প্রতিবেদন: বিজেপি পরিবার শাসিত দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই যে আর কোনওভাবেই ফিল্মি তারকাদের পক্ষে নিরাপদ নয়, তা প্রমাণিত হল আরও একবার। বিশেষ করে বাসভূমি হিসাবে হিন্দি ফিল্মি দুনিয়ার নক্ষত্রদের বিশেষ পছন্দের বান্দ্রা যেন এখন পরিণত হয়েছে অপরাধের এপিসেন্টারে। সলমনের বাড়ির সামনে গুলিকাণ্ডের পরে এবার লক্ষ্য সইফ খান ( Saif Ali Khan)। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অভিনেতা সইফ আলি খানের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে ছুরি মেরে গুরুতর জখন করে চম্পট দিল এক দুস্কৃতী। হামলাকারী তাঁর কাছ থেকে ১ কোটি টাকা দাবি করেছিল বলে খবর। একটি নয়, ধারাল অস্ত্র দিয়ে পরপর ৬ বার আঘাত করা হয়েছে নায়ককে। যার মধ্যে একটি আঘাত পৌঁছে গিয়েছে তাঁর শিরদাঁড়ার খুব কাছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, সম্ভবত চুরির উদ্দেশ্যেই যুবকটি বুধবার গভীর রাতে ঢুকেছিল ওই বাড়িতে। বাধা দিতে গিয়ে অপরিচিত ওই ব্যক্তির সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি হয় সইফের। ওই সময়ই তাঁকে পরপর ছুরি দিয়ে আঘাত করে দুস্কৃতী। তারপরেই চম্পট দেয় নিমেষের মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে নায়ককে নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে। তোলা হয় অপারেশন টেবিলে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যে ছুরি দিয়ে বারবার আঘাত করা হয়েছে সইফের দেহে তার কোনও টুকরো আর ভেতরে নেই। ওটি থেকে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে আইসিইউ-তে। রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষণে। সইফের অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে হাসপাতাল থেকে। এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগেই ঢুকে ঘাপ্টি
মেরেছিল দুস্কৃতী?
এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও , সইফের উপরে হামলাকারী যুবকের ছবি প্রকাশ করেছে মুম্বাই পুলিশ। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে হামলাকারী যুবকের ছবি। বহুতল ‘সৎগুরু শরণ’এর ৭ তলায় দেখা গিয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় ওই আগন্তুকের ছবি। মুখও দেখা গিয়েছে ভিডিওতে। পিঠে ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে তাকাচ্ছিল সে। প্রশ্ন উঠেছে, অত উঁচুতে উঠল কীভাবে ওই যুবক? পাশের বাড়ি দিয়ে? অনেক আগেই কি সে ঢুকে বসেছিল তারকার বাড়িতে, তাঁর ছোটছেলের ঘরে? লক্ষণীয়, সইফের বাড়ির এক পরিচা্রিকাও আক্রান্ত হন হামলাকারীর হাতে। তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন আর এক পরিচারককেও। দুস্কৃতী ওই পরিচারিকার পূর্বপরিচিত কিনা তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন-জম্মু-কাশ্মীরে অজানা রোগে মৃত ১৫, নেপথ্য রহস্য খুঁজতে সিট
বাধা দিতে গিয়েই
আক্রান্ত নায়ক
ঠিক কী হয়েছিল ঘটনাটা? কীভাবে টের পাওয়া গেল দুস্কৃতীর উপস্থিতি? প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে একটি পার্টির আমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন সইফজায়া করিনা কাপুর। তাঁর বক্তব্য, রাত দেড়টা নাগাদ বাড়ি ফিরে হলঘরে ঢুকে তিনিই প্রথম দেখতে পান দুস্কৃতীকে। চিৎকার করে ওঠেন তিনি। ছুটে আসেন এক পরিচারিকা। বাধা দিতে এগিয়ে যান তিনি। মুহূর্তের মধ্যে ছেলে তৈমুরকে নিয়ে ভেতরের ঘরে ঢুকে যান করিনা। স্ত্রীর চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসেন সইফ। পরিচারিকার সঙ্গে দুস্কৃতীর ধস্তাধস্তি দেখে বাঁধা দিতে যান তিনি। ঠিক তখনই সইফের উপরে ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুস্কৃতী। কোপের পর কোপ সইফের শরীরে। রক্তে ভেসে যায় ঘর। চম্পট দেয় দুস্কৃতী।
অটোতে চেপেই ২
কিমি দূরে হাসপাতালে
লক্ষণীয়, কোনও গাড়ি সেই মুহূর্তে প্রস্তুত না থাকায়, আর সময় নষ্ট করতে চাননি সইফ এবং বড়ছেলে ইব্রাহিম। একটি অটো-রিকশ ডেকে তাতে চাপিয়েই বাবাকে নিয়ে বান্দ্রার বাড়ি থেকে ২ কিমি দূরে হাসপাতালে পৌঁছে যান ছেলে। করিনা জানান, আমরা নিরাপদে আছি। ধন্যবাদ জানান অনুরাগীদের। অনুরোধ জানান
শান্ত থাকতে।
তদন্তে এনকাউন্টার
স্পেশ্যালিস্ট
সইফের উপরে হামলার ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট দয়া নায়েককে। মুম্বাই পুলিশের অপরাধ দমনশাখার অফিসার । পোস্টিং খার-বান্দ্রা অঞ্চলে। গ্যাংস্টারদের ঘুম উবে যায় তাঁর নামে। তাঁরই কৌশল এবং দাপটের দৌলতে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে প্রায় ২০০ কুখ্যাত অপরাধীকে। এনকাউন্টার করেছেন ৮৩ জন অপরাধীকে। সলমন খানের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে গুলি চালনার ঘটনায় ২ মূল অভিযুক্তকে জালে ফেলেছিলেন তিনিই।
ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রবীনা
সইফের ( Saif Ali Khan) উপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়লেন অভিনেত্রী রবীনা ট্যান্ডন। তাঁর অভিযোগ, বান্দ্রা এলাকার পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। চুরি ছিনতাই এখন রোজকার ঘটনা। বান্দ্রার বাসিন্দা রবিনার অভিযোগ, তারকারদের আক্রমণ করা এখন খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। এই সব অরাজকতা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।