অগাস্ট ওয়াইজম্যান জেনেটিক গবেষণার পিতা

হঠাৎ একদিন দেখলেন চোখের দৃষ্টি অনেকটাই আবছা হয়ে আসছে, বিষণ্ণতায় ভরে উঠল মন, তা হলে কি সব স্বপ্ন থেমে যাবে? আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন। থেমে যাবে পথচলা?

Must read

ভাস্কর ভট্টাচার্য
হঠাৎ একদিন দেখলেন চোখের দৃষ্টি অনেকটাই আবছা হয়ে আসছে, বিষণ্ণতায় ভরে উঠল মন, তা হলে কি সব স্বপ্ন থেমে যাবে? আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন। থেমে যাবে পথচলা?

আরও পড়ুন-Abhishek Banerjee: ধমকে-চমকে তৃণমূলকে আটকানো যাবে না, ত্রিপুরায় পৌঁছেই হুঙ্কার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের

না, এই বিজ্ঞানীর স্বপ্ন সফল করতে সেদিন এগিয়ে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী। বলেছিলেন, আমায় তুমি তোমার গবেষণার সঙ্গী করে নাও। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি, অগাস্ট ওয়াইজম্যানকে। স্ত্রীর পাগল করা সাহচর্য তাঁর গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক শুধু হয়নি, ওয়াইজম্যান জীবাণু প্লাজমা তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে বর্ণিত হয়েছেন জীবন বিজ্ঞানের ইতিহাসে। ডারউইনের তত্ত্বকে আঁকড়ে এবং বিশ্বাস করে এগিয়েছেন জীবনের পথে। ১৯০৮ সালে তাঁর কিংবদন্তি গবেষণার জন্য পেয়েছিলেন ডারউইন-ওয়ালেস পদক। এ ছাড়াও বিভিন্ন সম্মানে সম্মানিত জিন তত্ত্বের এই গবেষক।

আরও পড়ুন-জয় দিয়েই শুরু কোচ জাভির

চার্লস ডারউইনের পরে উনিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বিবর্তনীয় তত্ত্ববিদ বলে মনে করা হয়। ওয়াইজম্যান জার্মানের প্রাণিবিদ্যা ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অধ্যাপক হিসেবেই ছাত্রছাত্রী-সহ আপামরের কাছে পরিচিত হয়েছেন।
কিন্তু তাঁর অতীত সে কথা বলে না। তিনি হতে চেয়েছিলেন একজন ডাক্তার। ডাক্তার হিসেবে জীবন শুরুও করেছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত একজন ভ্রূণবিদ্যার গবেষক হয়ে ওঠেন এবং যুগান্তকারী কাজ করে জেনেটিকস বা প্রজননবিদ্যাকে দিয়েছিলেন বিশ্বপ্রসারী দ্রুতি।

আরও পড়ুন-অভিষেক টেস্টেই মাথায় চোট, হাসপাতালে সোলোজানো

জার্মান বিবর্তনীয় এই জীব বিজ্ঞানীর পুরো নাম অগাস্ট ফ্রেডরিখ লিওপোল্ড ওয়াইজম্যান। জন্ম ফ্রাঙ্কফুর্টে। এই ফ্রাঙ্কফুর্ট সাহিত্য, বিজ্ঞান ইতিহাস শিল্পকলার জন্য প্রসিদ্ধ। অনেকেই এই নগরকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় নগরী’ বলে থাকেন। ওয়াইজম্যানের বাবা-মাও ছিলেন বিদ্যোৎসাহী। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা’র হাত ধরে ঘুরে ঘুরে দেখতেন বিভিন্ন সংরক্ষণাগারে কাচের জারে বিচিত্রতর প্রাণীদের। নানা জায়গা থেকে জোগাড় করে আনতেন নানা কীটপতঙ্গ। প্রজাপতি ধরা ছিল নেশা। উদ্ভিদের গা ঝাড়া দিয়ে বেয়ে ওঠা ও ফোটা ফুলের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হতেন। এই বিস্ময়ই তাঁকে ঘটনাচক্রে এই গবেষণার পথে নিয়ে এসেছিল।

আরও পড়ুন-অশ্বিনরা কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলবে

এই প্রশ্ন নিয়েই ভর্তি হয়েছিলেন জিসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পড়া শেষ করে অগাস্ট স্যাকসনের আর্চ বিশপের ব্যক্তিগত চিকিৎসক হন। একদিকে হালকা চিকিৎসা অন্যদিকে গবেষণার জন্য হাতে অনেক সময়। এই সময়েই ১৮৬৫ সালে ৩১ বছর বয়সে ফ্রেইবুক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক রূপে যোগদান। দিনরাত জীবন বিজ্ঞানের কক্ষপথে। পরিচিতি পেলেন যশস্বী অধ্যাপক হিসেবে।
তিনি নিজেকে একজন গবেষক হিসেবে দেখতে চান। হতে চান সাইটোলজিস্ট। ডিএনএ নিয়ে কাজ করাকে বলে সাইটোলজিস্ট। ‘সাইটো’ কথা এসেছে ‘সেল’ বা ‘কোষ’ থেকে। সাইটোলজিকেই বাংলায় বলে কোষচর্চা।

আরও পড়ুন-অশ্বিনরা কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলবে

গোল বাধে এখানেই কোষ চর্চা করতে গেলে লাগে অনুবীক্ষণ যন্ত্রে চোখ রাখা। কিন্তু অগাস্ট ক্রমশই চোখের দৃষ্টি হারাচ্ছেন। আগেই বলা হয়েছে একই সময়ই পাশে পেয়েছিলেন সহকর্মী, সহযোগী স্ত্রীকে।
১৮৬৮ থেকে ১৮৭৬ সাল, এই আট বছর ওয়াইজম্যান প্রধানত অমেরুদণ্ডী প্রাণী জগতের নানা প্রজাতির জীবনধারা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে গেছেন। এককোষী ও বহুকোষী প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা। তিনি ‘সোমোটো প্লাজম’ ও ‘জার্ম প্লাজম’ — এই দুইয়ের পার্থক্য আবিষ্কার করেছিলেন। করেছিলেন এককোষী অ্যামিবার ওপর গবেষণা। শরীরই হল প্লাজমের পথ। এক দেহ থেকে আরেক দেহে পর্বান্তরিত হয়। ইংরেজিতে ‘আ হেন হিজ ওনলি অ্যান এইসব ওয়ে অফ প্রডিউসিং অ্যানাদার’।

আরও পড়ুন-‘আমাদের মারলে মারুক, মানুষ বিচার করুন’ টুইটারে আর্জি কুণাল ঘোষের

১৯০৪ সালে হইচই ফেলে দিল তাঁর ‘এভোলিউশনারি থিয়োরি’। প্রথমদিকে বিজ্ঞানীরা মেনে নিলেও পরবর্তীকালে তা পুনর্নির্মিত হয়েছে।
অগাস্টকে জেনেটিক গবেষণার পিতা বলা হয়। উল্লেখ্য, এই বিজ্ঞানীকে এক সময় যুদ্ধক্ষেত্রেও অংশ নিতে হয়েছিল। যুদ্ধের ভয়াবহতা, করুণ দৃশ্য তাঁর মনে বিপুল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। প্রজাপতি সংগ্রাহক এই বিজ্ঞানী অবশেষে কোষ গবেষণাতেই আত্মনিবেদন করেছিলেন। এবং বিশ্বের নামজাদা কোনও বিজ্ঞানী হয়ে উঠেছিলেন। প্রকৃতির ‘বিবর্তনের কৌশল’ জানবার নেশায় আজীবন কাটানো এই বিজ্ঞানী মারা যান ১৯১৪ সালে। বাবা ছিলেন শিক্ষক।

আরও পড়ুন-বাবা নেই, কন্যাদান করলেন তৃণমূল নেতা

শিক্ষকের পুত্র ডাক্তারের বদলে নিজের ভালবাসাকেই খুঁজে পেয়েছিলেন বিজ্ঞান ও শিক্ষকতার মধ্যে।
অসংখ্য গবেষণাপত্র লিখে গেছেন। উল্লেখযোগ্য ‘এসেস আপন হেরেডিটি’। এছাড়াও লিখেছেন বই এভোলিউশন থিয়োরি (১৯০৪)।
দিন দিন কোষ বিজ্ঞান চর্চা প্রবলভাবে বেড়ে চলেছে। শিক্ষার নানা দিক উন্মোচিত হয়েছে। ডারউইনের বিবর্তনবাদের অনুরাগী এই বিজ্ঞানীর গবেষণাই এখন উল্লেখযোগ্য পড়াশোনার বিষয়। এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবার বা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ অনেক।

Latest article