গ্রস আইলেট, সেন্ট লুসিয়া, ২৪ জুন : ২২ বলে ৫২ দরকার ছিল তখন। ট্রাভিস হেড (৭৬) যেভাবে খেলছিলেন, তাতে অসম্ভব মনে হচ্ছিল না। কিন্তু তিনি, জসপ্রীত বুমরা। সেকেন্ড স্পেলে এসে টুক করে তুলে নিলেন হেডকে। স্লোয়ার ছিল। শট আগে, বল এল পরে। বুমরা স্পেশ্যাল। প্ল্যান এ না হলে প্ল্যান বি। কেউ না পারলে তিনি। এই জন্যই দুনিয়ার সেরা বোলার। আর এই জন্যই শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট দাঁড়িয়েছিল ২৯ রান। তারা সেটা না পেরে হেরে গেল ২৪ রানে। আমেদাবাদে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া হারিয়েছিল ভারতকে। সাতসমুদ্র পারে রোহিতের হাতে বদলাটাও হয়ে গেল এদিন।
এমনিতেই অজিদের জন্য কঠিন ম্যাচ ছিল এটা। হেড চলে যাওয়ায় আরও কঠিন দাঁড়াল। পরিস্থিতি এই, বল কমছে। আস্কিং রেট বাড়ছে। টিম ডেভিড (১৫) আউট হয়ে যাওয়ার পর আর এমন কাউকে পাওয়া গেল না, যার উপর ভরসা রাখা যায়। শেষপর্যন্ত ২০ ওভারে ১৮১/৭-এ থামল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ হেরে গাড্ডায় পড়ে গেল তারা। এখন যা পরিস্থিতি তাতে আফগানিস্তান বাংলাদেশকে হারালেই সেমিফাইনালে উঠে যাবে। যেখানে ভারত আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। গায়েনায় সেমিফাইনালে রোহিতরা খেলবেন ইংল্যান্ডের সঙ্গে।
আরও পড়ুন-মুড স্যুইংয়ে মৌসুমি বায়ু
অস্ট্রেলিয়া কিন্তু ভারতের মতোই শুরু করেছিল। রোহিতের টার্গেট ছিল পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভার, মার্শ আর হেডও সেটা মাথায় রেখেই খেললেন। না খেলে উপায় ছিল না। মাথার উপর ২০৫ রানের চাপ এবং ঘাড়ের উপর আফগানদের নিঃশ্বাস। এই ম্যাচে হার মানেই যে আফগানিস্তানকে সেমিফাইনালে এক কদম এগিয়ে দেওয়া, সেটা মার্শদের থেকে ভাল আর কে বুঝত! কিন্তু ভারতের ইনিংসে যেমন বিরাট, তেমনই অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ডেভিড ওয়ার্নার (৬) তাড়াতাড়ি ফিরে গেলেন।
ভারতের জন্য এরপর যেটা চাপের হল, মার্শ (৩৭) আর হেড (৭৬) মিলে অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। বুমরাকে এই প্রথম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হল এদিন। এরমধ্যে হার্দিক প্রথম স্পেলে ৩ ওভারে ৪৩ রান দিয়েছেন। এদিকে, মার্শ ফিরে যাওয়ার পর ম্যাক্সওয়েল (২০) এসেই চালাতে শুরু করেন। গতবছর ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে এক পায়ে ম্যাক্সওয়েল যে ইনিংস খেলেছিলেন, সেটা এখনও ভয় ধরায় বোলারদের মনে। কিন্তু এখানে তিনি ফিরে যাওয়ার পর রিভার্স সুইপে উইকেট দিয়ে যান স্টয়নিসও (২)। অস্ট্রেলিয়া তখন ১৪.১ ওভারে ১৩৫/৪। তবে এরপর আর তাদের অ্যাডভেঞ্চার জমেনি।
আরও পড়ুন-দলে সিজার, আজ লিগে মহামেডান
রোহিত না বিরাট, কে আগে আলোচনায় আসবেন সেটা একটা বিষয়। হিটম্যানের বিধ্বংসী ব্যাটিং আগেও দেখেছে ক্রিকেট দুনিয়া। কিন্তু সোমবারের এই ইনিংস একেবারে সুপার ক্লাস। ৪১ বলে ৯২। রোহিতের সেঞ্চুরি হল না বলে আফসোসের কারণ নেই। দ্রুততম এই হাফ সেঞ্চুরি কিন্তু সেঞ্চুরির থেকেও দামি। এদিন প্রথম বল থেকে অজি বোলারদের ঘাড়ে চেপে বসেছিলেন ভারত অধিনায়ক। উল্টোদিকে বিরাট চলে গেলেন বলেও থামার লক্ষ্মণ নেই। গোটা সাতেক বাউন্ডারি আর গোটা আষ্টেক ছক্কায় অস্ট্রেলিয়ার সর্বনাশ ঘটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বাইশ গজে অনেকদিন পরে এমন হিট শো দেখা গেল।
বিরাটের জন্য অবশ্য আরও একটা খারাপ দিন গেল। বিরাট কোহলি শূন্য করে ফিরে যাচ্ছেন, খুব বেশি দেখার সুযোগ হয় না। এখানে সেটাই হল। ৪ ইনিংসে ২৯ রানের পর বাংলাদেশ ম্যাচে ৩৭ রান করেছিলেন বিরাট। মনে হয়েছিল রানে ফিরলেন। কিন্তু ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়াম তাঁকে খালি হাতে ফেরাল। চারটে বল উইকেটে কাটিয়ে দেওয়ার পর হ্যাজলউডের বলে তিনি ক্যাচ দিয়ে গেলেন টিম ডেভিডের হাতে। দ্বিতীয় ওভারে ভারত তখন ৬/১।
অস্ট্রেলিয়ার জন্য ভয়ঙ্কর চাপের ম্যাচ ছিল এটা। আফগানিস্তানের কাছে হেরে যাওয়ার ফল এটা। কিন্তু মিচেল মার্শ টসে জিতে ভারতকে আগে ব্যাটিং দেওয়ার পর রোহিত যেন ঠিকই করে রেখেছিলেন যে মার্শদের উপর আরও চাপের বোঝা চাপাবেন। না হলে বিরাট আউট হওয়ার পরের ওভারেই মিচেল স্টার্ককে এক ওভারে ২৯ রান নিলেন কীভাবে! বিরতিতে সূর্যকুমার যাদব এসে বলে গেলেন, স্বপ্নের ইনিংস খেলে গেল রোহিত। তিনি বলবেন কী, সবাই একই কথা বলছে!
আরও পড়ুন-স্পিকারের কাছেই শপথ নিতে চাই রাজ্যপালকে চিঠি দিলেন সায়ন্তিকা
ঋষভ পন্থকে নিজের মাঠে এসে পকেট রকেট বলে গিয়েছিলেন ভিভ রিচার্ডস। ঋষভ অবশ্য এদিন তাঁকে হতাশ করলেন। মার্কাস স্টয়নিসের বলে ফিরে যান ১৫ রানে। তারপরও ভারত ২০ ওভারে ২০৫/৫-এ যেতে পেরেছে মিডল অর্ডার রান করে যাওয়ায়। সূর্য ৩১, শিবম দুবে ২৮, হার্দিক ২৭ নট আউট, সবাই স্কোরবোর্ডকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। নাহলে শুরুতেই বিরাটকে হারিয়ে ভারতের দুশো হবে করে ভেবেছিল।
রোহিত এদিন ১৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। এবারের টুর্নামেন্টে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। এই রানটাও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের যুগ্ম সর্বোচ্চ রান। শুধু এর আগে চার উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান করেছিল ভারত। এবার পাঁচ উইকেটে। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন স্টার্ক ও স্টয়নিস। তবে চার ওভারে স্টয়নিস দিয়েছেন ৫৬ রান। বরং সব থেকে কৃপণ বোলিং করলেন হ্যাজলউড। তাঁর গড় ৪-০-১৪-১। জাম্পা-ম্যাজিক এদিন খাটেনি। চার ওভারে তিনি দেন ৪১ রান।