ভর সন্ধ্যাবেলায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ডাকাতি বেলেঘাটার সুরহা ইস্ট রোডের গীতাঞ্জলি আবাসনে। দুষ্কৃতীরা এই আবাসনের দোতলার একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সায়ন মুখোপাধ্যায়ের (Sayon Mukherjee) বাড়ি হামলা চালায়। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আইনজীবী সায়ন মুখোপাধ্যায় ও তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা। ঘটনার সময় বাড়িতে ছিল সায়নের দিদি কোয়েল মুখোপাধ্যায়ের ৮ বছরের মেয়ে। ঘটনার পর থেকে আইনজীবীর পরিবারের সকলেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই চার সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে বেলেঘাটা থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন – বর্তমান রাজ্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে বেনজির আক্রমণ জয়প্রকাশ ও রীতেশের
ভোর সন্ধ্যেবেলায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কলকাতা শহরের বুকে একজন আইনজীবীর বাড়িতে এমন হামলা ও দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনায় অনেকেই আশঙ্কিত। যাতে অভিযুক্তরা দ্রুত শাস্তি পায় তার জন্য সায়ন মুখোপাধ্যায় (Sayon Mukherjee) ও তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন শহরের আইনজীবী মহল। আজ, মঙ্গলবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টের প্রায় ২০০ জন আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে আসেন। আইনজীবীদের এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন হাইকোর্টে তৃণমূল লিগাল সেলের কনভেনর তরুণ চট্টোপাধ্যায়, ছিলেন বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ের, ইমতিয়াজ আহমেদ, সুমন ঘোষ, অচিন্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরও অনেকে।
করোনা আবহে সকলে বাড়ির মধ্যে যাননি, সায়ন ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে ঢোকেন অশোক দেব, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় সহ ৫ জন আইনজীবী। তাঁরা সায়ন ও তাঁর পরিবারকে আশ্বস্ত করেন। ভয় না পেয়ে স্বাভাবিক ভাবে জীবন-যাপন করতে বলেন। বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অশোক দেব বলেন, “আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আজ আমরা আইনজীবী মুখোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এলাম। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমরা সকলে তাঁর পরিবারের পাশে আছি। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তাঁদের পরিবারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে। এবং দ্রুত যাতে প্রকৃত অভিযুক্তরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়, সেটা দেখার জন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের নিশ্চিত করা হয়েছে, অভিযুক্তরা দ্রুত শাস্তি পাবে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আরও কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কিনা সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, আদালতে মামলা চলাকালীন যাতে দোষীদের পাশে কোনও আইনজীবী না দাঁড়ান, সে ব্যাপারে আমরা সকলকে অনুরোধ করছি।”
আক্রান্ত আইনজীবী সায়ন মুখোপাধ্যায় ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানিয়েছেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যা বেলা চারজন সশস্ত্র দুষ্কৃতী তাঁদের ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে। এদের প্রত্যেকের হাতেই ধারালো অস্ত্র ছাড়াও ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। বাধা দিতে গেলে সায়ন ও তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মাকে বেঁধে বন্দুকের বাট দিয়ে মারা হয়। সায়নের মাথায় ৭টি সেলাই পড়েছে। প্রায় ৪০মিনিট ধরে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় সায়নের বাবা-মা ও তাঁর ছোট্ট ভাগ্নি ট্রমায় রয়েছে।”
সায়নের দিদি আইনজীবী কোয়েল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রায় ১ লক্ষ টাকা নগদ ও বাড়িতে রাখা গয়না নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। সেই সময় তিনি বাড়ি ছিলেন না। তবে ঘটনার বেশকিছুদিন আগে তাঁর কাছে হুমকি ফোন এসেছিল। এই প্রথম নয়, এর আগেও তাঁদের বাড়িতে দুষ্কৃতী হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন কোয়েল। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে হুমকি ফোন বা আগেরবার দুষ্কৃতী হামলার সঙ্গে যুক্তরাই এই ঘটনার পিছনে রয়েছে কিনা।
এদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সায়ন মুখোপাধ্যায়কে দেখতে আসা আইনজীবীরা থাকাকালীনই সেখানে আসেন বেলেঘাটা থানার ওসি প্রেমজিত চৌধুরী। এর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছিলেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মুরলিধর শর্মাও।