নায়কের ছেলে নায়ক, গায়কের ছেলে গায়ক। এটাই যেন দস্তুর। অন্তত অতীত ইতিহাস তা-ই বলছে। কেউ কেউ বাবার দেখানো পথে সাফল্য পেয়েছেন। কেউ কেউ পড়েছেন মুখ থুবড়ে। ব্যর্থ হয়েছেন প্রত্যাশা পূরণে।
কয়েক বছর ধরেই চর্চায় রয়েছেন বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খান। যেন বাবার কার্বন কপি। দারুণ হ্যান্ডসাম। লম্বা। মনে করা হচ্ছিল, নায়ক হিসেবে তাঁর ডেবিউ যেন সময়ের অপেক্ষা। এমন খবরও বাতাসে ভেসেছে–আরিয়ানের জন্য চিত্রনাট্য মোটামুটি রেডি করে ফেলেছেন করণ জোহর। শুটিং শুরু হল বলে!
আরও পড়ুন-দিঘার জগন্নাথধামের প্রথমবার পুজোয় ৫ দিনে প্রায় ৭ লক্ষ দর্শনার্থীর ভিড়
সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সত্যি সত্যিই বলিউডে পা রাখলেন আরিয়ান খান। মুক্তি পেল তাঁর ওয়েব সিরিজ। নায়ক নন, তিনি পালন করেছেন লেখক এবং পরিচালকের ভূমিকা। কিছু সমালোচক সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। তুলনা টানেন বাবা এবং ছেলের মধ্যে। শাহরুখ-পুত্রের এমন সিদ্ধান্তে রীতিমতো হতাশ তাঁরা। বাবার মতোই বুদ্ধিমান আরিয়ান তাঁদের তুলনা টানার কোনও সুযোগই দিলেন না। অন্য পথে হেঁটে বিনোদন জগতে মেলে ধরলেন নিজেকে। তাঁর পরিচালিত নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘ব্যাডস অফ বলিউড’ মুক্তি পেয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর। পৌঁছে গেছে পৃথিবীর ১৯০টি দেশে। সাধারণ দর্শকদের মন জিতে নিয়েছে। প্রশংসা কুড়িয়েছে সমালোচকদেরও।
বাবা বলিউডের বেতাজ বাদশা। তা সত্ত্বেও ডিফেন্স করেননি আরিয়ান। সোজা ব্যাটে খেলেছেন। মাঝেমধ্যে হাঁকিয়েছেন ছক্কা। বলিউডের আলো এবং অন্ধকার— দুটি দিকই তিনি খুল্লামখুল্লাভাবে তুলে ধরেছেন। স্বজনপোষণ নিয়ে অনেক কথাই ওঠে। মেলে ধরা হয়েছে সেই দিকটাও। সিরিজটা দেখতে দেখতে মাঝেমধ্যেই মনে হয়েছে, নবীন পরিচালক কি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই দেখছেন? হয়তো। তাঁর ছায়া যে রয়েছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। কয়েক বছর আগে, ২০২১ সালে, মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে টানা কুড়িদিন হাজতে থাকতে হয়েছিল আরিয়ানকে। পরবর্তী সময়ে সেইসব অভিযোগ থেকে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। উল্টে তাঁকে গ্রেফতার করেছিলেন যে অফিসার, তিনিই এখন দুর্নীতির দায়ে কাঠগড়ায়। সেই অফিসারের একটি ভাঁড়প্রতিম চরিত্র সিরিজে রাখা হয়েছে। তাতে নাকি অফিসারটি বেজায় চটেছেন। শাহরুখ-আরিয়ানের নামে বিশাল অঙ্কের মানহানির মামলা ঠুকেছেন। সেই মামলা অবশ্য খারিজ হয়ে গেছে। অর্থাৎ সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। ২০২১ সালে খলনায়ক বানানো হয়েছিল আরিয়ানকে। ২০২৫-এ সিরিজে খলনায়ক হিসেবে উঠে এসেছেন সেই অফিসার।
ভরপুর বিনোদন রয়েছে রেড চিলিজ প্রযোজিত এই সিরিজে। তুলে ধরা হয়েছে বেশকিছু সিরিয়াস বিষয়। আছে মজা মশকরাও। আরিয়ান ছেড়ে কথা বলেননি কাউকেই। বাবাকে এবং বাবার বন্ধুদের নিয়ে রীতিমতো রসিকতা করেছেন।
আরও পড়ুন-মাদ্রাজ হাই কোর্টে ভর্ৎসনার মুখে বিজয়ের দল
তিন খানকে এক ছবিতে বাঁধতে পারেননি কোনও পরিচালক। পেয়েছেন আরিয়ান। ‘ব্যাডস অফ বলিউড’-এ নিজের নিজের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান, সলমন খান এবং আমির খান। যদিও তাঁরা স্ক্রিন শেয়ার করেননি। ক্যামিও চরিত্রে দেখা গেছে আরও কয়েকজন বিনোদন জগতের-ব্যক্তিত্বকে। আছেন করণ জোহর, রণবীর সিং, রাজকুমার রাও, ইব্রাহিম আলি খান, দিশা পাটানি, সারা আলি খান, শানায়া কাপুর, বিশাল দাদলানি, এসএস রাজামৌলি, বাদশা, ইমরান হাশমি, অর্জুন কাপুর, মাহীপ কাপুর, ভাবনা পান্ডে, নীলম কোঠারি, সীমা সাজদেহ, শালিনী পাসি, রণবীর কাপুর প্রমুখ।
সাত পর্বের সিরিজ। গল্প দানা বেঁধেছে নবীন অভিনেতা আসমান সিংকে ঘিরে। তিনি অভিনয় করছেন করণ জোহরের ছবিতে। করিশমা তালভারের বিপরীতে। এটা মেনে নিতে পারেন না করিশমার বাবা নামী অভিনেতা অজয় তালভার। একজন নতুন নায়কের সঙ্গে অভিনয় করুক মেয়ে, এটা তাঁর অপছন্দ। ফলে তিনি আসমানের চলার পথে নানারকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।
ববি দেওল অনবদ্য অভিনয় করেছেন অজয় তালভার চরিত্রে। সিনেমার তুলনায় ওয়েব সিরিজেই যেন তিনি নিজেকে বেশি প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছেন। সিরিজের নায়ক আসমান সিংয়ের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন লক্ষ্য লালওয়ানি। তাঁর কাজ যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। আসমানের বন্ধু পারভেজের চরিত্রে রাঘব জুয়াল, করিশমা তালভার চরিত্রে সাহের বামবা, আসমানের ম্যানেজার সানিয়া আহমেদ চরিত্রে অনন্যা সিং যথাযথ। মুগ্ধ করেছেন জরাজ সাক্সেনার চরিত্রে রজত বেদি। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে শাহরুখের সঙ্গে কাজ করে। এবার আরিয়ানের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেলাম। আরিয়ান খুব ভাল অভিনেতা। দৃশ্য বোঝানোর সময় আমাদের অভিনয় করে দেখাত।
আরও পড়ুন-ওদেরকে চিনে নিন, বিষদাঁত উপড়ে দিন
ভাল অভিনেতা আরিয়ান। সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ তাঁর রক্তে অভিনয়। তা সত্ত্বেও তিনি অভিনয়ের বদলে পরিচালনাকেই বেছে নিলেন। প্রমাণ করলেন নিজেকে। কেন এমনটা করলেন? এর পিছনে কী কারণ থাকতে পারে? আছে, আছে। কিছু তো আছেই। তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। বাবার মতোই। আপাতত ধীরে চলো নীতি নিয়ে এগোচ্ছেন। একটু খেয়াল করলে বোঝা যাবে, ২০২১-এর অভিশপ্ত অধ্যায়ের পর ইনস্টাগ্রামে প্রোফাইল পিকচার মুছে ফেলেছিলেন আরিয়ান। এই সিরিজের হাত ধরে অতীত ভুলে জীবনকে নতুন করে শুরু করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে ইনস্টাগ্রামে প্রোফাইল পিকচার ফিরিয়ে এনেছেন। একজন পরিচালক হিসেবে। ভবিষ্যতে অভিনেতা হিসেবে যে তিনি আবার ইনস্টাগ্রামে প্রোফাইল পিকচার বদলাবেন না, কে বলতে পারে? আমরা সেই দিনের অপেক্ষায়।