সহিষ্ণুতার মাটিতে অসহিষ্ণুতার চাষ-প্রয়াস

জীবিকার জন্য রাস্তায় দাঁড়ানো একজন পরিশ্রমী মানুষের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ বাংলার মাটি কোনওদিন সহ্য করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।

Must read

ডাঃ বৈদ্যনাথ ঘোষ দস্তিদার: পশ্চিমবঙ্গে ব্রিগেডে গত রবিবার যে লজ্জাজনক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, তা শুধু একজন মানুষের ওপর হামলা নয়— এটি আমাদের মানবতা, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বোধের উপর সরাসরি আঘাত। একজন গরিব মানুষ, যিনি হাতের জোরে, ঘামের বিনিময়ে চিকেন প্যাটিস বিক্রি করে নিজের পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখেন, তাঁর ওপর নির্মম ও বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। জীবিকার জন্য রাস্তায় দাঁড়ানো একজন পরিশ্রমী মানুষের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ বাংলার মাটি কোনওদিন সহ্য করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।

আরও পড়ুন-টিকিটের মূল্য ফেরতের ব্যবস্থা

বাংলার সংস্কৃতি সহমর্মিতা, মানবতা এবং পরিশ্রমী মানুষের প্রতি সম্মান শেখায়। এখানে মাটি চাষ করা কৃষক, দিনমজুরের শ্রম, এবং ছোটখাটো ব্যবসা করা মানুষের ঘাম— এগুলোই আমাদের সমাজের ভিত্তি। সে সমাজে কোনও মতাদর্শ, কোনও গোষ্ঠী, কোনও রাজনৈতিক শক্তি— সাধারণ মানুষের জীবনে সন্ত্রাস চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার রাখে না। মানুষের কাজ করে খাওয়ার অধিকার ভারতের সংবিধান দিয়েছে; সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া মানে সংবিধানের আত্মাকে আঘাত করা। এই ঘটনার মধ্যে যে অসহিষ্ণুতা, হুমকি, এবং বিদ্বেষের রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে—তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। আজ একজন প্যাটিস বিক্রেতা আক্রান্ত হয়েছেন। কালকে কে আক্রান্ত হবেন? একজন ছাত্র? একজন রিকশাচালক? একজন মহিলা যিনি বাড়ির কাজ করে পরিবার চালান? এমন অবস্থায় কোনও নাগরিকই নিরাপদ নয়। যখন সাধারণ মানুষের জীবিকা টার্গেট হয়, তখন সেটা শুধু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি বৃহত্তর সামাজিক ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে। একজন গরিব মানুষকে মারধর করা মানে শুধু তার শরীরকে আঘাত করা নয়। এই আঘাত তার পরিবারের থালা, তার সন্তানের ভবিষ্যৎ, তার মায়ের ওষুধ—যুগপৎ এ সবকিছুর ওপর আক্রমণ। এই আঘাত তার আত্মসম্মানের উপর। এবং সেই সঙ্গে আঘাত করা হচ্ছে বাংলার সহিষ্ণুতা, বাংলার আত্মা এবং বাংলার সম্মিলিত বিবেকের উপর। আমরা জানি যে হিংসা কোনওদিন সমস্যার সমাধান করতে পারে না। যারা দুর্বল, তাদের ওপর হামলা চালানো আরও বড় কাপুরুষতা। সমাজ তখনই ভেঙে পড়ে, যখন শক্তির নামে দুর্বলদের ওপর আক্রমণকে স্বাভাবিক করে তোলা হয়। কিন্তু বাংলা কখনও কাপুরুষতার রাজনীতি মেনে নেয় না। বাংলার ইতিহাস প্রতিরোধের ইতিহাস— অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ইতিহাস। সুতরাং, আজ আমরা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলছি— বাংলায় হিংসার জায়গা নেই। বিদ্বেষের জায়গা নেই। বাংলায় নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার বরদাস্ত করা হবে না।
বাংলা গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াবে। পরিশ্রমী মানুষের পাশে দাঁড়াবে। মানবতার পাশে দাঁড়াবে। হামলাকারীর পাশে নয়। সন্ত্রাসের পাশে নয়। ভয়ের রাজনীতির পাশে নয়। বাংলা মাথা নত করবে না। বাংলা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজও অটল।

Latest article