েছে বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন। এই অবস্থায় কটন মিলটি বিক্রি করে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্ত রুখতে জোরদার আন্দোলনে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার হাওড়ার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, আইএনটিটিইউসির হাওড়া সদরের সভাপতি প্রাণকৃষ্ণ মজুমদার ও তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের স্থানীয় নেতৃত্ব মিলটি পুনর্জীবনের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুন : বিএসএফের লোলুপ দৃষ্টি গিলে খেতে আসে

প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তাঁরা এই মিলটি ঘুরে দেখেন। এই কটন মিলের বর্তমান অবস্থা দেখে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান তৃণমূল কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তৎকালীন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে কথা বলে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে মিলটি আধুনিকীকরণের জন্য ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়েছিলেন। সেইসময় ওখানে গিয়ে মিলের আধুনিকীকরণের সূচনা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আনন্দ শর্মা। সেই টাকায় জার্মানি থেকে ৩৪টি অত্যাধুনিক মেশিন নিয়ে আসা হয়েছিল। জোরদার উৎপাদন চলত।
হোসিয়ারি শিল্পের প্রয়োজনীয় সুতোর সিংহভাগটাই জোগান দিত দাসনগরের এই আরতি কটন মিল। এমনকী আরতি কটন মিলেন নিজস্ব রিটেল কাউণ্টারও ছিল কলকাতা, হাওড়া ও চন্দননগরে। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এইরকম লাভজনক একটি কটন মিলকে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ তুলেছেন। এখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এখন সেই সংখ্যা কমে এসে ৪২০তে দাঁড়িয়েছে। যাঁদের অধিকাংশই ঠিকা শ্রমিক। এই মুহূর্তে কোনও স্থায়ী টেকনিক্যাল কর্মী বা বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার নেই। ঠিকা শ্রমিকরাও তিন মাস বেতন পাননি। মেলেনি পুজোর বোনাসও। কেন্দ্রের নির্ধারিত মজুরিও পান না তাঁরা। দীর্ঘদিন ধরেই কার্যত বন্ধ উৎপাদন। ভেঙে পড়ছে পরিকাঠামো। ছাদের চাল উড়ে গেছে। সেই জায়গা দিয়ে বৃষ্টির জল পড়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা মেশিনপত্র নষ্ট হচ্ছে। জার্মানি থেকে কেনা ৩৪টি মেশিনের মধ্যে ৩৩টিই অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।

ঝোপ-জঙ্গলে ভর্তি হয়ে গিয়েছে উন্নতমানের সুতো উৎপাদনকারী কেন্দ্রের অধীনস্থ এই কটন মিলটি। সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মিল চত্বরে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। যেখানে একাধিক অনুসারী শিল্প গড়ে এই কটন মিলটির পুনর্জীবন করা সম্ভব।”

Latest article