মাৎস্যন্যায়
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অন্তর্গত মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র। একের পর এক আলোকিত কাজ উপহার দিয়ে চলেছে। মিনার্ভা রেপার্টারি থিয়েটারের প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হয়েছে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য নাটক। নতুনতম সংযোজন নাটককার ব্রাত্য বসুর ‘মাৎস্যন্যায়’। বাণভট্টের গদ্যকাব্য ‘হর্ষচরিত’ এবং উইলিয়াম শেক্সপিয়রের অন্যতম ট্রাজেডি ‘টাইটাস অ্যান্ড্রনিকাস’ অবলম্বনে রচিত। মনে করা হচ্ছে, নাটকের উপস্থাপনায় মেজাজ থাকবে রোমান, রূপ থাকবে ভারতীয়। বাণভট্ট এবং উইলিয়াম শেক্সপিয়রকে মেলালেন কীভাবে? রাজ্যের মন্ত্রী নাটককার ব্রাত্য বসু জানালেন, প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের ধ্রুপদীয়ানাকে এক পাত্রে ফেলে ঝাঁকানোর ইচ্ছে ছিল আমার। ইচ্ছা ছিল রাসায়নিক পরীক্ষাগারের বিক্রিয়াটা কীরকম হয়, সেটা হাতে-কলমে পরীক্ষা করার। আমি দীর্ঘদিন ধরেই শেক্সপিয়র পড়ে আসছি। পাশাপাশি সংস্কৃত সাহিত্যও কমবেশি পড়ি। ফলে তুলনামূলক দুই টেক্সট, প্রাচ্যের সবথেকে গরিমাময় অন্যতম লেখক বাণভট্ট এবং পাশ্চাত্যের শেক্সপিয়রকে মেশালে তার চেহারা কেমন হয়, এটা আমার বরাবরই অন্বিষ্ট বিষয় ছিল। সেই কারণেই এই দুইয়ের মেলবন্ধন ঘটানোর চেষ্টা করেছি। মূল কারণ, পাশ্চাত্যের আলোকে প্রাচ্যকে দেখা আবার প্রাচ্যের গরিমায় পাশ্চাত্যকে অবলোকন করা। তিনি আরও জানান, এই নাটকে অনেকগুলো স্তর রয়েছে। সেটা এক-একজনের কাছে এক-একরকম ব্যাখ্যা নিয়ে আসবে। ফলে মাৎস্যন্যায়কে যদি খুঁজতেই হয়, অনেকগুলো স্তরের মধ্যে দিয়ে খুঁজতে হবে।
আরও পড়ুন-ধরনায়-বিক্ষোভে উত্তাল ধর্মতলা চত্বর
নাটকটি পরিচালনা করেছেন অর্পিতা ঘোষ। কথা হল তাঁর সঙ্গেও। তিনি জানালেন, এই নাটকে একঝাঁক নতুন ছেলেমেয়ে দারুণ কাজ করেছে। মাঝেমধ্যে একটু বকাঝকা দিতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও ওরা প্রত্যেকেই অ্যাটেনটিভ ছিল। কাজটা করেছে খুব মন দিয়ে। ব্রাত্য বসুর নাটকটাও খুব ইন্টারেস্টিং। নাটকের কেন্দ্রে রয়েছে ক্ষমতা। প্রচণ্ড ভায়োলেন্সও রয়েছে। মানুষের আদিম প্রবৃত্তি এই নাটকের মধ্যে অসম্ভবভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আমরা যতই বড়-বড় কথা বলি না কেন, আদিম প্রবৃত্তির ছাপ কিন্তু মানুষের ভেতরে আছে, সেটা প্রতিনিয়ত লক্ষণীয়। সেইটা কোথাও এই নাটকটার মধ্যে ব্রাত্য বসু তুলে ধরতে পেরেছেন। আমি মনে করি, ব্রাত্য বসু আমাদের সময়কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাটককার। এর আগে পঞ্চম বৈদিকে আমি ব্রাত্য বসুর নাটক নিয়ে একবার কাজ করেছি। ওঁর নাটক নিয়ে এটা আমার দ্বিতীয় কাজ। তিন-চার মাসের প্রসেস ছিল। আগে একটা ওয়ার্কশপ করিয়ে ছিলাম। তারপরে শুরু করেছি মহড়া। কাজটা করে খুব মজা পেয়েছি। আশা করি নাটকটা দর্শকদের ভাল লাগবে।
অভিনয় করছেন শ্রীলা, শুভজিৎ, সায়ন্তন, সুচেতনা, গৌরব, সসমিত, সৈকত, পূজা, জিতাদিত্য, দেবাঙ্কী, সামীম, সৌম্যশেখর, অনিরুদ্ধ, পিয়ালী, রাণা, সায়ন্তনী, সোম্যদীপ, বিদ্যুৎ, তন্ময়। আবহে দিশারী চক্রবর্তী। আবহ প্রক্ষেপণে বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। কোরিওগ্রাফি সোমা গিরি। আলো পল্লব জানা। পোশাকে অনীক ঘোষ, মাধবী বিশ্বাস, পায়েল সাহু। রূপসজ্জায় মহম্মদ আলি। সহকারী নির্দেশক বিহান মণ্ডল। জোরকদমে চলছে মহড়া। ‘মাৎস্যন্যায়’ নাটকটি প্রথমবার মঞ্চস্থ হবে ৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার, সন্ধে সাড়ে ছ’টায়, গিরিশ মঞ্চে।
আরও পড়ুন-৩৪ জন মানববোমা ৪০০ কেজি আরডিএক্স, মুম্বইয়ে ফের জঙ্গি হামলার হুমকি
শতবর্ষে উত্তমকুমার
মহানায়ক উত্তমকুমার আজও বাঙালির আবেগ। ৩ সেপ্টেম্বর, তাঁর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের সূচনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে রবীন্দ্র সদনে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে। মহানায়কের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন-সহ আধিকারিকেরাও।
সংগীতানুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় মহানায়ক উত্তমকুমারের বিভিন্ন ছবির গান। মাধুরী দে গাইলেন ‘এ শুধু গানের দিন’। বিভবেন্দু ভট্টাচার্যর সঙ্গে শোনালেন ‘কথা কিছু কিছু’। সুজয় ভৌমিক পরিবেশন করেন ‘আমি চেয়ে চেয়ে দেখি’। অলিভা চক্রবর্তীর সঙ্গে মিলিতভাবে শোনালেন ‘বন্ধ দ্বারের অন্ধকারে’। তৃষা পাড়ুইয়ের ‘গানে মোর’, ‘তুমি যে আমার’, ইন্দ্রনীল দত্ত, তুসিমা ভট্টাচার্যর ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’, অরিত্র দাশগুপ্তের ‘তিনটি মন্ত্র নিয়ে’ মন ছুঁয়ে গেছে। শ্রীকান্ত আচার্য গাইলেন ‘আজ তারায় তারায়’, ‘দেখোনি কি পাথরেও ফোটে ফুল’। জয় ভট্টাচার্য এবং গার্গী ঘোষের দ্বৈত নিবেদন ‘আমার স্বপ্ন তুমি’।
রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের ‘শাওন রাতে যদি’, ‘আমি যে জলসাঘরে’, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিশ্বপিতা’, ‘মৌ বনে আজ’, রূপঙ্কর বাগচীর ‘এ যেন অজানা এক পথ’, ‘কে জানে ক-ঘণ্টা’, জয়তী চক্রবর্তীর ‘তোমার ভুবনে মা গো’, ‘আমি কোন পথে যে চলি’ অনুষ্ঠানকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে। অরিত্র দাশগুপ্তের সঙ্গে সৈকত মিত্র গাইলেন ‘দোলে দোদুল দোলে’। পরে এককভাবে শোনালেন ‘গানে ভুবন ভরিয়ে দেবে’। ঐতিহ্য রায় গাইলেন ‘তারে বলে দিও’, ‘চলে যেতে যেতে’। অনিত দাস এবং দেবশ্রী তরফদার শোনালেন ‘যদি হই চোরকাঁটা’।
আরও পড়ুন-রাজ্য পুলিশের সাফল্য: অস্ত্র-কার্তুজের উৎস বিবাদী বাগের দোকানে
বাবুল সুপ্রিয় শোনালেন ‘এই এত আলো’, ‘হাতটা ধরে’। গৌতম ঘোষ পরিবেশন করেন ‘আশা ছিল’, ‘কী আশায় বাঁধি খেলাঘর’, ‘কী হল কেন হল’। অরুন্ধতী হোম চৌধুরী শোনালেন ‘শুধু ভালোবাসা দিয়ে’। ‘বসে আছি পথ চেয়ে’ গাইলেন শিবাজী চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের দ্বৈত পরিবেশনায় ছিল ‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই’, ‘পুরানো সেই দিনের কথা’। শেষে এলেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। তাঁর পরিবেশনায় ছিল ‘পৃথিবী বদলে গেছে’ এবং ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’। এইভাবেই গানে-গানে সূচনা হল মহানায়ক উত্তমকুমারের জন্মশতবর্ষের। সারা বছর ধরেই বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত হবে স্মরণ-অনুষ্ঠান। — ছবি : শুভেন্দু চৌধুরী