বাংলার একান্ত উদ্যোগে বাংলার মানুষের বাড়ি

রাজার নীতি রাজনীতি— নাকি নীতির রাজা, সেটা আজও বুঝে ওঠা সম্ভব হল না। রাজনীতির জাঁতাকলে পড়ে গরিব, খেটে-খাওয়া মানুষগুলোর ছোট ছোট স্বপ্নগুলো প্রতিনিয়ত পেষাই হয়। কিন্তু বাংলার গরিব মানুষ বুঝে গিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতদিন মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন ততদিন গরিবগুর্বোদের স্বপ্নগুলোকে পিষে মারার ক্ষমতা কারও নেই। বাস্তবের মাটিতে একদিন না একদিন মাথা তুলবেই। মানুন না-মানুন, এই বিশ্বাসই ২০২৬-এ মা-মাটি-মানুষের সরকারকে রাজ্যে ফিরিয়ে আনবে, আনবেই। লিখছেন সাগ্নিক গঙ্গোপাধ্যায়

Must read

এ রাজ্যে সামগ্রিকভাবে শাসক দলের নেতাদের উপর সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা প্রায় দেড় দশক ধরে অটুট। প্রতিটি নির্বাচনে তার প্রমাণ মিলেছে। ২০১৯ সাল ছাড়া অ্যান্টি ইনকামবেন্সির কোনও প্রভাব রাজ্যের ভোটে পড়েনি। তার কারণ অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা একগুচ্ছ সামাজিক প্রকল্প। রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ এখনও বিশ্বাস করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গরিব মানুষের জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা দেওয়ায় সেই বিশ্বাসের ভিত আরও দৃঢ় হল।
প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণেই বাংলার গরিব মানুষ বিজেপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, আঁকড়ে ধরছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একুশের নির্বাচনের পরাজয়ের বদলা নিতে বিজেপি বন্ধ করে দেয় ১০০ দিনের কাজ। তারপরই দুর্নীতি হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে আটকে দেয় আবাসের টাকা। তিন বছরে ৬৯টি কেন্দ্রীয় টিম পাঠিয়ে তদন্ত করার পরেও টাকা দেয়নি। তাতে লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষ অসহায় অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। বিজেপি বাংলার অসহায় মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকা দিতে না পারলেও ২০২৩-’২৪ সালে বন্ধু শিল্পপতিদের প্রায় পৌনে দু’লক্ষ কোটি টাকার ঋণ অনায়াসেই মকুব করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে যত বঞ্চিত করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাব্বিশের লড়াইটা ততই সহজ হয়ে যাবে।
আর সিপিএম? ‘গণশক্তি’ পত্রিকায় লেখা হয়েছে, আবাস তালিকার ১২ লক্ষের নাম ছাঁটল রাজ্য। ‘আবার একই সঙ্গে বলছে, ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে অনুদান খাতে টাকা খরচকেই টার্গেট করেছে নবান্ন।’ মানেটা কী? এমন পরস্পর-বিরোধী কথা বলছেন ওঁরা যে ‘ঘুড়াতেও হাসব’!
কথা দিলে কথা রাখেন মমতা। একুশের নির্বাচনের পর সেটা তিনি বিরোধীদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিটি প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। আরও একবার প্রমাণ করলেন। শুধু ১২ লক্ষই নয়, তাঁর তালিকায় রয়েছে আরও ১৬ লক্ষ পরিবারের নাম। দু’দফায় আট লক্ষ করে দু’বারে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের টাকা দেওয়া হবে। টাকা দেওয়া হবে ছাব্বিশ সাল পর্যন্ত। ওই বছরই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। তাই ‘ছাব্বিশের ভূত’ বিরোধীদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। গণশক্তিতে সেটাই ফুটে উঠেছে। বাম-বিজেপি বুঝতে পারছে, গরিবের বাড়ির ছাদ যত পাকা হবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের তলার মাটি ততই মজবুত হবে।
গ্রামীণ এলাকার গরিব মানুষের মাথার উপর পাকা ছাদ নির্মাণই হল আবাস প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় গোটা দেশে গরিব গৃহহীন মানুষ পাকা বাড়ি পেয়ে থাকে। তিন বছর ধরে বাংলায় সেই প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথমে প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, এই অজুহাতে টাকা আটকে দিয়েছিল। এই প্রকল্পের ৪০ শতাংশ টাকা রাজ্য সরকার দিলেও গরিব মানুষের স্বার্থে কেন্দ্রের দাবি মেনে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেও টাকা দেয়নি। কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে তৈরি হয়েছিল ১১ লক্ষের তালিকা। তারপরেও টাকা না মেলায় আন্দোলন মঞ্চেই কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘ডেডলাইন’ বেঁধে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে গরিব মানুষের ঘর তৈরির টাকা কেন্দ্র না দিলে দেবে রাজ্যই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন এই ঘোষণা করেছিলেন সেদিন অনেকেই ভেবেছিলেন, সবটাই ফাঁকা আওয়াজ। এই বিপুল পরিমাণ টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন, ইচ্ছা থাকলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। আবাস তালিকায় থাকা ১১ লক্ষকে তো টাকা দিচ্ছেনই। তার সঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আরও ১ লক্ষ পরিবার পেতে চলেছে মাথার উপর পাকা ছাদ। কারণ তাঁরাও যে আশ্রয়হীন! মুখ্যমন্ত্রীর এই অভাবনীয় সিদ্ধান্তে গ্রামের বুকে জন্ম নিয়েছে এক নতুন স্লোগান, ‘যার নেই কোনও ক্ষমতা/ তার জন্য আছেন স্বয়ং মমতা’।
শুনছি, অনেক রামরেড বলে বেড়াচ্ছেন, ‘ছাব্বিশের ভোটের জন্য এসব করা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাছের তেলে মাছ ভাজছেন। কারণ এটা সাধারণ মানুষের করের টাকা।’
হক কথা। আবাস প্রকল্পের টাকা রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকেই দেওয়া হচ্ছে। এবং অবশ্যই তা জনগণের করের টাকা। সেই টাকা না দিয়ে জ্যোতি বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর স্ট্যাইলে শিল্পপতি ধরার নামে রুটিন করে বিদেশ-ভ্রমণ করাই উচিত ছিল, নাকি শিক্ষকের চাকরি প্রার্থীদের মতো গরিব মানুষগুলোকেও ‘রাজনীতির বোড়ে’ বানালে ভাল হত? কোন সরকার বা মন্ত্রী তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে জনসেবা করেন? এমনকী, বাংলাকে ৩৪ বছর শাসনের রেকর্ড সুজন চক্রবর্তীদের জিম্মায় থাকলেও এমন নজির তাঁরা সৃষ্টি করতে পারেননি।
রাজার নীতি রাজনীতি, নাকি নীতির রাজা, সেটা আজও বুঝে ওঠা সম্ভব হল না। রাজনীতির জাঁতাকলে পড়ে গরিব, খেটে খাওয়া মানুষগুলোর ছোট ছোট স্বপ্নগুলো প্রতিনিয়ত পেষাই হয়। কিন্তু বাংলার গরিব মানুষ বুঝে গিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতদিন মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন ততদিন গরিবগুর্বোদের স্বপ্নগুলোকে পিষে মারার ক্ষমতা কারও নেই। বাস্তবের মাটিতে একদিন না একদিন মাথা তুলবেই।
বাংলার বাড়ি (Banglar bari) প্রকল্পের টাকা দেওয়ামাত্র বাম-বিজেপি একযোগে সমালোচনা শুরু করে দিয়েছে। এবার তাদের মুখ লুকানোর জায়গা পাওয়া যাবে তো?

আরও পড়ুন-শহরের কাছাকাছি পিকনিক স্পট

Latest article