তুহিনশুভ্র আগুয়ান, হলদিয়া: মায়ের বাড়ি বাংলাদেশ। বাবা পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটা দ্বারিবেড়িয়ার বাসিন্দা। ব্যবসার পাশাপাশি একজন সাংস্কৃতিক কর্মীও তিনি। বাংলাদেশের বর্তমান অস্থিরতার কারণে উড়ানে এদেশে এসে মুখেভাত হল তাঁদের ৯ মাসের খুদে সন্তান স্বপ্নদর্শীর। মা শিপ্রারানি ও মামা প্রবীরকুমার বাংলাদেশের বাসিন্দা। কিন্তু বাবা কৃষ্ণেন্দু বেরা এদেশেই বড় হয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির মাঝে সেখানে গিয়ে অন্নপ্রাশন করা সম্ভব নয়। আশি ছুঁই ছুঁই ঠাকুরমাও পারবেন না নাতির অন্নপ্রাশনে বাংলাদেশ যেতে। তাই বীরভূমের লাল মাটিতে প্রথম মুখেভাত নিল সুতাহাটার খুদে স্বপ্নদর্শী। তাই তার বাবা সংস্কৃতিকর্মী কৃষ্ণেন্দুকে এদেশে অন্নপ্রাশন করার পরামর্শ নেন বীরভূমের এক নাট্যদলের কর্ণধার উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। তিনিই ছোট্ট স্বপ্নদর্শীর অন্নপ্রাশনের সব আয়োজন করেন লাভপুরে। সেখানে যে গ্রামে মুখেভাত অনুষ্ঠান হয় সেটি আসলে কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মভূমি।
আরও পড়ুন-কলকাতা পুলিশে তৈরি নয়া ১২টি ডেপুটি কমিশনার পদ
সেখানে যেমন উপস্থিত ছিলেন উজ্জ্বলবাবু, তেমনই স্বপ্নদর্শীকে পায়েস খাওয়াতে হাজির হন এক ঝাঁক তারকা। ছিলেন পদ্ম সম্মানপ্রাপ্ত শিল্পী রতন কাহার, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশু ডাক্তার হিসেবে পরিচিত সুকুমার চন্দ্র, বঙ্গবিভূষণ কার্তিক দাস বাউল-সহ অন্যরা। মামা প্রবীরকুমার সরকার খুদে স্বপ্নদর্শীর মুখে ভাত তুলে দেন। পাঠ করা হয় উপনিষদ থেকে মন্ত্র। ভারত এবং বাংলাদেশের ৯টি নদীর জল ও মাটি দিয়ে বকুল গাছ রোপণ করে মিলনের বার্তা দেন আয়োজকেরা। এছাড়াও শান্তির বার্তা দিয়ে ওড়ানো হয় পাঁচটি পায়রা। প্রসঙ্গত, সুতাহাটার কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে তিন বছর আগে বিয়ে হয় বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের শিপ্রারানি সরকারের। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক। মামা প্রবীরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কর্মসচিব। অশান্ত বাংলাদেশ থেকে এদেশে অন্নপ্রাশনের জন্য ভিসা নিয়ে আসেন মা ও মামা। ভবিষ্যতে ছেলে এদেশেই বড় হবে বলে জানান কৃষ্ণেন্দু। তিনি জানান,‘‘বাংলাদেশের এখন অস্থির পরিস্থিতি। তাই সকলের ও দেশে যাওয়া সম্ভব নয়। এদেশেই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক ঝাঁক গুণিজনের উপস্থিতিতে ছেলের মুখে প্রথম ভাত দেওয়া হল। আগামী দিনে ছেলে এদেশেই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড় হবে।’’